Powered By Blogger

২১ ফেব্রুয়ারী ২০১৫

আমার ‘ভাবনাংশ’

নামাঙ্কন : সাইদ র’মান
প্রথম বই প্রকাশের ঘটনায় যতটুকু উত্তেজিত বা আনন্দিত হওয়ার কথা ছিলো, মানে হবে বলে আশা করেছিলাম; ঠিক ততটা উত্তেজনা বা আনন্দ হচ্ছে না কেন জানি। এর জন্য কে দায়ী? সমকাল, না কোনো গুপ্তগ্লানি? ঠিক বুঝতে পারছি না।
গ্রন্থটি প্রকাশিত হওয়ার কথা ছিলো ২০১১’র নভেম্বরে। পাণ্ডুলিপির প্রথম খসড়া দাঁড়িয়েছিলো আগের বছর, মানে ২০১০’র জুলাইয়ে। কিন্তু এবার, মানে ২০১৫’তে এসে তা চূড়ান্ত এবং প্রকাশিত হয়েছে। পাওয়া যাচ্ছে অমর একুশে গ্রন্থমেলায়।
মামার হাতে - অামার বই
কোনো আনুষ্ঠানিকতা নেই। প্রেস থেকে সরাসরি লিটলম্যাগ চত্বরের প্রান্তস্বর -এর স্টলে এসেছে ‘ভা ব নাং শ’। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি বিকেল সাড়ে পাঁচটায় বইটির বিক্রি শুরু হয়েছে। চার ফর্মার এ গ্রন্থের দাম রাখা হয়েছে একশ ত্রিশ টাকা। মেলায় ২৫ শতাংশ ছাড়ে পাওয়া যাচ্ছে মাত্র একশ টাকায়।


হায়, কতটা অসহনশীল হয়ে উঠছি আমরা। প্রত্যেকে প্রত্যেকের কাছ থেকে ক্রমশ দূরে সড়ে যাচ্ছি। বিচ্ছিন্নতা বোধ পিছু ছাড়ছে না কারো। তাবৎ অনুভূতিও ভোঁতা হয়ে যাচ্ছে। ভুলেছি হাসতে - কাঁদতে। নগর সভ্যতা যে হাসাতে আর কাঁদাতেই শেখাচ্ছে খুব। পুঁজির রাজ্যে মানুষ আর মানুষ নয়, ভাঁড় বা ভয়ংকর হতে চায়।

আহা, বিবর্তন। এমন একটি সময়ে দাঁড়িয়ে এই যে গ্রন্থ প্রকাশ, এ নেহাত কোনো চাতুর্যতা নয়ত - এমনটা ভাবতেও কী মানা আছে কোনো। যদিও এখন জেনে গেছি কেন লেখি। এই বইতে তার কিছু পরোক্ষ ব্যাখ্যাও পাওয়া যাবে হয়ত। তবে নতুন পাঠকদের আগেই বলে রাখি - আমি কিন্তু ভাই ‘কবি নই, তবু শব্দ-ছন্দ বুনি’..।

ভা ব নাং শ - এর সূচি
অভিজিৎ দাস’কে খুব বেশী মনে পড়ছে ইদানীং। বিগত বছরগুলোয় মেলায় প্রকাশিত চারটি বই - কামরাঙা কেমন সবুজ, ভাঙা আয়নার প্রতিবিম্বগণ, মাটির চামচ মুখে এবং করপল্লবসঙ্গিনী - তিনি নিজ হাতেই দিয়েছিলেন আমায়। এর মধ্যে কোনটায় যেনো লিখেছিলেন - “প্রিয়বরেষু ঈয়ন’কে আদিগন্ত ভালোবাসা”। তাকে নিজের বই দেয়ার সময় কি লিখে দেবো, তা ভাবা হয়নি এখনো। তবে ভাবতে হবে। কারণ আশাকরি - খুব শিগগিরই দেখা হবে কবির সাথে।

>> অভিজিৎ দাস নিরুদ্দেশ, না গুম?

১২ ফেব্রুয়ারী ২০১৫

শুভ জন্মদিন আখতারুজ্জামান ইলিয়াস

ছবিটি সংগ্রহিত
১২ ফেব্রুয়ারী, ১৯৪৩। গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা থানার গোটিয়া গ্রামে মাতামহের বাড়িতে জন্মেছিলেন কথাসাহিত্যিক আখতারুজ্জামান ইলিয়াস। তার ডাক নাম ছিলো মঞ্জু, পুরো নাম আখতারুজ্জামান মোহাম্মদ ইলিয়াস। মা মরিয়ম ইলিয়াস ও বাবা বিএম ইলিয়াসের প্রথম সন্তান। মা ছিলেন গৃহিণী, আর বাবা বগুড়ার সারিয়াকান্দি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক; পাশাপাশি রাজনীতিও করতেন। ইলিয়াসের জন্মের সময় তিনি ছিলেন পূর্ববাংলা মুসলিম লিগের বগুড়া জেলার সেক্রেটারি। ১৯৯৬ সালের ১৩ জানুয়ারি ক্যান্সার (অস্টিও সারকোমা) ধরা পড়েছিলো ইলিয়াসের ডান পায়ে। একই বছরের ২০ মার্চ অস্ত্রোপচার করে তার ডান পা কেটে ফেলা হয়। সেই থেকেই হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে তিনি  নিশ্চিত মৃত্যুর প্রহর গুণছিলেন। অবশেষে ১৯৯৭ সালের ৪ জানুয়ারি তার অপেক্ষার অবসান হয়। তার ইচ্ছানুযায়ী মৃত্যুর পরের দিন বগুড়া শহরের দক্ষিণ বগুড়া গোরস্থানে বাবা-মায়ের কবরের পাশে তাঁকে সমাহিত করা হয়।
এক নজরে

নাম : আখতারুজ্জামান ইলিয়াস:
মা : মরিয়ম ইলিয়াস
বাবা : বিএম ইলিয়াস
জন্ম : ১২ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৩।

পড়াশুনা :
মাধ্যমিক : ১৯৫৮ সাল, বগুড়া জিলা স্কুল
উচ্চমাধ্যমিক : ১৯৬০ সাল, ঢাকা কলেজ
স্নাতকোত্তর : ১৯৬৪ সাল (বাংলা সাহিত্য), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

কর্মজীবন
১৯৬৫ সালের আগস্ট মাসে ইলিয়াস প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন ঢাকার জগন্নাথ কলেজে। অবশ্য এর আগে যোগ দিয়েছিলেন করটিয়া সা'দত কলেজে। যদিও দু'তিন দিন পর চাকরিটি ছেড়ে দেন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তাল মেলাতে পারছিলেন না বলে। ১৯৮৪ জগন্নাথ কলেজে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি পান। ১৯৮৭'র জানুয়ারিতে ইলিয়াস প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক হিসেবে যোগ দেন এবং ডিসেম্বরে সরকারি সঙ্গীত মহাবিদ্যালয়ের উপাধ্যক্ষ নিযুক্ত হন। ১৯৯৪ সালে তিনি ঢাকা কলেজে অধ্যাপক হিসাবে যোগ দেন।

পুরস্কার
১৯৭৭ সালে হুমায়ুন কবির স্মৃতি পুরস্কারে ভূষিত হন। বাংলাদেশ লেখক শিবির সংঘ তাঁকে এই পুরস্কারে ভূষিত করেন। ১৯৮৩ সালে ইলিয়াস বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৮৭ সালে তিনি আলাওল সাহিত্য পুরস্কার অর্জন করেন৷ ১৯৯৬ সালের এপ্রিলে মাসে 'খোয়াবনামা'র জন্য পান প্রফুল্ল কুমার সরকার স্মৃতি আনন্দ পুরস্কার এবং সাদাত আলী আকন্দ পুরস্কার। এবছর কাজী মাহবুবউল্লাহ স্বর্ণপদক নামে আরেকটি পুরস্কার পান তিনি।

প্রকাশিত গল্পগ্রন্থ
অন্য ঘরে অন্য স্বর, খোঁয়ারি, দুধভাতে উত্‍পাত, জাল স্বপ্ন স্বপ্নের জাল ( মৃত্যুর পরে প্রকাশিত), দোজখের ওম।

প্রবন্ধের বই : সংস্কৃতির ভাঙা সেতু (মৃত্যুর পরে প্রকাশিত)
উপন্যাস : চিলেকোঠার সেপাই, খোয়াবনামা


তথ্যসূত্র
>> gunijan.org.bd
>> bn.wikipedia.org/wiki/আখতারুজ্জামান_ইলিয়াস

০৩ ফেব্রুয়ারী ২০১৫

মেলায় মিছিলের - ‘মেঘ সামান্য হাসো’

প্রচ্ছদঃ ধ্রুব এষ
মিছিল খন্দকার
বই মেলায় আসছে বন্ধু মিছিল খন্দকার -এর প্রথম একক কাব্যগ্রন্থ - মেঘ সামান্য হাসো। পাওয়া যাবে ঐতিহ্য প্রকাশনীর (৫০, ৫১ ও ৫২ নম্বর) স্টলে। তার কবিতা ভালো লাগে আমার। ভরসা পাই। পড়ে দেখতে পারেন। কাব্যপ্রেমীরা নিরাশ হবেন না হয়ত। একটি নমুণা রইলো -

খরাদগ্ধ মুখ



কিষানির কুলা হাতে
ধান থেকে উড়িয়ে দিতে দেখেছি চিটা,
চিটার মর্মমূলে কোন সে ব্যথা
কার দোষে
মাটিতে লুটালে মন টের পাবে কি?
তুমিও তো মাটির সন্তান।

কুটিলতা বড় ভয় পাই,
যুবা বয়সী আধাপাকা বুদ্ধিতে।
সরলের সংজ্ঞা খুঁজি-
ও সরল, কীভাবে বুঝব তুমি কে?
তবে কি সুপুরির খোলে চড়ে
ফিরে যেতে হবে শৈশবে?
কে তবে টেনে টেনে নেবে?
খোল তো গাছের দান; যন্ত্রে চলে না।

আর শৈশব-
একটা স্মৃতি ছাড়া সবই বিস্মৃত।
সেটা বড় ভয়ানক,
তখনও মাছ হতে শিখিনি।
কেননা জানি না সাঁতার,
নৌকায় চড়েছি দু’জন-
বন্ধু আর আমি,
যখন মাঝ নদীতে
দেখি নৌকা ফুটা
যত সেঁচি তারও চেয়ে বেশি ওঠে পানি!

সে যাত্রায় কীভাবে বেঁচেছি
তা আজ বাদ থাক,
শুধু বলি
ইদানীং সে রকম ভয়ানক আতঙ্ক নিয়ে চলি।
কেনইবা নয়,
যতটা জেনেছি তাতে
পাঁজরের ইঁদুরে কাটে
প্রত্যেকের নিজস্ব হৃদয়!

(পাদটীকা :
আমার সে বন্ধু এখন
আস্ত মৃগেল,
চাতুর্যও শিখেছে ঢেড়।
প্রায়শই বলে শুনি-
মাছ হলে হতে হয়,
গভীর জলের!)


অগ্নি উদ্গিরণ কালে
কোনো অগ্নিগিরির জ্বালামুখে,
বৃত্তাকার পরিভ্রমণ করে
হিংস্র-কুটিল লাভায় হয়েছি উজ্জ্বল।
আমার দারুণ অভিলাষ,
তোমাকে দেখাই এই মুখ
কতটা প্রাত সূর্যের মতো লাল!

পরিশিষ্ট সময়ে সে আগুন
চর্ম-মাংস খুলে
আমাকে করেছে নরকংকাল।
এবার হাড়ের ঝংকারে
দীর্ঘপথ পদব্রজের শেষে
যদি তোমার;
তোমাদের নিকটে ফিরে আসি,
তুমি বা তোমরাওতো চিনবে না
আঁতকে উঠবে, ভূত! ভূত!!

তবে কি আমার স্বতন্ত্র পরিচয়
ডাকাতি করবে অগ্নিগিরি?
তুমিইতো প্রকৃত সুহৃদ, রে নারী!
কতবার তুলে আলতো
আদিবাসী ঘুম থেকে,
টেনে নিয়েছ আরণ্যিক প্রেমে।
অনাহূত মেঘে হারিয়ে গেলে চাঁদের চেরাগ,
ছুঁয়ে ছুঁয়ে চিনেছ সঠিক।

যে সময়, আমাকে ঠেলে দিয়েছে আগুনে
করেছে গোত্রহীন,
তুমিতো নও তার দলে, প্রতিনিধি।

তাই বলি,
যে কোনও প্রবাহে যদিবা নিকটে আসি ফের
পাশে দাঁড়িও;
সময়কে বিবাদি করে
নিয়ো মামলার প্রস্তুতি।
আর একজন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে জেনে নিয়ো,
রক্ত-মাংস জুড়ে করে দিতে পারবে কিনা সার্জারি।
newsreel [সংবাদচিত্র]