Powered By Blogger
ডিসেম্বর লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
ডিসেম্বর লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

১৫ ডিসেম্বর ২০১৮

ভারত মহাসাগরে সোভিয়েত রণতরী

মুক্তাঞ্চলে ভারতের ইস্টার্ন কমান্ডের প্রধান ও যুগ্ম-কমান্ডের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট
জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা এবং মুক্তিযোদ্ধাদের এক নম্বর সেক্টরের কমান্ডার
মেজর রফিকুল ইসলাম।
আজ ১৫ ডিসেম্বর। একাত্তরের এ দিনটি ছিল বুধবার। বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত যুক্তরাষ্ট্রের সপ্তম নৌবহরকে মোকাবেলায় করতে প্রস্তত হওয়া ভারতীয় নৌবাহিনীর সমর্থনে এই দিন সোভিয়েত রণতরীর ২০টি জাহাজ ভারত মহাসাগরে অবস্থান নেয়। এরপরই মার্কিন নৌবহর নিজেদের গুটিয়ে ফেলে। ফলে পাকবাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ডের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমীর আব্দুল্লাহ খান নিয়াজির মনে যুদ্ধে সাহায্য পাওয়ার যেটুকু আশা ছিল শেষ হয়ে যায়। তখন রণাঙ্গনে চলছে মুক্তিকামী জনতার বিজয়োল্লাস। মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত যৌথ বাহিনী চারদিক থেকে ঘেরাও করে ফেলায় অবরুদ্ধ ঢাকা কার্যত অচল হয়ে পড়ে। জয় তখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। 

একাত্তরের এই দিনে চারদিক থেকে পরাজিত হতে হতে পাকিস্তানী বাহিনী বুঝে ফেলে যুদ্ধে তাদের পরাজয় নিশ্চিত। ফলে সকালে সব আশা ছেড়ে দিয়ে শর্তসাপেক্ষে আত্ম-সমর্পণের প্রস্তাব নিয়ে বিদেশি দূতাবাসের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করেন নিয়াজি। ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের কর্মীরা সেই প্রস্তাব পাঠিয়ে দেয় দিল্লীর মার্কিন দূতাবাসে। সেখান থেকে পাঠানো হয় ওয়াশিংটনে। এরপর ওয়াশিংটন ইসলামাবাদের মার্কিন দূতাবাসের কাছে জানতে চায়, নিয়াজির এই প্রস্তাবে পাক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার সমর্থন আছে কি’না। 
প্রস্তাবের মূলকথা, ‘আমরা যুদ্ধ বন্ধ করেছি। তবে বাংলাদেশে অবস্থানরত গোটা পাকবাহিনীকে চলে যেতে দিতে হবে, কাউকে গ্রেফতার করা চলবে না।’ কিন্তু ভারত সরকার এ প্রস্তাব নাকচ করে দেয়। ভারতীয় বাহিনী বাংলাদেশের পাকবাহিনীকে এই আশ্বাস দিতে রাজি হয় যে, যুদ্ধবন্দিরা জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী ব্যবহার পাবে। 
একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা।
পাকি জেনারেল নিয়াজীর শর্তসাপেক্ষে আত্মসমর্পণের প্রস্তাব পেয়ে ভারতীয় বাহিনী মনে করে এটি তার কৌশল। নিয়াজীর প্রস্তাবকে তাদের কাছে মনে হলো এটি যুদ্ধবিরতি, আত্মসমর্পণ নয়। কিন্তু মিত্রবাহিনী বিনাশর্তে আত্মসমর্পণ ছাড়া কিছুতেই রাজি নয়। পাকিস্তানী জেনারেল নিয়াজির দেয়া যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের জবাবে বিকালে জেনারেল মানেকশ পাকিদের জানিয়ে দেন যে, শর্তহীন আত্মসমর্পণ না করলে যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে সম্মতি দেওয়া হবে না।
প্রস্তাবের প্রতি মিত্রবাহিনীর আন্তরিকতার নিদর্শন হিসাবে ১৫ ডিসেম্বর বিকাল পাঁচটা থেকে ১৬ ডিসেম্বর সকাল নয়টা পর্যন্ত ঢাকার ওপর বিমান হামলা বন্ধ রাখা হবে বলেও পাকিস্তানী জেনারেলকে জানিয়ে দেয়া হয়। এমনকি আত্মসমর্পণ করলে মিত্রবাহিনী কোন প্রতিশোধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়াবে না এমনটা তাকে আশ্বস্ত করা হয়। একইসঙ্গে তাকে হুঁশিয়ার করে দিয়ে আরো বলা হয় যে, ‘নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শর্তহীন আত্মসমর্পণ না করলে ১৬ ডিসেম্বর সকাল নয়টা থেকে সর্বশক্তি নিয়ে আক্রমণ করা ছাড়া মিত্রবাহিনীর কোনো গত্যন্তর থাকবে না। 
জেনারেল নিয়াজি তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয়ে পাকিস্তান হেডকোয়ার্টারকে অবহিত করেন। পরিস্থিতির ভয়াবহতা উপলব্ধি করে ১৫ ডিসেম্বর গভীর রাতে পাকিস্তানের তদানীন্তন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ঢাকায় জেনারেল নিয়াজিকে নির্দেশ দেন যে, ভারতের সেনাবাহিনী প্রধান পাকিস্তানীদের আত্মসমর্পণের জন্য যে সব শর্ত দিয়েছেন, যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার জন্য তা মেনে নেওয়া যেতে পারে। এ নির্দেশ পেয়ে সেনানিবাসে নিজের কক্ষে বসে কান্নায় ভেঙে পড়েন নিয়াজি। কিছুটা ধাতস্থ হয়ে রাত দুইটার মধ্যে বাংলাদেশের সব জায়গাযয় অবস্থানরত হানাদার বাহিনীকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়ে তারবার্তা পাঠান। এদিনটি মূলত দখলদার বাহিনীর চূড়ান্ত আত্মসমর্পণের দিন-ক্ষণ নির্ধারণের মধ্যে দিয়ে অতিবাহিত হয়।

ভারতে আশ্রয় নেওয়া শরণার্থী বাঙালী।
একই দিনে ঢাকার বাসাবোতে ‘এস ফোর্সে’-র মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানী বাহিনীর ওপর তীব্র আক্রমণ চালায়। জয়দেবপুরেও মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাপক আক্রমণে পর্যুদস্ত হয় তারা। টঙ্গী, ডেমরা, গোদনাইল ও নারায়ণগঞ্জে মিত্রবাহিনীর আর্টিলারি আক্রমণে বিপর্যস্ত হয় দখলদার বাহিনী। এছাড়া এদিন সাভার পেরিয়ে গাবতলীর কাছাকাছি নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান নেয় মিত্রবাহিনীর একটি ইউনিট।

ভারতীয় ফৌজের একটি প্যারাট্রুপার দল পাঠিয়ে ঢাকার মিরপুর ব্রিজের পাকিস্তানী ডিফেন্স লাইন পরখ করে নেয়া হয়। রাতে যৌথ বাহিনী সাভার থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। পথে কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে কাদিরীয়া বাহিনী ভারতীয় ও বাংলাদেশ বাহিনীর সাথে যোগ দেয়। রাত দুইটার দিকে যৌথ বাহিনী পাক সৈন্যের মুখোমুখি হয়। যৌথ বাহিনী ব্রিজ দখলের জন্য প্রথমে কমান্ডো পদ্ধতিতে আক্রমণ শুরু করে। ব্রিজের ওপাশ থেকে পাকবাহিনী মুহুর্মুহু গোলাবর্ষণ করতে থাকে। এ সময় যৌথ বাহিনীর আরেকটি দল এসে পশ্চিম পাড় দিয়ে আক্রমণ চালায়। সারারাত তুমুল যুদ্ধ চলে। 
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। যে কোন মুহূর্তে পাকিস্তান সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করবে। চারদিক থেকে ঢাকা অবরূদ্ধ। এদিন দি গার্ডিয়ান পত্রিকায় লেখা হয়- ‘ইয়াহিয়ার সৈন্যবাহিনীকে তাড়িয়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে। ভারতে আশ্রয় নেওয়া শরণার্থীরা মুক্ত বাংলাদেশে আসতে শুরু করেছেন। দেশের ভেতর বাড়ি-ঘর থেকে বিতাড়িত লোকজনও বাড়িতে ফিরে আসতে শুরু করেছে।’ এ সময় জামায়াতে ইসলামি, পিডিপি, নেজামী ইসলামীর নেতাকর্মীরা অনেকেই মুক্তিবাহিনীর হাতে ধরা পড়ে। আবার অনেকেই আত্মগোপন করে।
চট্টগ্রাম রণাঙ্গনে মুক্তিবাহিনী কুমিরার দক্ষিণে আরো কয়েকটি স্থান হানাদার মুক্ত করে। সন্ধ্যায় মুক্তিযোদ্ধারা চট্টগ্রাম শহরের প্রথম রক্ষাব্যুহ ভাটিয়ারীতে আক্রমণ চালায়। সারারাত মুক্তিবাহিনী ও পাকবাহিনীর মধ্যে যুদ্ধ চলে। ভাটিয়ারি থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত রাস্তায় রাস্তায় যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে। 
পাকিদের এক স্থানীয় দোসরের পরিণতি। 
ওদিকে যৌথবাহিনী বিভিন্ন দিক থেকে রংপুরের দিকে অগ্রসর হয়। রাতে তারা চারদিক থেকে রংপুর শহর ঘিরে ফেলে। পরের দিন রংপুর সেনানিবাসে আক্রমণ করার কথা ছিল। কিন্তু যুদ্ধ বিরতির ঘোষনা হওয়ায় তার আর প্রয়োজন হয়নি। 

ফরিদপুর অঞ্চলে যৌথবাহিনী কামারখালীর পাকঘাঁটির ওপর আক্রমণ চালায়। সাঁড়াশী আক্রমণের মুখে তারা অবস্থান ছেড়ে ফরিদপুর শহরের দিকে পালাতে থাকে। যৌথবাহিনী তাদের পিছু ধাওয়া করে। পথে প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়ে স্বেচ্ছায় শত্রুসৈন্যরা আত্মসমর্পণ করে। আত্মসমর্পণকারী অফিসারদের মধ্যে একজন মেজর জেনারেল ছিলেন। 
একই দিনে ভারতীয় সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল মানেকশ পাকিস্তানী কমান্ডারদের আত্মসমর্পণের জন্য শেষবারের মত নির্দেশ দেন। জেনারেল মানেকশ বলেন, ‘আমি আবার বলছি, আর প্রতিরোধ করা নিরর্থক। ঢাকা গ্যারিসন এখন সম্পূর্ণভাবে আমাদের কামানের আওতায়।’ এই দিনে শহীদ বুদ্ধিজীবি ডা. আলীম চৌধুরী এবং বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর নিহত হন।
তথ্যসূত্রঃ ন্যাশনাল আর্কাইভ, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, ঘাতকের দিনলিপিসহ বিবিধ তথ্যভাণ্ডার।
ছবিঃ মুক্তিযুদ্ধ ই-আর্কাইভ ট্রাস্ট

০১ ডিসেম্বর ২০১৭

আবারো এসেছে গৌরবের মাস

মুক্তিযোদ্ধা
দেশের ৪৭তম জন্মোৎসবের আর মাত্র পনেরো দিন বাকি। আজ থেকে শুরু হয়ে গেছে বিজয়ের মাস। ডিসেম্বর বাঙালির অহংকার ও গৌরবের মাস। একাত্তরে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে এ মাসেই এসেছিলো কাঙ্খিত বিজয়। মুক্তিকামী লাখো বাঙালির রক্তমাখা এক পৌষের আকাশে উদিত হয়েছিলো স্বাধীনতার লাল সূর্য। হাজার বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে ঔপনিবেশিক শত্রুমুক্ত হয়েছিলো বাংলার মাটি। পৃথিবীর বুকে জন্ম নিয়েছিলো বাংলাদেশ নামের নতুন একটি দেশ। দেশের ইতিহাসে এ মাসের একটি দিনও তাই কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। যুদ্ধ ও রাজনীতির বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটেও তা একইরকম গুরুত্ববহ । 

হানাদার
একাত্তরের এ দিনটি, মানে পহেলা ডিসেম্বর ছিলো বুধবার। বাঙালি যোদ্ধারা ততদিনে বুঝে গেছে তাদের বিজয় সুনিশ্চিত। তাই এদিন থেকে দেশব্যাপী সর্বাত্মক রূপ নেয় মুক্তিযুদ্ধ। একে একে মুক্ত হতে শুরু করে বিভিন্ন এলাকা। প্রবল আক্রমণের মুখে পাকিস্তানি বাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয়। মুক্তিবাহিনীর তীব্র আক্রমণের মুখে পাকিস্তানী সৈন্যরা সিলেটের শমশেরনগর থেকে পালাতে থাকে। টেংরাটিলা ও দুয়ারাবাজার শত্রু সেনা মুক্ত হয়। অতর্কিত আক্রমণের ফলে পাক বাহিনী সিলেটের গারা, আলিরগাঁও, পিরিজপুর থেকেও তাদের বাহিনী গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়। এছাড়া জুলফিকার আলী ভুট্টো দুমাস আগে ঢাকায় পিপলস পাটির যে অফিস উদ্বোধন করেছিলেন সেখানে বোমা বিস্ফোরিত হয় এই দিন। তখনো যথেষ্ট তৎপর ছিললো স্বাধীনতাবিরোধীরা। জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষনেতা গোলাম আযম বৈঠক করেছিলেন ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে। এই দিন তিনি পূর্ব পাকিস্তান থেকে প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিয়োগের দাবিও তুলেছিলেন। গোলাম আযম কমিউনিস্টদের অপতৎপরতা সম্পর্কে সবাইকে সতর্ক থাকতে বলেন। এছাড়া মিত্রপক্ষ ভারতের হামলার প্রতিবাদে খুলনায় এই দিন হরতাল পালন করে শান্তি কমিটি।
নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় প্রকাশিত এদিনের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, গেরিলা সন্দেহে জিঞ্জিরার অনেক যুবককে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে হত্যা করা হয়েছে। বুড়িগঙ্গার অপর পাড়ের এই গ্রামে অন্তত ৮৭ জনকে হত্যা করেছে হানাদার বাহিনী। নারী, শিশুরা পর্যন্ত তাদের নিষ্ঠুরতার হাত থেকে রক্ষা পায়নি। একইসময়ে হানাদার বাহিনী রাঙ্গামাটি ব্যাপটিস্ট মিশনে চার্লস আর হাউজার নামে একজন ধর্মযাজক এবং বহু বাঙালি সন্ন্যাসীকে হত্যা করে। ওদিকে একই দিন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী দেশটির পার্লামেন্টের উচ্চ পরিষদে বক্তৃতাকালে উপমহাদেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ইয়াহিয়া খানের প্রতি বাংলাদেশ থেকে পাকিস্থানী সৈন্য প্রত্যাহারের আহবান জানান। ইন্দিরা বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানি সৈন্য অপসারণই সমস্যার শ্রেষ্ঠ সমাধান।’ এই বক্তৃতায় তিনি ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য বাংলাদেশ ও ভারতের জনসাধারণকে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
স্বাধীনতার ঘোষক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তখন পাকিস্তানের কারাগারে। এদিন রাওয়ালপিন্ডি থেকে এক সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়, ‘অধুনালুপ্ত আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমানের বিচার শেষ হয়নি।’ এতে আরো বলা হয়, ‘পূর্ব পাকিস্তানের চারটি রণাঙ্গনে যে আক্রমণাত্মক চাপ সৃষ্টি হয়েছিল তা এখনো অব্যাহত রয়েছে। ৭১ সালের এই দিনে মুক্তিযোদ্ধারা অপারেশন চালিয়ে ঢাকায় দুজন মুসলিম লীগ কর্মীকে হত্যা করে। বাকি দুজনকে বুলেটবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।’ 

এর আগে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা স্বাধীনতার আন্দোলন পরিণত হয়েছিলো দেশের সশস্ত্র মুক্তিসংগ্রামে। অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে প্রবাসী মুজিবনগর নগর সরকার এই মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করে। বিশ্বের বৃহৎ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিবেশী ভারত এসে দাঁড়িয়েছিল মুক্তিকামী বাঙালির পাশে। সুদীর্ঘ নয় মাসে ৩০ লাখ শহীদের রক্ত-সাগর পাড়ি দিয়ে গেরিলা যুদ্ধের মাধ্যমে এ জাতি ছিনিয়ে এনেছিলো স্বাধীনতা। ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করেছিলো মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনাকারী বাংলাদেশ-ভারত যৌথ বাহিনীর কাছে।

আত্মসমর্পণ
বিজয়ের আনন্দে স্বাধীনতার কেতন ওড়ানো এই ডিসেম্বর আজও প্রত্যেক বাঙালির নিরন্তর প্রেরণার উৎস। ডিসেম্বর মানেই অজেয় বাঙালির দুর্জয় সাহসের গৌরবগাথা। এই মাসে প্রতিটি বাঙালি ফিরে যায় একাত্তরের অবিনাশী যুদ্ধ-দিনে। এ বছরও আনন্দ-আবেগে নানা আনুষ্ঠানিকতায় এ মাসটি উদযাপন করবে এই জাতি। বিজয় মাসের প্রথম দিন আজ পহেলা ডিসেম্বর পালিত হবে মুক্তিযোদ্ধা দিবস। এরই ধারাবাহিকতায় ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবস এবং ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস পালন করা হবে। এছাড়া মাসব্যাপী দেশের বিভিন্ন এলাকা শত্রুমুক্ত হওয়ার দিনটিও বিশেষভাবে উদযাপিত হবে।

আরো দেখুন :
আলোকচিত্রে মুক্তিযুদ্ধ’১৯৭১
newsreel [সংবাদচিত্র]