Powered By Blogger
বিজয়ের মাস লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
বিজয়ের মাস লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

০১ ডিসেম্বর ২০১৭

আবারো এসেছে গৌরবের মাস

মুক্তিযোদ্ধা
দেশের ৪৭তম জন্মোৎসবের আর মাত্র পনেরো দিন বাকি। আজ থেকে শুরু হয়ে গেছে বিজয়ের মাস। ডিসেম্বর বাঙালির অহংকার ও গৌরবের মাস। একাত্তরে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে এ মাসেই এসেছিলো কাঙ্খিত বিজয়। মুক্তিকামী লাখো বাঙালির রক্তমাখা এক পৌষের আকাশে উদিত হয়েছিলো স্বাধীনতার লাল সূর্য। হাজার বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে ঔপনিবেশিক শত্রুমুক্ত হয়েছিলো বাংলার মাটি। পৃথিবীর বুকে জন্ম নিয়েছিলো বাংলাদেশ নামের নতুন একটি দেশ। দেশের ইতিহাসে এ মাসের একটি দিনও তাই কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। যুদ্ধ ও রাজনীতির বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটেও তা একইরকম গুরুত্ববহ । 

হানাদার
একাত্তরের এ দিনটি, মানে পহেলা ডিসেম্বর ছিলো বুধবার। বাঙালি যোদ্ধারা ততদিনে বুঝে গেছে তাদের বিজয় সুনিশ্চিত। তাই এদিন থেকে দেশব্যাপী সর্বাত্মক রূপ নেয় মুক্তিযুদ্ধ। একে একে মুক্ত হতে শুরু করে বিভিন্ন এলাকা। প্রবল আক্রমণের মুখে পাকিস্তানি বাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয়। মুক্তিবাহিনীর তীব্র আক্রমণের মুখে পাকিস্তানী সৈন্যরা সিলেটের শমশেরনগর থেকে পালাতে থাকে। টেংরাটিলা ও দুয়ারাবাজার শত্রু সেনা মুক্ত হয়। অতর্কিত আক্রমণের ফলে পাক বাহিনী সিলেটের গারা, আলিরগাঁও, পিরিজপুর থেকেও তাদের বাহিনী গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়। এছাড়া জুলফিকার আলী ভুট্টো দুমাস আগে ঢাকায় পিপলস পাটির যে অফিস উদ্বোধন করেছিলেন সেখানে বোমা বিস্ফোরিত হয় এই দিন। তখনো যথেষ্ট তৎপর ছিললো স্বাধীনতাবিরোধীরা। জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষনেতা গোলাম আযম বৈঠক করেছিলেন ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে। এই দিন তিনি পূর্ব পাকিস্তান থেকে প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিয়োগের দাবিও তুলেছিলেন। গোলাম আযম কমিউনিস্টদের অপতৎপরতা সম্পর্কে সবাইকে সতর্ক থাকতে বলেন। এছাড়া মিত্রপক্ষ ভারতের হামলার প্রতিবাদে খুলনায় এই দিন হরতাল পালন করে শান্তি কমিটি।
নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় প্রকাশিত এদিনের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, গেরিলা সন্দেহে জিঞ্জিরার অনেক যুবককে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে হত্যা করা হয়েছে। বুড়িগঙ্গার অপর পাড়ের এই গ্রামে অন্তত ৮৭ জনকে হত্যা করেছে হানাদার বাহিনী। নারী, শিশুরা পর্যন্ত তাদের নিষ্ঠুরতার হাত থেকে রক্ষা পায়নি। একইসময়ে হানাদার বাহিনী রাঙ্গামাটি ব্যাপটিস্ট মিশনে চার্লস আর হাউজার নামে একজন ধর্মযাজক এবং বহু বাঙালি সন্ন্যাসীকে হত্যা করে। ওদিকে একই দিন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী দেশটির পার্লামেন্টের উচ্চ পরিষদে বক্তৃতাকালে উপমহাদেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ইয়াহিয়া খানের প্রতি বাংলাদেশ থেকে পাকিস্থানী সৈন্য প্রত্যাহারের আহবান জানান। ইন্দিরা বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানি সৈন্য অপসারণই সমস্যার শ্রেষ্ঠ সমাধান।’ এই বক্তৃতায় তিনি ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য বাংলাদেশ ও ভারতের জনসাধারণকে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
স্বাধীনতার ঘোষক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তখন পাকিস্তানের কারাগারে। এদিন রাওয়ালপিন্ডি থেকে এক সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়, ‘অধুনালুপ্ত আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমানের বিচার শেষ হয়নি।’ এতে আরো বলা হয়, ‘পূর্ব পাকিস্তানের চারটি রণাঙ্গনে যে আক্রমণাত্মক চাপ সৃষ্টি হয়েছিল তা এখনো অব্যাহত রয়েছে। ৭১ সালের এই দিনে মুক্তিযোদ্ধারা অপারেশন চালিয়ে ঢাকায় দুজন মুসলিম লীগ কর্মীকে হত্যা করে। বাকি দুজনকে বুলেটবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।’ 

এর আগে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা স্বাধীনতার আন্দোলন পরিণত হয়েছিলো দেশের সশস্ত্র মুক্তিসংগ্রামে। অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে প্রবাসী মুজিবনগর নগর সরকার এই মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করে। বিশ্বের বৃহৎ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিবেশী ভারত এসে দাঁড়িয়েছিল মুক্তিকামী বাঙালির পাশে। সুদীর্ঘ নয় মাসে ৩০ লাখ শহীদের রক্ত-সাগর পাড়ি দিয়ে গেরিলা যুদ্ধের মাধ্যমে এ জাতি ছিনিয়ে এনেছিলো স্বাধীনতা। ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করেছিলো মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনাকারী বাংলাদেশ-ভারত যৌথ বাহিনীর কাছে।

আত্মসমর্পণ
বিজয়ের আনন্দে স্বাধীনতার কেতন ওড়ানো এই ডিসেম্বর আজও প্রত্যেক বাঙালির নিরন্তর প্রেরণার উৎস। ডিসেম্বর মানেই অজেয় বাঙালির দুর্জয় সাহসের গৌরবগাথা। এই মাসে প্রতিটি বাঙালি ফিরে যায় একাত্তরের অবিনাশী যুদ্ধ-দিনে। এ বছরও আনন্দ-আবেগে নানা আনুষ্ঠানিকতায় এ মাসটি উদযাপন করবে এই জাতি। বিজয় মাসের প্রথম দিন আজ পহেলা ডিসেম্বর পালিত হবে মুক্তিযোদ্ধা দিবস। এরই ধারাবাহিকতায় ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবস এবং ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস পালন করা হবে। এছাড়া মাসব্যাপী দেশের বিভিন্ন এলাকা শত্রুমুক্ত হওয়ার দিনটিও বিশেষভাবে উদযাপিত হবে।

আরো দেখুন :
আলোকচিত্রে মুক্তিযুদ্ধ’১৯৭১
newsreel [সংবাদচিত্র]