১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫
১২ সেপ্টেম্বর ২০১৫
পরবর্তী প্রজন্মের দায়িত্ব নেবে কে?
রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী এক শিক্ষালয়ের মাঠ |
মাঠটি মূলত সিদ্ধেশ্বরী বয়েজ স্কুল এন্ড কলেজের। মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার নির্মাণে জড়িত এক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আড়াই বছরেরও বেশী সময় ধরে (২০১৩ সালের জানুয়ারী মাস থেকে) অবৈধভাবে এটি দখল করে রেখেছে। উচ্চ আদালতকে তোয়াক্কা না করে তারা নির্মাণ সামগ্রী রেখেই ক্ষান্ত হয়নি। নিষেধাজ্ঞা না মেনে নির্মাণ করেছে আধাপাকা স্থাপনাও। অথচ এক সময় উল্লেখিত প্রতিষ্ঠানের হাজারো শিক্ষার্থীর পাশাপাশি এলাকার শত শত শিশু-কিশোর এই মাঠেই নিয়মিত খেলাধুলা করতো।
ঘাঁটাঘাঁটি করে জানলাম, ২০১৩ সালে জুন মাসে এই মাঠ দখলমুক্ত করার নির্দেশনা দিয়েছিলো হাইকোর্ট। ওই বছরের মার্চে সিদ্ধেশ্বরী অ্যাপার্টমেন্ট ও বাড়ি মালিক সমিতির সভাপতি প্রকৌশলী আমিনুল ইসলামের করা এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি করে বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি এবিএম আলতাফ হোসেনের বেঞ্চ ওই আদেশ দেন। কিন্তু আজও তা দখল হয়ে আছে। দখলদার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটির নাম তমা গ্রুপ। এর মালিক আতাউর রহমান ভূঁইয়া মানিক নোয়াখালীর ধনকুবের হিসেবে পরিচিত।
সার্চইঞ্জিনগুলোর সহায়তায় ইন্টারনেটে ছড়িয়ে থাকা খবর থেকে আরো জানলাম, ওই রিটের প্রেক্ষিতে দেয়া তলবের আদেশে আদালতে হাজির না হওয়ায় সিদ্ধেশ্বরী বয়েজ স্কুল ও কলেজের পরিচালনা পর্ষদে থাকা যুবলীগ নেতা শোয়েব চৌধুরীকে গ্রেফতার করে হাজির করার নির্দেশ পেয়েছিলো রমনা থানার পুলিশ। ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তাদের এই আদেশ দেয়া হয়েছিলো। একইসঙ্গে তমা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালককেও হাজির থাকতে নির্দেশ দিয়েছিলো আদালত। কিন্তু এই ঘটনার আর কোনো আপডেট খুঁজে পাইনি।
মৌচাক-মগবাজার ফ্লাইওভার নির্মাণের যন্ত্রপাতি রাখার কথা বলে দুই বছরের জন্য (২০১৩ সালের ২১ জানুয়ারি থেকে ২০১৫ সালের ২১ জানুয়ারি) ওই মাঠ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান তমা গ্রুপকে ইজারা দেয়া হয়। অথচ বেসরকারি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের পরিচালনা পরিষদের বিধি অনুসারে স্কুলের কোনো সম্পত্তি হস্তান্তর করার ক্ষমতা পরিচালনা পরিষদের কাউকে দেয়া হয়নি। যে কারণে ওই ইজারা দেয়ার সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে একটি রুলও জারি করেছিলো হাইকোর্ট।
বিতর্কিত অবৈধ ইজারার মেয়াদও আরো আট মাস আগে শেষ হয়ে গেছে। তবুও মাঠটি দখল মুক্ত হয়নি। এর কারণ অনুসন্ধানে জানলাম আরো চমকপ্রদ তথ্য। নির্ধারিত সময়ে শেষ না হওয়ায় মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার প্রকল্পের ব্যয়ও বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। প্রকল্পের শুরুতে ব্যয় ধরা হয়েছিলো ৭৭২ কোটি ৭০ লাখ টাকা। কিন্তু প্রকল্প ব্যয় এক হাজার ৭২ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন খোদ প্রকল্প পরিচালক নাজমুল হাসান ।রিট আবেদনকারীর পক্ষে শুনানিতে অংশ নেয়া আইনজীবি এ ব্যাপারে আদালতে বলেছিলেন - “ইজারা দেয়ার সময় কলেজের পরিচালনা পরিষদের অধিকাংশ সদস্যের সম্মতি নেয়া হয়নি। পরে সরকার ও সংশ্লিষ্টদের আইনি নোটিশ দেয়া হলেও এটি বাতিল হয়নি। এতে ওই এলাকার বাসিন্দাদের সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে। ” প্রসঙ্গত, সংবিধানের ১৫ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জনগণের শিক্ষা, যুক্তিসঙ্গত বিশ্রাম, বিনোদন ও অবকাশের অধিকার নিশ্চিত করা ‘রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব’।
অভিযোগ রয়েছে, এই প্রকল্প বাস্তবায়নকারী তিন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নকশায় ত্রুটি ও পিলার স্থাপনের জটিলতার দেখিয়ে প্রকল্পের মেয়াদ ও খরচ বাড়াতে বাধ্য করেছে। সম্প্রতি এ ব্যাপারে এক ঠিকাদার, তমা গ্রুপের চেয়ারম্যান ‘মানিক গণমাধ্যমে বলেছেন, ‘আমাদের কাজে কোনো ত্রুটি নেই। কোনো মন্ত্রণালয় থেকে অভিযোগ উঠেনি।’ তার দাবি, আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে ফ্লাই-ওভারের সম্পূর্ণ কাজ শেষ হবে।
অনেকে নিশ্চয় জানেন, দেশের প্রতিষ্ঠাতা জাতির পিতা বন্ধবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের পরিবারের ইতিহাসও জড়িয়ে আছে সিদ্ধেশ্বরীর মৃত প্রায় ওই মাঠটির সাথে। ১৯৫৮ সালে বঙ্গবন্ধু টি বোর্ডের চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় তাঁর নামে সেগুনবাগিচায় একটি বাসা বরাদ্দ করা হয়েছিলো। কিন্তু ওই বছরই সালে আইয়ুব খান মার্শাল ল জারি করেন এবং বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হয়। বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতারের পর ১২ অক্টোবর বঙ্গবন্ধুর পরিবারকে সেগুনবাগিচার বাড়িটি তিন দিনের মধ্যে ছেড়ে দিতে বলা হয়। ১৫ অক্টোবর বাড়িটি ছেড়ে দিতে বাধ্য করা হয়। এ সময় বেগম মুজিব সন্তানদের নিয়ে সিদ্ধেশ্বরী বয়েজ স্কুল এন্ড কলেজের মাঠের পাশে মাসিক ২০০ টাকা ভাড়ায় একটি বাড়িতে ওঠেন। কিছুদিনের মধ্যেই শেখ মুজিবের পরিবার যে ওই বাড়িতে থাকে তা জানাজানি হয়ে যায়। বাড়ির মালিক বেগম মুজিবকে বাড়ি ছেড়ে দেয়ার জন্য বলেন। একান্ত বাধ্য হয়ে বাড়িটি ছেড়ে দিয়ে মুজিব পরিবার আবার সেগুনবাগিচার একটি বাসার দোতলায় আশ্রয় নিয়েছিলেন।বাঙালীর মুক্তির প্রতীক হয়ে থাকা সেই নেতার, তথা বন্ধবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনাই গত সাড়ে সাত বছর ধরে আমাদের রাষ্ট্রনায়ক (সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী)। তার শাসনামলে আগামী প্রজন্মের ব্যাপারে রাষ্ট্রের ঔদাসীন্য দেখে মেনে নিতে সত্যি কষ্ট হয়। যে দেশের প্রতিটি শিশু রাষ্ট্রের চাপিয়ে দেয়া ১৩ হাজার ১৬০ টাকার ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে জন্মায়, সে দেশের রাষ্ট্রপ্রধান আগামী প্রজন্মের ব্যাপারে কেন আরো সংবেদনশীল হবেন না? - এমন প্রশ্নও মনে জাগে।
অথচ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) অনুমোদন নিয়ে ঢাকাসহ সারাদেশে পরিচালিত ৮৩টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাড়ে চার লাখের বেশি শিক্ষার্থী রয়েছে। খোদ ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নানও সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে অসন্তোষ প্রকাশ করে জানিয়েছেন, পুরনো অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ নিয়োগ না দিয়েই কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। মান্নান আরো বলেছেন, ‘অনেক বিশ্ববিদ্যালয় অডিট রিপোর্টও জমা দেয় না। ক্ষমতা না থাকায় তাদের বিরুদ্ধে ইউজিসি কোনো ব্যবস্থাও নিতে পারে না।’চলতি অর্থবছরের বাজেটে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি -এর উপর সাড়ে ৭ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপের প্রতিবাদে গত কয়েক মাস ধরে চলমান ছাত্র আন্দোলন নিয়ে কথা বলতে গিয়ে গত বৃহস্পতিবার (১০ সেপ্টেম্বর) জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে শেখ হাসিনা বলেছেন, “এই যে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, ধানমণ্ডিতে এক বিল্ডিংয়ে কয়েকটা বিশ্ববিদ্যালয়, গুলশানে এক ছাদের নিচে কয়েকটি। বড় বড় নাম, গাল ভরা বুলি। এদের কোনো একাউন্টিবিলিটি নেই।”
নীতিনির্ধারকরা এসব বলে আসলে কার বা কাদের ওপর দায় চাপাতে চাইছেন তা বুঝতে পারছেন কি? না পারলে ভাবুন, ভাবার প্রাকটিস্ করুন। দেশের রাষ্ট্রপ্রধান নিজেই যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ‘একাউন্টিবিলিটি নেই’ বলছেন, সে প্রতিষ্ঠানগুলো লাখ লাখ শিক্ষার্থীকে পড়ানোর সুযোগ কেন, কিভাবে পাচ্ছে? কার, কোন স্বার্থে? প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ না করে বা না শুধরে, খোদ রাষ্ট্রই কি পরবর্তী প্রজন্মের ভবিষ্যত অনিশ্চিত ও ঘোলাটে করে তুলছে না? অথচ আমাদের রাষ্ট্রনায়করা কি এর দায় নেবেন? নচেৎ তারা কি স্রেফ এটুকু অন্তত বলবেন, এই দায়িত্বটা আসলে কার? দায়টা মূলত কে নেবেন? দেশের আগামীকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলার অধিকার কারা কাকে দিয়েছে?
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের এক জরিপের বরাত দিয়ে বিবিসি বাংলার করা এক প্রতিবেদনে সম্প্রতি বলা হয়েছে - “বাংলাদেশে উচ্চ শিক্ষা নিচ্ছেন এমন ৬৩ শতাংশ শিক্ষার্থীই পড়ছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে, কিন্তু এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে মাত্র ১০টি মান ‘ভালো’। ২৬টির ‘মোটামুটি’, বাকিগুলোর মান 'খুব খারাপ'। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে সার্টিফিকেট বাণিজ্য করার অভিযোগ রয়েছে। এগুলোর শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি’র ক্ষেত্রে একক কোন কাঠামো নেই। মাত্র ১৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজস্ব ক্যাম্পাস রয়েছে।” অবস্থাদৃষ্টে কারো কারো মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে যে, রাষ্ট্রযন্ত্র সব বুঝে চুপ থেকে প্রতিনিয়ত কি দেশের নাগরিকদেরই অপমান করছে না?
কিন্তু রাষ্ট্রযন্ত্রের পরিচালকরা কি ভুলে গেছেন সংবিধানের ১৯ নম্বর অনুচ্ছেদের কথা। যেখানে বলা রয়েছে, রাষ্ট্র সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা নিশ্চিত করতে সচেষ্ট হবে৷ মানুষে মানুষে সামাজিক ও অর্থনৈতিক অসাম্য বিলোপ করার পাশাপাশি নাগরিকদের মধ্যে সম্পদের সুষম বন্টন নিশ্চিতের জন্য এবং প্রজাতন্ত্রের সর্বত্র অর্থনৈতিক উন্নয়নের সমান স্তর অর্জনের উদ্দেশ্যে সুষম সুযোগ-সুবিধাদানে রাষ্ট্রই কার্যকর ব্যবস্থা নেবে৷
বিগত সরকারের ঘাড়ে সকল দোষ চাপানোর একটা ট্রেন্ড আমাদের দেশে বেশ চালু আছে। ঠিক বুঝতে পারি না, বিগতদের দোহাই দিয়ে নতুনরা সমস্যা না মিটিয়ে যদি এড়িয়েই যেতে থাকেন তবে সরকার বদলেই বা লাভ কী! যাক সে কথা, আশার আলাপ দিয়েই শেষ করছি। গণভবনে আজ শনিবার (১২ সেপ্টেম্বর) এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমরা বাংলাদেশকে এমনভাবে গড়ে তুলতে চাই যেন প্রতিটি শিশু শিক্ষায়-দীক্ষায় উন্নত হতে পারে। আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্ন হতে পারে।’ জয় হোক তার এই ভাবনার।
১০ সেপ্টেম্বর ২০১৫
ওই বেতনের কেতন উড়ে
মিরপুর থেকে যাত্রাবাড়ি রুটের একটি লোকাল বাসের জানালায় সাঁটানো নোটিশ |
দেশের সংবিধানের ১৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “রাষ্ট্র একই পদ্ধতির গণমুখী ও সার্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য এবং আইনের দ্বারা নির্ধারিত স্তর পর্যন্ত সকল বালক-বালিকাকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষাদানের জন্য; সমাজের প্রয়োজনের সহিত শিক্ষাকে সঙ্গতিপূর্ণ করিবার জন্য এবং সেই প্রয়োজন সিদ্ধ করিবার উদ্দেশ্যে যথাযথ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও সদিচ্ছাপ্রণোদিত নাগরিক সৃষ্টির জন্য; আইনের দ্বারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিরক্ষরতা দূর করিবার জন্য; কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন৷” এছাড়া ১৫ অনুচ্ছেদে নাগরিকদের শিক্ষা নিশ্চিত করা ‘রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব’ বলেও সেখানে উল্লেখ রয়েছে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বেতনের সঙ্গে সাড়ে সাত শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবিতে বুধবার (৯ সেপ্টেম্বর) ঢাকার রামপুরার আফতাবনগর এলাকায় বিক্ষোভ করেন ইস্টওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা । ওই সময় তাদের ওপরে পুলিশের ছোড়া গুলিতে বিশ্ববিদ্যালয়টির অতিরিক্ত রেজিস্ট্রারসহ অন্তত ৩০-৫০ জন আহত হন বলে শিক্ষার্থীরা দাবি করেন। তবে গুলি ছোড়ার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি পুলিশ। আন্দোলনরতরা দেশের সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের আহ্বান জানিয়েছে। এ ঘটনার মাত্র একদিন আগে সোমবার (৭ সেপ্টেম্বর) সরকারি চাকুরেদের বহুল প্রত্যাশিত নতুন বেতন কাঠামো অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। সর্বোচ্চ গ্রেডে বর্তমানের চেয়ে ৯৫ শতাংশ ও সর্বনিম্ন গ্রেডে শতভাগের বেশি মূল বেতন বাড়ানো হয়েছে। নতুন বেতন কাঠামো গত জুলাই থেকে কার্যকর করার ঘোষণাও দেয়া হয়েছে। তবে এখন শুধু বেতন বাড়বে, ভাতা বাড়বে আগামী বছরের জুলাই থেকে। বার্ষিক ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট দেয়া হবে। বৈশাখে নববর্ষের বোনাসও পাবেন তারা।
প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের সরকারি চাকুরেদের মহার্ঘ ভাতাও (ডিএ) গতকাল (বুধবার) আরো ছয় শতাংশ বেড়েছে । কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা ১১৩ শতাংশ থেকে ওই ভাতা বাড়িয়ে ১১৯ শতাংশ করার বিষয়টি অনুমোদন করেছে। দেশটির প্রায় এক কোটি কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী এবং পেনশনভোগী এই সুবিধা পাবেন। এ খবরটা পড়ে প্রথমেই স্মরণে এলো পুনের ‘ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া বা ‘এফটিআইআই’ - এর আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কথা। সেখানকার চেয়ারম্যান পদে রাষ্ট্রটির ক্ষমতাসীন দল বিজেপি এর সদস্য গজেন্দ্র চৌহানকে নিয়োগের প্রতিবাদে এবং তার অপসারণ দাবিতে গত ১২ জুন থেকে থেকে তারা একটানা আন্দোলন করছেন। তাদের অভিযোগ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিজেপি সদস্যকে বসিয়ে এর গেরুয়াকরণ করা হচ্ছে। অপরপক্ষ আবার আন্দোলকারীদের ‘হিন্দু বিরোধী’ বলছে। সেখানেও চলছে দমন, গ্রেফতার। অতএব নিজস্ব চাকরদের বেতন বাড়ানোর পর সে দেশের সরকারও যে আন্দোলকারীদের উপর চড়াও হতে পারে, তেমন শঙ্কাতো জাগতেই পারে।
প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের সরকারি চাকুরেদের মহার্ঘ ভাতাও (ডিএ) গতকাল (বুধবার) আরো ছয় শতাংশ বেড়েছে । কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা ১১৩ শতাংশ থেকে ওই ভাতা বাড়িয়ে ১১৯ শতাংশ করার বিষয়টি অনুমোদন করেছে। দেশটির প্রায় এক কোটি কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী এবং পেনশনভোগী এই সুবিধা পাবেন। এ খবরটা পড়ে প্রথমেই স্মরণে এলো পুনের ‘ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া বা ‘এফটিআইআই’ - এর আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কথা। সেখানকার চেয়ারম্যান পদে রাষ্ট্রটির ক্ষমতাসীন দল বিজেপি এর সদস্য গজেন্দ্র চৌহানকে নিয়োগের প্রতিবাদে এবং তার অপসারণ দাবিতে গত ১২ জুন থেকে থেকে তারা একটানা আন্দোলন করছেন। তাদের অভিযোগ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিজেপি সদস্যকে বসিয়ে এর গেরুয়াকরণ করা হচ্ছে। অপরপক্ষ আবার আন্দোলকারীদের ‘হিন্দু বিরোধী’ বলছে। সেখানেও চলছে দমন, গ্রেফতার। অতএব নিজস্ব চাকরদের বেতন বাড়ানোর পর সে দেশের সরকারও যে আন্দোলকারীদের উপর চড়াও হতে পারে, তেমন শঙ্কাতো জাগতেই পারে।
যাক সে কথা, একটু দেশের দিকেই নজর দেই। এখানে পাঠককে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, আমাদের এই রাষ্ট্রের সাথে ছাত্র আর ছাত্র আন্দোলনের সম্পর্ক বেশ গভীর। ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ১৯৬২ এর শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ এর ছয় দফা, ১৯৬৯ এর পটভূমিতে ১৯৭১ সালে জন্ম নেয়া বাংলাদেশের চিন্তায় শিক্ষার্থীদের ভূমিকা রাজনীতিবিদদের চেয়ে কম ছিলো না।
ওই সময় শিক্ষার্থীরা একই ধারার বৈষম্যহীন অবৈতনিক বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষার জন্য লড়াই করেছে, জীবন দিয়েছে। তবে মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী কোনো সরকারই ওই দাবি আর আমলে নেয়নি। ১৯৯০ এর পরে অবাধ মুক্তবাজার অর্থনীতির হাত ধরে শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণের পথ প্রশস্ত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় বিশ্বব্যাংকের পরামর্শে একটি কৌশলপত্র প্রণয়ন করে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। এই কৌশলপত্রের সুপারিশ অনুযায়ী আগামী ২০ বছরের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করার কথা বলা হয়েছে।
বিগত ২০০৬ সালে বিশ্বব্যাংক ও এডিবি’র অর্থায়নে এবং তাদের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ওই কৌশলপত্র প্রণয়ন করে যা মোট চারটি স্তরে বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত হয়। স্তরগুলো হচ্ছে প্রাথমিক পর্ব- ২০০৬-০৭, স্বল্পমেয়াদি ২০০৮-১৩, মধ্যমেয়াদি ২০১৪-১৯ এবং দীর্ঘমেয়াদি ২০২০-২৬। এই ধাপে ধাপে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মুলে ছিল ছাত্র আন্দোলনের ভয়। কৌশলপত্র প্রণয়নকারীরা বেশ বুঝেছিলেন যে হটাত করে সমস্ত জনবিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের বেতন বৃদ্ধি ও বেসরকারিকরণ করলে তীব্র আন্দোলন হতে পারে। তাই তারা কৌশলী হয়েছেন।তবে আশার কথা হচ্ছে, বিতর্কিত ওই কৌশলপত্র বাস্তবায়নের শুরু থেকেই বেশ ঝক্কি পোহাচ্ছে আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্র। তাদের কৌশল কাজে লাগেনি। ঠিকই জেগে উঠেছে শিক্ষার্থী সমাজ। গড়ে তুলেছে একের পর এক আন্দোলন। যারই ধারাবাহিকতায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও আজ রাজপথে। শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ ও বিরুদ্ধে পৃথিবীর সব দেশেই ছাত্র আন্দোলন আরো তীব্র থেকে তীব্রতর হবে, এটাই কাম্য।
০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫
হেফাজতের পথে ওলামা লীগ !
হেফাজতে ইসলামের পদাঙ্ক অনুসরন করছে আওয়ামী ওলামা লীগ। তারাও এবার ভারতীয় অভিনেত্রী আগমন প্রতিহত করতে বিমানবন্দর ঘেরাও কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে। তাদের কোপানলে পরেছেন বাঙালী অভিনেত্রী পাওলী দাম। নির্মাণাধীন একটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করার জন্য আগামী বুধবার (৯ সেপ্টেম্বর ) থেকে টানা ১৪ দিন তার এ দেশে অবস্থানের কথা ছিলো।
একটি চলচ্চিত্রের দৃশ্যে পাওলী |
গত ক’দিন ধরে অবশ্য ওলামা লীগও বেশ আলোচনায় আছে। এর আগে, সম্ভবত গত পরশু (৪ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধন করে তারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামের আগে শহীদ ও শেষে রহমতুল্লাহি আলাইহি যোগ করার দাবি তুলেছে। সংগঠনের সভাপতি মাওলানা মুহাম্মাদ আখতার হুসাইন বুখারী এ দাবি জানিয়ে বলেছেন, ‘জাতির জনকের নামের আগে বঙ্গবন্ধু ব্যবহার করা হয়। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য যে উনার নামের আগে জাতীয়ভাবে শহীদ শব্দ ব্যবহার করা হয় না। নামের শেষে রহমতুল্লাহি আলাইহি বলা হয় না। অবিলম্বে বঙ্গবন্ধুর নামের আগে জাতীয়ভাবে শহীদ ও নামের শেষে রহমতুল্লাহি আলাইহি বলতে হবে। একইসঙ্গে ১৫ আগস্টকে জাতীয় শোক দিবসের বদলে শাহাদাত দিবস ঘোষণা করতে হবে।’
মানববন্ধনে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জাফর ইকবালের বহিষ্কার চায় ওলামা লীগ। একইসঙ্গে বর্তমানে পাঠ্যপুস্তকে কট্টর ইসলামবিরোধী হিন্দু ও নাস্তিকদের লেখাকে বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তোলে তারা। এছাড়া তখন সানি লিওন আর পাওলী দামকে ‘পতিতা’ আখ্যায়িত করে বাংলাদেশে তাদের নিষিদ্ধ করার দাবিও জানানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, সানি লিওন ও পাওলী দাম ইতিপূর্বেও বাংলাদেশে এলেও তখন তাদের এ জাতীয় সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়নি।
পূর্বের পোস্টঃ সানিকে ঠেকাবে হেফাজত !
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)