Powered By Blogger

২৬ ডিসেম্বর ২০১৭

সংখ্যালঘুর কোনো উপায় নেই

মূলত সামরিক ফরমানে (১৯৭৮ সালের ২য় ঘোষণাপত্র আদেশ নং ৪ এর ২ তফসিল বলে) বাংলাদেশের সংবিধানের মূলনীতি থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা বাতিল করা হয়। একইসঙ্গে প্রস্তাবণার আগে 'বিসমিল্লাহ’ সন্নিবেশিত হয়। পরের বছর এপ্রিলে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীতে আইনসভা এর বৈধতা দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৮৮ সালের ৫ জুন সংবিধানের অষ্টম সংশোধনী পাস হয়। এর মাধ্যমে সংবিধানে অনুচ্ছেদ ২-এর পর ২(ক) যুক্ত করা হয়। যাতে বলা হয়, ‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম হবে ইসলাম, তবে অন্যান্য ধর্মও প্রজাতন্ত্রে শান্তিতে পালন করা যাইবে’। ২০১১ সালের পঞ্চদশ সংশোধনীতে এটিতে পরিবর্তন এনে লেখা হয় - ‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, তবে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টানসহ অন্যান্য ধর্ম পালনে রাষ্ট্র সমমর্যাদা ও সমঅধিকার নিশ্চিত করিবেন।’ একইসঙ্গে মূলনীতিতে ধর্মনিরপেক্ষতাও ফিরিয়ে আনা হয়।
গত নভেম্বরে ৪৬ বছরে পদার্পণ করেছে বাংলাদেশের সংবিধান। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর দেশের সংবিধান প্রণীত হয়। প্রথম বিজয় দিবসে, অর্থাৎ একই বছর ১৬ ডিসেম্বর থেকে স্বাধীন সার্বভৌম দেশের সর্বোচ্চ আইন হিসেবে তা কার্যকর করা হয়। পরবর্তী ৪৫ বছরে এটি সংশোধন করা হয়েছে মোট ১৬ বার। একই সময়ের মধ্যে দুই বার রাষ্ট্রপ্রধান হত্যা, দফায় দফায় সামরিক ক্যুসহ বিভিন্ন অস্থিতিশীল পরিস্থিতি দেখেছে দেশ। এসব মাথায় রেখে সংবিধানের ৪৬ বছর উপলক্ষে নতুন প্রজন্মের এ বিষয়ক ভাবনা জানার চেষ্টা করেছি। আলাপ হয়েছে বিভিন্ন পেশার তরুণ ও যুবকদের সাথে। এ নিয়ে ধারাবাহিক আয়োজনের ষষ্ঠ পর্বে থাকছে ঢাকায় বসবাসকারী তরুণ গায়ক ও সঙ্গীত পরিচালক কিম্বেল অভি এবং লন্ডন প্রবাসী কবি ও প্রকাশক তানভীর রাতুলের আলাপ। তাদের সাথেও কথা হয় ফেসবুক চ্যাটবক্সে ।

ঈয়ন : দেশে বিদ্যমান সাংবিধানিক প্রেক্ষাপট সংখ্যালঘু ও ভিন্নমতের মানুষদের জন্য কতটা স্বস্তিদায়ক বলে আপনি মনে করেন?
কিম্বেল অভি : ক্ষেত্র ও ব্যাক্তি বিশেষে নির্ভর করে এই স্বস্তি। তবে বিশেষত্ব না থাকলে পরিস্থিতি অস্বস্তিকর।
তানভীর রাতুল : প্রচন্ড পায়ুচাপে, পাছার কাপড় নামিয়েই, অন্ধকারে না দেখে, কাঁটাবাঁশের গুড়িতে বসার মতো অস্বস্তিকর।

ঈয়ন : উচ্চ আদালত বাতিলের পরও সংবিধানের শুরুতে ‘বিসমিল্লাহির-রহমানির রহিম’ এবং ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম রেখে সব ধর্মের সমান অধিকারের বিধান সংযুক্ত করার বিষয়টিকে আপনি কিভাবে দেখেন?
কিম্বেল অভি : এটা একটা শিশুসুলভ আচরণ, যা ক্ষমতা ধরে রাখার জন্যে সৃষ্ট। তবে এর ফলে কুসংস্কারাচ্ছন্ন একটি শ্রেণি শক্তিশালী হয়ে উঠছে।
তানভীর রাতুল : মুখ হা-সিনা টানটান করা দেশভালোর প্রতি-রাজাকার কর্তৃক আদালত অবমাননা।

ঈয়ন : সংখ্যালঘু ও ভিন্নমতধারীদের ব্যাপারে এক শ্রেণীর বাঙালী মুসলমানের যে উগ্রবাদী মনোভাব দেখা যায়; তার পেছনে রাষ্ট্রের সাংবিধানিক মুসলমানিত্ব কতটা দায়ী বলে আপনার মনে হয়?
কিম্বেল অভি : আগের জবাবের মধ্যেই এ প্রশ্নেরও উত্তর রয়েছে।
তানভীর রাতুল : রাজনৈতিক-শুদ্ধতা আইন দিয়েই শুধু হয় না, তবে নির্ঘাত আইন থাকা উচিত।

ঈয়ন : আপনার দৃষ্টিতে বর্তমান সরকার বা সরকারি দল আওয়ামী লীগ কতটা সংখ্যালঘু বান্ধব?
কিম্বেল অভি : সরকার সুবিধা বাদি আচরন করবে, সেটাই আসলে স্বাভাবিক।
তানভীর রাতুল : সরকার শুধু মুসলমানের দলই না, এরা মোনাফেকেরও দল।

ঈয়ন : বাংলাদেশের সংখ্যালঘু ও ভিন্নমতের মানুষ, বিশেষত লেখক-বুদ্ধিজীবিরা সাম্প্রতিক সময়ে, মানে ২০১১ পরবর্তী সময়ে কেমন আছেন? গত ছয় বছর ধরে কতটা সম অধিকার পাচ্ছে সব ধর্মের মানুষ?
কিম্বেল অভি : এখন আর সংখ্যালঘুর কোনো উপায় নেই। হওয়ারও কোনো পথ দেখছি না।
তানভীর রাতুল : I think I do not need to reply the last question, you got my point.

পরম্পরার পূর্ববর্তী লেখাগুলো

০৬ ডিসেম্বর ২০১৭

অমিতের ফেরা যে কারণে জরুরী

অমিত সেনের এ ছবিটি ২০১৪ সালে বরিশালে তোলা
“আমার বন্ধু অমিভাত রেজা চৌধুরীর প্রথম ছবি ‘আয়নাবাজি’। বাংলাদেশের সিনেমার মানচিত্রে এক নতুন সংযোজন। কলকাতার ছবির তরঙ্গ যেভাবে ঢাকায় দোলা দেয়, উল্টোটা কখনোই ঘটে না। অমিতাভের এই ছবি শুধুমাত্র বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটেই আলোড়ন সৃষ্টি করবে না, কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গকেও নাড়া দেবে। এই শহরে মুক্তি পেলে, আমার দৃঢ় বিশ্বাস, দর্শক হুমড়ি খেয়ে পড়বে অমিতাভ রেজার প্রথম ছবি আয়নাবাজি দেখতে।।” গত বছর আয়নাবাজি সিনেমাটি মুক্তি পাওয়ার পর, সম্ভবত ৮ অক্টোবর মুখবইয়ে এমনটা লিখেছিলেন ভারতের প্রথিতযশা বিজ্ঞাপন ও চলচ্চিত্র নির্মাতা অমিত সেন। নির্মাতা অমিতাভকে অভিনন্দন জানিয়ে চলচ্চিত্রবিদ্যার এই শিক্ষক আরো উল্লেখ করেছিলেন, সিনেমাটি গোয়া ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের আন্তর্জাতিক বিভাগে প্রদর্শণের জন্য নির্বাচিত হয়েছে।
শীতটা তখন একদমই যাই যাই করছে, আর বসন্ত আসি আসি। মাত্র ক’দিন আগেই সেনাসমর্থিত সরকার এসেছে দেশে। চারিদিকে চাপা উত্তেজনা। তবে বন্ধু-স্বজন, সহকর্মিসহ আশেপাশের সবাই কেমন যেন ভীত, তটস্থ। বলছিলাম ২০০৭’র ফেব্রুয়ারির কথা। তখন আমি সাপ্তাহিক ২০০০’র বরিশাল প্রতিনিধি। দিনের বেলায় শুধু ছুট আর ছুট, সংবাদের সন্ধানে দৌড়াদৌড়ি। রাত দুপুরে ঘরে ফিরে খাবার খেতে খেতে পড়ছিলাম পত্রিকার ভালোবাসা দিবস (৯ ফেব্রুয়ারি) সংখ্যা। অমিত সেনের মুখবইয়ের লেখাটি পড়ে স্মরণে এলো সেই রাতের কথা। কারণ সেদিনই আমি প্রথম তাকে চিনেছিলাম। ২০০০’র আলোচ্য সংখ্যা প্রকাশিত এক যৌথ সাক্ষাতকারে দেখেছিলাম আলোচিত নির্মাতা অভিতাভ রেজা বলছেন, ‘অমিত সেন আমাকে প্রথম উৎসাহ দেন বিজ্ঞাপন নির্মাণের। আমি তাকে অ্যাসিস্ট করি অল্প সময়। এরপর বিজ্ঞাপন নির্মাণ শুরু করি। আর আমাকে পিছনে ফিরতে হয়নি।’ একই সাক্ষাতকারের আরেকাংশে তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে মুম্বাইয়ের অনেক ভালো মেকারও কাজ করছেন। যার মধ্যে রয়েছেন অমিত সেন। আমি এটা স্বীকার করবো যে, অমিত সেনদের কাজ দেখে অনেক কিছুই শিখেছি।’ অমিতাভ আরো বলেছিলেন, ‘অমিত সেন মুম্বাইয়ের অন্যান্য নির্মাতার চেয়ে অনেক আলাদা। তিনি এ দেশে ক্লায়েন্টদের (বিজ্ঞাপনদাতাদের) কাছে গিয়ে বলেছেন, তোমরা এদেশের ছেলেদের প্রমোট করো।’ সঙ্গে থাকা আরেক বিখ্যাত নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীও তখন বলেছিলেন, ‘অমিতাভ যেটা বলল, এটা অমিত সেনের ভালো দিক।’ এর বহু বছর পর ২০১৪ সালে অমিত সেনের কল্যাণেই অমিতাভের সাথে পরিচয় হয়েছিলো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনিস্টিটিউটের বিপরীতে ঘটা সেই আচমকা সাক্ষাত অনুষ্ঠানে প্রয়াত নির্মাতা রাসেল আহমেদ, চিত্রগ্রাহক ড্যানিয়েল ড্যানিসহ আরো অনেকেই ছিলেন - যদ্দুর মনে পড়ে।

রাসেল আহমেদের পাশে অমিত সেন
চিত্রটি ড্যানিয়েল ড্যানি তুলেছিলেন
এতদিন বাদে এসব কথা যেসব কারণে স্মরণে আসছে তার সবকিছু এখন বলতে চাচ্ছি না আসলে। তবে নিশ্চয়ই বলবো কখনো সময় ও সুযোগ পেলে। আপাতত শুধু জানাই, ঠিক তার কিছু দিন আগে স্বাধীন চলচ্চিত্র ‘নৃ’ নির্মাণ আন্দোলনের সাথে যুক্ত হন অমিত সেন এবং তার আইলেভেল ফিল্মস। সিনেমাটির অর্থায়ন যোগাতে বিজ্ঞাপনের কাজ যোগাড়ের পাশাপাশি তিনি আরো বহুমুখী উদ্যোগ নেন। এটা নির্ধিদ্বায় বলা যায় যে তিনি পাশে না দাঁড়ালে হয়ত রাসেল আহমেদের এ চলচ্চিত্র চিত্রায়ন পর্বেই আটকে যেত। দেশের নির্মাতাদের মধ্যেও যারা ওই সময় নৃ -এর পাশে দাঁড়িয়ে আর্থিক ও মানুসিকভাবে আমাদের শক্তি যুগিয়ে ছিলেন তাদের মধ্যে সাহিত্যিক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা আনোয়ার শাহাদাত, বিজ্ঞাপন নির্মাতা পিপলু আর খান, কবি ও চলচ্চিত্র নির্মাতা টোকন ঠাকুর এবং শিল্পী ও নির্মাতা অঙ রাখাইন অন্যতম। গত মে মাসে যখন এডিটিং টেবিলে সিনেমাটির চূড়ান্ত সম্পাদনা চলছে, ঠিক সেই মুহুর্তে দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করেন রাসেল। নির্মাণ শুরুর প্রায় পাঁচ বছরের মাথায় আবার থমকে যায় নৃ। আটকে যায় কাজ। তৈরী হয় নানামুখী শঙ্কা। এ নিয়ে যখন নানাবিধ হতাশায় ডুবে যাচ্ছি ঠিক তখনই আবার কাঁধে হাত রাখলেন অমিত সেন। জানতে চাইলেন সিনেমাটির সর্বশেষ অবস্থা, জানালেন তার চিন্তার কথাও। আবার আশাবাদী হলো আমার চলচ্চিত্র শ্রমিক সত্তা। 
বাংলাদেশ বা বাংলাদেশী সিনেমা বা নির্মাতাদের জন্য যে মানুষটির মন এত কাঁদে তিনি এদেশে নিষিদ্ধ হয়ে আছেন সেই ১/১১ পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমল থেকে। ওই সময় তার পিআই (পারসোনাল ইনভেস্টমেন্ট) ভিসা বাতিল করে তাকে কালো তালিকাভুক্ত করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সেই থেকে আজ অবধি বাংলাদেশে কাজ করতে পারছেন না এ নির্মাতা। গত এক দশক ধরেঅমিত সেনের বাংলাদেশী বন্ধু বা সাবেক সহকর্মিরাও এ ব্যাপারে প্রায় নিশ্চুপ। অবশ্য তাকে নিষিদ্ধ করার কারণ জানার চেষ্টা করে একাধিক রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার ধমক খেয়েছেন কয়েকজন। এরপরও তিনি বহুবার ভিসার জন্য আবেদন করেছেন এবং বার বার ব্যর্থ হয়েছেন। এর নেপথ্যের কারণ খুঁজতে গিয়ে আমার সাংবাদিক সত্ত্বা যে ধরণের ‘ব্যক্তি-বিদ্বেষ’ খুঁজে পেয়েছে তা কিছুটা ইগো আর কিছুটা ব্যবসায়িক। মূলত প্রভাবশালী একটি গোষ্ঠী চাচ্ছে না অমিত বাংলাদেশে আসুক বা এখানে কাজ করুক। অথচ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়েই আন্তর্জাতিকমানের ‘ট্রিলজি’বানানোর চিন্তা তিনি লালন করছেন চলচ্চিত্র-জীবনের শুরু থেকে।
বাংলাদেশ আর এর স্বাধীনতার সাথে যে অমিত সেনের পরিবারের আদি ইতিহাসও জড়িয়ে রয়েছে। বরিশাল অঞ্চলের ঝালকাঠীর বেউখির গ্রামেই শেকড় তাদের। পঞ্চাশের দাঙ্গার পর দেশ ত্যাগ করা এ পরিবারের সন্তান রঞ্জিত কুমার সেনগুপ্ত আবার ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদস্য হিসাবে অংশ নিয়েছিলেন একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে; আহতও হয়েছিলেন। এর আগে ১৯৬২ সালে চৈতালী সেনগুপ্তের সাথে বিয়ে হয় তার। তার বাপের বাড়ি ফরিদপুর হলেও সে’ও বড় হয়েছে বরিশালেই। যারই জেরে রঞ্জিত ও চৈতালী - দুজনেই ছিলেন প্রায়ই একই মাত্রার পূর্ববঙ্গ অন্তঃপ্রাণ। বিয়ের ক’বছর পর এমনই এক ডিসেম্বরে তারা যখনে নেপালের কাঠমুণ্ডুতে, ঠিক তখনই তাদের কোলে আসে একমাত্র সন্তান অমিত।বাংলাদেশ নিয়ে তিনি যে সিনেমাগুলো তৈরী করতে চান তার চিত্রনাট্য তৈরীর গবেষণায় সংযুক্ত হয়ে মুক্তিযুদ্ধকে নতুন করে জানার সুযোগ হয়েছিলো আমার। যারই বদৌলতে এ লেখাটি তৈরীর সাহস পেলাম। কারণ মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তিই এখন দেশের ক্ষমতায়। আর এই যুদ্ধ নিয়ে আন্তর্জাতিকমানের চলচ্চিত্র ধারাবাহিক তৈরীর জন্য অমিতের ফেরাটা খুবই জরুরী। এ কথা পড়ে আমাকে ভারতের দালাল বলে গালি দিতে পারেন অনেকে। তাদের উদ্দেশ্যে বলে রাখি, অন্তত আমার দৃষ্টিতে তিনি মানুসিকভাবে যতটা ভারতীয় তার চেয়ে অনেক বেশী ‘বরিশাইল্যা’। এ নিয়ে ইতিপূর্বেও ব্যক্তিগত ব্লগে লিখেছিলাম। ইন্টারনেটের যে কোনো সার্চ ইঞ্জিনে সেনের প্রত্যাবর্তন বা বোলপুরে বরিশালের রান্না ঘর লিখে সন্ধান করলেও তা মিলে যাবে।

ফটোগ্রাফী : এমএসআই প্রিন্স 
আজ ৬ ডিসেম্বর। নির্মাতা ও শিক্ষক অমিত সেনের জন্মদিন। বাংলাদেশের সংবাদ, সাহিত্য ও চলচ্চিত্র জগতের একজন নবীশ প্রতিনিধি হিসাবে আমি অন্তরের অন্তস্থল থেকে তাকে পরম শ্রদ্ধা জানাই। আর নিজ রাষ্ট্রের কাছে দাবি রেখে বলতে চাই, অমিত সেনকে এদেশে কাজ করার সুযোগ দেয়া হোক। প্রত্যাশায় রাখি এই লেখাটি দেখবে বর্তমান সরকারের নীতি-নির্ধারক কোনো চোখ। কাকতালীয়ভাবে একাত্তরে অমিত সেনের এই জন্মদিনেই দক্ষিণ এশিয়ার দুই দেশ ভারত ও ভুটান আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দান করে। 

সম্পর্কিত লেখাঃ
সেনের প্রত্যাবর্তন - the return of sen

০১ ডিসেম্বর ২০১৭

আবারো এসেছে গৌরবের মাস

মুক্তিযোদ্ধা
দেশের ৪৭তম জন্মোৎসবের আর মাত্র পনেরো দিন বাকি। আজ থেকে শুরু হয়ে গেছে বিজয়ের মাস। ডিসেম্বর বাঙালির অহংকার ও গৌরবের মাস। একাত্তরে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে এ মাসেই এসেছিলো কাঙ্খিত বিজয়। মুক্তিকামী লাখো বাঙালির রক্তমাখা এক পৌষের আকাশে উদিত হয়েছিলো স্বাধীনতার লাল সূর্য। হাজার বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে ঔপনিবেশিক শত্রুমুক্ত হয়েছিলো বাংলার মাটি। পৃথিবীর বুকে জন্ম নিয়েছিলো বাংলাদেশ নামের নতুন একটি দেশ। দেশের ইতিহাসে এ মাসের একটি দিনও তাই কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। যুদ্ধ ও রাজনীতির বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটেও তা একইরকম গুরুত্ববহ । 

হানাদার
একাত্তরের এ দিনটি, মানে পহেলা ডিসেম্বর ছিলো বুধবার। বাঙালি যোদ্ধারা ততদিনে বুঝে গেছে তাদের বিজয় সুনিশ্চিত। তাই এদিন থেকে দেশব্যাপী সর্বাত্মক রূপ নেয় মুক্তিযুদ্ধ। একে একে মুক্ত হতে শুরু করে বিভিন্ন এলাকা। প্রবল আক্রমণের মুখে পাকিস্তানি বাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয়। মুক্তিবাহিনীর তীব্র আক্রমণের মুখে পাকিস্তানী সৈন্যরা সিলেটের শমশেরনগর থেকে পালাতে থাকে। টেংরাটিলা ও দুয়ারাবাজার শত্রু সেনা মুক্ত হয়। অতর্কিত আক্রমণের ফলে পাক বাহিনী সিলেটের গারা, আলিরগাঁও, পিরিজপুর থেকেও তাদের বাহিনী গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়। এছাড়া জুলফিকার আলী ভুট্টো দুমাস আগে ঢাকায় পিপলস পাটির যে অফিস উদ্বোধন করেছিলেন সেখানে বোমা বিস্ফোরিত হয় এই দিন। তখনো যথেষ্ট তৎপর ছিললো স্বাধীনতাবিরোধীরা। জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষনেতা গোলাম আযম বৈঠক করেছিলেন ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে। এই দিন তিনি পূর্ব পাকিস্তান থেকে প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিয়োগের দাবিও তুলেছিলেন। গোলাম আযম কমিউনিস্টদের অপতৎপরতা সম্পর্কে সবাইকে সতর্ক থাকতে বলেন। এছাড়া মিত্রপক্ষ ভারতের হামলার প্রতিবাদে খুলনায় এই দিন হরতাল পালন করে শান্তি কমিটি।
নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় প্রকাশিত এদিনের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, গেরিলা সন্দেহে জিঞ্জিরার অনেক যুবককে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে হত্যা করা হয়েছে। বুড়িগঙ্গার অপর পাড়ের এই গ্রামে অন্তত ৮৭ জনকে হত্যা করেছে হানাদার বাহিনী। নারী, শিশুরা পর্যন্ত তাদের নিষ্ঠুরতার হাত থেকে রক্ষা পায়নি। একইসময়ে হানাদার বাহিনী রাঙ্গামাটি ব্যাপটিস্ট মিশনে চার্লস আর হাউজার নামে একজন ধর্মযাজক এবং বহু বাঙালি সন্ন্যাসীকে হত্যা করে। ওদিকে একই দিন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী দেশটির পার্লামেন্টের উচ্চ পরিষদে বক্তৃতাকালে উপমহাদেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ইয়াহিয়া খানের প্রতি বাংলাদেশ থেকে পাকিস্থানী সৈন্য প্রত্যাহারের আহবান জানান। ইন্দিরা বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানি সৈন্য অপসারণই সমস্যার শ্রেষ্ঠ সমাধান।’ এই বক্তৃতায় তিনি ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য বাংলাদেশ ও ভারতের জনসাধারণকে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
স্বাধীনতার ঘোষক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তখন পাকিস্তানের কারাগারে। এদিন রাওয়ালপিন্ডি থেকে এক সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়, ‘অধুনালুপ্ত আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমানের বিচার শেষ হয়নি।’ এতে আরো বলা হয়, ‘পূর্ব পাকিস্তানের চারটি রণাঙ্গনে যে আক্রমণাত্মক চাপ সৃষ্টি হয়েছিল তা এখনো অব্যাহত রয়েছে। ৭১ সালের এই দিনে মুক্তিযোদ্ধারা অপারেশন চালিয়ে ঢাকায় দুজন মুসলিম লীগ কর্মীকে হত্যা করে। বাকি দুজনকে বুলেটবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।’ 

এর আগে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা স্বাধীনতার আন্দোলন পরিণত হয়েছিলো দেশের সশস্ত্র মুক্তিসংগ্রামে। অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে প্রবাসী মুজিবনগর নগর সরকার এই মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করে। বিশ্বের বৃহৎ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিবেশী ভারত এসে দাঁড়িয়েছিল মুক্তিকামী বাঙালির পাশে। সুদীর্ঘ নয় মাসে ৩০ লাখ শহীদের রক্ত-সাগর পাড়ি দিয়ে গেরিলা যুদ্ধের মাধ্যমে এ জাতি ছিনিয়ে এনেছিলো স্বাধীনতা। ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করেছিলো মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনাকারী বাংলাদেশ-ভারত যৌথ বাহিনীর কাছে।

আত্মসমর্পণ
বিজয়ের আনন্দে স্বাধীনতার কেতন ওড়ানো এই ডিসেম্বর আজও প্রত্যেক বাঙালির নিরন্তর প্রেরণার উৎস। ডিসেম্বর মানেই অজেয় বাঙালির দুর্জয় সাহসের গৌরবগাথা। এই মাসে প্রতিটি বাঙালি ফিরে যায় একাত্তরের অবিনাশী যুদ্ধ-দিনে। এ বছরও আনন্দ-আবেগে নানা আনুষ্ঠানিকতায় এ মাসটি উদযাপন করবে এই জাতি। বিজয় মাসের প্রথম দিন আজ পহেলা ডিসেম্বর পালিত হবে মুক্তিযোদ্ধা দিবস। এরই ধারাবাহিকতায় ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবস এবং ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস পালন করা হবে। এছাড়া মাসব্যাপী দেশের বিভিন্ন এলাকা শত্রুমুক্ত হওয়ার দিনটিও বিশেষভাবে উদযাপিত হবে।

আরো দেখুন :
আলোকচিত্রে মুক্তিযুদ্ধ’১৯৭১
newsreel [সংবাদচিত্র]