Powered By Blogger

৩০ জানুয়ারী ২০১৫

জহির রায়হান অন্তর্ধানের ৪৩ বছর পরও...

জহির রায়হান
৩০ জানুয়ারি, ১৯৭২। দেশের সিনেমা পাড়ায় ফুরফুরে উৎসবের আমেজ। কারণ, প্রথমবারের মতো স্বাধীন বাংলাদেশের এফডিসিতে এসেছেন ভারতের বিখ্যাত চলচ্চিত্র অভিনেত্রী নার্গিস, ওয়াহিদা রহমান এবং সঙ্গীতশিল্পী লতা মুঙ্গেশকর । তাঁদের নিয়েই যখন সবাই ব্যস্ত তখন প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক, ঔপন্যাসিক, এবং গল্পকার জহির রায়হান গিয়েছিলেন সহোদর কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক শহীদুল্লাহ কায়সারের খোঁজে, মিরপুরে। সেই যে গেলেন, আর ফিরলেন না তিনি। আজও তাই এই দিনে আমরা শোকগ্রস্থ হই।
জহির রায়হান - মূলত এক অবিস্মরণীয় নাম। কলম ও ক্যামেরাই ছিলো যার যুদ্ধাস্ত্র। আপন কর্মের প্রতিটি পরতে তিনি অন্যায়, অমানবিকতা, দুঃশাসন, সামাজিক আধিপত্য ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে সংগ্রামী চেতনার স্বাক্ষর রেখে গেছেন।  তাঁর প্রস্থান বা মৃত্যু নিয়ে গত ৪৩ বছরে বহু গল্প শোনা গেছে। বিএনপি-জামায়াতের মতাদর্শীরা দাবি করেছে, তাঁর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্রে স্বার্থক্ষুণ্ন হওয়ার ভয়ে তৎকালীন ক্ষমতাসীনরা তাকে হত্যা করেছে। আর তাঁদের সহায়তা করেছে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্তা ‘র’। খোদ শেখ মুজিবুর রহমানেরও সাঁয় ছিলো তাতে। তবে তৎকালীন সেনা কর্মকর্তা ও আওয়ামী পন্থীদের বক্তব্য ছিলো ভিন্ন। তাঁরা বলেছেন, জহির নিহত হয়েছিলেন ছদ্মবেশে থাকা পাকিস্তানী সেনা, বিহারী বা রাজাকার-আলবদরদের গুলিতে। কখনো আবার শোনা গেছে সিআইএ’র হাত ছিলো ওই ঘটনার পিছনে। এই নিয়ে বিতর্ক কম হয়নি। তবে রহস্য আজও রহস্যই থেকে গেছে।


আত্মসমর্পন না করা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একাংশ, তাঁদের মদদপুষ্ট রাজাকার-আলবদর এবং সশস্ত্র বিহারীরা তখনও মিরপুর দখল করে রেখেছিলো। তাদের মাঝে যুদ্ধে পরাজয়ের প্রতিশোধস্পৃহাও তখন প্রবলভাবেই ছিলো। যে কারণে ১৮ ও ১৯ ডিসেম্বর থেকে অনেক বাঙালি নিশ্চিন্ত মনে মিরপুরে নিজের বাড়িতে ফিরতে শুরু করলেও পরে তাঁদের কাউকে আর পাওয়া যায়নি। মূলত ১৯৬৫ থেকে ৭০ সালের মধ্যে মিরপুরে বিহারীদের জন্য ৩৬ হাজার বাড়ি বানানো হয়েছিলো। এক, দুই, ছয় এবং ১০, ১১, ১২ নম্বর ছিলো পুরোপুরি বিহারী অধ্যুষিত এলাকা। ৭১’র আগেই সেখানে দেড় লাখ বিহারী ভোটার ছিলেন। তাঁদের মোট মংখ্যা ছিলো প্রায় চার লাখ। আর ১৬ ডিসেম্বরের পর যুক্ত হয়েছিলো আরো কয়েক লাখ। মূলত পুরান ঢাকা, মোহম্মদপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার বিহারীরা দলে দলে মিরপুরে এসে আশ্রয় নিয়েছিলো।
মিরপুরে ১৯৬৫ সালেও বাঙালি-বিহারী দাঙ্গা হয়েছিলো। এছাড়া টুকটাক ঝামেলা লেগেই থাকত। আর এসব ক্ষেত্রে বিহারীদেরই মদদ দিত পশ্চিমারা। ৬৯, ৭০ ও ৭১’এ পিআইএ (পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্স)’র গাড়িতে করে অস্ত্র আসত বিহারীদের কাছে। সবমিলিয়ে মিরপুর ছিলো মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীদের শক্ত ঘাঁটি। অনলের সাথে এ নিয়ে আলাপকালে মুক্তিযোদ্ধা ফকির শফিউদ্দিন বলেছিলেন, ‘দেশ স্বাধীন হওয়ার সাত দিন পর আমি মিরপুরের চেয়ারম্যান হই এবং আবেদন করি মিরপুর থেকে হিন্দুস্থানী বিহার রেজিমেন্ট সরানোর জন্য। কারণ এরা মিরপুরের বিহারীদের স্বগোত্রীয়। সুতরাং এই রেজিমেন্টের ভরসায় বাঙালীরা মিরপুরে ফিরে আসতে সাহস পাচ্ছে না।’ অমন পরিস্থিতিতেই জহির রায়হান খবর পেয়েছিলেন তাঁর ভাই শহীদুল্লাহ কায়সারসহ বেশ ক’জন বুদ্ধিজীবি মিরপুরের ১২ নম্বর সেকশনের একটি বাড়িতে বন্দী আছেন। তাঁকে উদ্ধারেই তিনি ছুটে গিয়েছিলেন।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন প্রথম আওয়ামী লীগ শাসনামলে (১৯৯৬-২০০১) আবিস্কৃত হয়েছিলো মুসলিম বাজার বধ্যভূমি। ১৯৯৯ সালের ২৭ জুলাইয়ে মিরপুর ১২ নম্বরের নুরী মসজিদের সম্প্রসারণ কাজের সময় পুরানো স্ল্যাব দিয়ে ঢাকা একটি কুপের সন্ধান পায় নির্মাণকর্মীরা। স্ল্যাব ভেঙে তারা সেখানে প্রথমে তিনটি মাথার খুলি ও কিছু হাড়গোড় আবিষ্কার করে। দৈনিক প্রথম আলো নিউজটি প্রকাশ করার পর বুদ্ধিজীবিদের স্বজনরা ছুটে আসেন। খননের দায়িত্ব নেয় মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর ও একাত্তরের স্মৃতি পরিষদ। ১০ আগস্ট অবধি তাঁরা মোট পাঁচটি মাথার খুলি ও ছয় শতাধিক হাড় সংগ্রহ করেন। ঘটনাটি পর্যবেক্ষণে ছিলেন ভোরের কাগজের অনুসন্ধানী রিপোর্টার জুলফিকার আলি মানিক। একই সময় জহির রায়হানের ছেলে অনল রায়হানও মরিয়া হয়ে মাঠে নেমেছেন তাঁর বাবার অন্তর্ধান রহস্য ভেদে।


সূত্র খুঁজে খুঁজে মানিক পেয়েছিলেন ৭২’র ৩০ জানুয়ারির সেই যুদ্ধে বেঁচে যাওয়া সৈনিক আমির হোসেনকে। তাঁর কাছেই জানলেন তিনি নিজের চোখে জহির রায়হানকে বিহারী ও রাজাকারদের গুলিতে শহীদ হতে দেখেছেন। ৯৯’র পহেলা সেপ্টেম্বর মানিকের প্রতিবেদন ‘নিখোঁজ নন, গুলিতে শহীদ হয়েছিলেন জহির রায়হান’ ব্যাপক সাড়া ফেলে সারা দেশে। একইবছর ১৩ আগস্ট সাপ্তাহিক ২০০০’এ (বর্ষ ২ সংখ্যা ১৪) ‘বাবার অস্থি'র সন্ধানে’ শিরোনামে এক প্রচ্ছদ প্রতিবেদন লেখেন অনল রায়হান। সেখানে তিনি সেই যুদ্ধের আরেক সাক্ষী পুলিশ কর্মকর্তা নবী চৌধুরীর সাক্ষাতকারও সন্নিবেশিত করেছিলেন। নবী তাঁকে জানিয়েছিলেন - জহির রায়হান পুলিশের এডিশনাল এসপি জিয়াউল হক লোদীর সাথে ছিলেন। তাঁদের কারো লাশই আর পাওয়া যায়নি।
জিয়াউল হক লোদীর স্ত্রী লোদী আশিয়া খানের সাথেও সাক্ষাত করেছিলেন অনল। তিনি জানিয়েছিলেন, ১৯৭২ সালের ২৯ জানুয়ারি রাতে পুলিশ হেডকোয়াটার থেকে ফোন করে জিয়াউল হক লোদীকে জানানো হয় পরদিন মিরপুরে বিহারীরা অস্ত্র সমর্পণ করবেন। তিনি যেন একটু তাড়াতাড়ি ডিউটিতে যান। এর কিছুক্ষণ পরই তাঁকে ফোন করেন জহির রায়হান। তিনিও লোদীদের সাথে বিহারী অধ্যুষিত এলাকায় যাওয়ার ইচ্ছে পোষণ করেছিলেন। পরদিন চাচাতো ভাই শাহরিয়ার কবিরসহ আরো কয়েকজন বন্ধু-স্বজনকে সাথে নিয়ে মিরপুর থানায় গিয়ে হাজির হন জহির। মিত্রবাহীনি ও পুলিশের সদস্যরা তখন অভিযানে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। প্রথমে তাঁরা সিভিলিয়ান কাউকে সাথেই নিতে চাননি। পরবর্তীতে শুধু জহির রায়হান তাঁদের সাথে যাওয়ার অনুমতি পান । তাঁর অন্য সঙ্গীরা মিরপুর থানা থেকেই ফিরে আসেন।
প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল মইনুল হোসেন চৌধুরী (অবঃ) বীরবিক্রম তাঁর ‘এক জেনারেলের নীরব সাক্ষ্যঃ’’ স্বাধীনতার প্রথম দশক’ গ্রন্থে (পৃষ্ঠার ২৬-৩৪) উল্লেখ আছে সেই দিনের কথা। তিনি লিখেছেন, ‘সেদিন বিহারিদের আক্রমনের মুখে বেঁচে যাওয়া সেনাসদস্যদের কাছ থেকে ঘটনার আদ্যোপান্ত শুনি। বিশেষ করে ডি কম্পানির অধিনায়ক হেলাল মোর্শেদ ও প্লাটুন কমান্ডার হাবিলদার ওয়াজেদ আলি মিয়া ঘটনার বিস্তারিত জানান।’ তিনি আরো লিখেছেন, ‘ওই সময় আমাদের সৈন্যদের কোনো মৃতদেহ দেখতে পাইনি। পরিস্থিতির কারণে তাৎক্ষনিকভাবে ভেতরের দিকে খোঁজাখুঁজি করাও সম্ভব হয়নি। নিহতদের মধ্যে লেফটেন্যান্ট সেলিমসহ মাত্র কয়েকজনের মৃতদেহ দিন দুয়েক পর পাওয়া যায়। পুরো এলাকা জনশূন্য করার পরও বাকিদের মৃতদেহ পাওয়া যায় নি। ৩০ জানুয়ারি রাতেই সম্ভবত বিহারিরা সেগুলো সরিয়ে ফেলে।’

জহির রায়হান প্রসংগে জেনারেল মইনুল লিখেছেন - ‘এদিকে ৩১ জানুয়ারি থেকে পত্র-পত্রিকায় সাংবাদিক ও চলচিত্র পরিচালক জহির রায়হানের নিখোঁজ হওয়ার খবর বের হতে থাকে।। কিছু লোক, সম্ভবত তার আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধব, মিরপুরে এসে তাঁর সম্পর্কে খোঁজ়খবর নেওয়ার চেষ্টা করেন। এরই মধ্যে একদিন একজন পুলিশ কর্মকর্তা, যার নাম আজ মনে নেই, সেনানিবাসে দ্বিতীয় বেঙ্গল রেজিমেন্টে আমার সাথে দেখা করতে আসেন। তিনি সৈন্যদের সাথে কথা বলার জন্য আমার অনুমতি চান। আলাপের পর তিনি আমাকে জানান, আপনাদের সংগে কথাবার্তা বলে এবং আমার তদন্তে মনে হচ্ছে জহির রায়হান সৈন্য ও পুলিশের সংগে গুলিবিনিময়ের সময় বিহারিদের গুলিতেই নিহত হয়েছেন। অবশ্য এর আগেই আমরা যখন নিজেদের সদস্যদের হতাহতের খোঁজ়খবর তথা প্রাথমিক তদন্ত শুরু করি, তখনই সৈন্যদের সঙ্গে একজন বেসামরিক বাঙালি লোক নিহত হয় বলে তথ্য বেরিয়ে আসে। ঘটনা বিশ্লেষনে বোঝা যায়, তিনিই ছিলেন জহির রায়হান।’

জহির রায়হানের আরেকটি প্রতিকৃতি
মইনুল আরো লিখেছেন - ‘জহির রায়হানের মিরপুরে যাওয়া নিয়ে অনেক ধরনের কথা প্রচলিত আছে। তবে এটা সত্যি যে, তিনি তাঁর ভাই শহীদুল্লাহ কায়সারের খোঁজেই মিরপুর যান। প্রথমিক তদন্তের সময় সাড়ে ১১ নম্বর সেকশনে মোতায়নকৃত সৈন্যদের কয়েকজন জানান, সকাল সাড়ে নয়টা বা ১০টার দিকে তারা হালকা পাতলা গড়নের একজন বেসামরিক লোককে সাড়ে ১১ ও ১২ নম্বর সেকশনের মাঝামাঝি একটি রাস্তায় একা হাঁটতে দেখেন। জহির রায়হানের ছবি দেখার পর সৈন্যদের কয়েকজন জানান, ওই রকম একজনকেই তাঁরা দেখেছিলেন। বেলা ১১টার দিকে বিহারিরা সৈন্যদের উপর আক্রমন করে। অতর্কিত এই আক্রমনে সৈন্যদের সঙ্গে তিনিও নিহত হন। তবে ঠিক কোন জায়গায় তিনি নিহত হন তা সঠিক কেউ বলতে পারেনি। ৪২ জন সেনাসদস্যদের মধ্যে তিন-চারজনের মৃতদেহ পাওয়া যায়। জহির রায়হানসহ বাকি কারোই মৃতদেহ পাওয়া যায়নি।’
জহির রায়হানের পরিবারের অধিকাংশ সদস্য আজও মনে করেন, এই ঘটনার নেপথ্যে আরো ঘটনা আছে। একই ধারনা জিয়াউল হক লোদীর মেয়ে জাহানারা হক লোদীরও। ১৯৭২ সালের ২৫ জানুয়ারী প্রেস ক্লাবে এক কনফারেন্সে জহির জানান, স্বাধীন বাংলাদেশের মন্ত্রীসভায় ঠাঁই নেয়া অনেক মন্ত্রীর মুক্তিযুদ্ধকালীন বিতর্কিত ভূমিকার প্রমাণ আছে তাঁর কাছে। মুক্তিযুদ্ধের আরো অনেক গোপন তথ্য প্রকাশের কথাও তিনি বলেছিলেন। এর মাত্র পাঁচ দিনের মাথায় তিনি গায়েব হয়ে যান। ১৯৭২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি দৈনিক বাংলা পত্রিকায় ‘জহির রায়হানের খোঁজ চলছে ... রহস্যজনক ফোন আসছে’শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে লেখা হয়, ‘বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে নিখোঁজ জহির রায়হানের অনুসন্ধানের জন্য মিরপুরে ব্যাপক তল্লাশী অব্যাহত রয়েছে।’ বঙ্গবন্ধু, রাষ্ট্রপতি আবু সাইদ ও মিত্র বাহীনির প্রধান আরোরা আলাদা ভাবে দুটি বৈঠকেও মিলিত হয়েছেন জানিয়ে প্রতিবেদনে আরো লেখা হয়, ‘...অথচ এর মধ্যেও আসছে টেলিফোনে অজ্ঞাত পরিচয় মহলের নানা ধরনের হুমকী।’

জহির রায়হান বা তাঁর অন্তর্ধান বিষয়ক আলোচনা খুব অল্প কথায় শেষ হবে না আসলে। এ নিয়ে আরো বিস্তারিত লিখতে হবে - অন্য কোনো সময়ে। আজ শুধু এটুকু জানিয়ে রাখি, ১৯৭৫’র পট পরিবর্তনের পর জহির রায়হানের পরিবারকে তাঁদের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করেছিলো জিয়াউর রহমানের সরকার। আরেক সামরিক জান্তা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ক্ষমতায় আসার পর এক সরকারি চিঠিতে বলা হয়, ‘জহির রায়হান যেহেতু ১৯৭২’র ৩০ জানুয়ারি মারা গেছেন, তাঁকে মুক্তিযুদ্ধের শহীদ বলা যাবে না।’

৬৫’র চলচ্চিত্র উৎসবে বক্তব্য রাখছেন জহির রায়হান
আরো জানতে দেখুনঃ
>> গুণীজন
>> জহির রায়হান বিহীন বাংলাদেশের ৪৩ বছর
>> স্মরণঃ জহির রায়হান
>> জহির রায়হানঃ বাংলা চলচ্চিত্রের হারিয়ে যাওয়া তারকা
বাংলা চলচ্চিত্রের হারিয়ে যাওয়া তারকা
বাংলা চলচ্চিত্রের হারিয়ে যাওয়া তারকা
বাংলা চলচ্চিত্রের হারিয়ে যাওয়া তারকা
বাংলা চলচ্চিত্রের হারিয়ে যাওয়া তারকা

২৯ জানুয়ারী ২০১৫

আজ চেখভ ও রোঁল্যার জন্মদিন

আন্তন পাভলোভিচ চেখভ
(জানুয়ারি ২৯, ১৮৬০ - জুলাই ১৫, ১৯০৪)
শুভ জন্মদিন আন্তন পাভলোভিচ চেখভ। তিনি ছিলেন একজন রুশ চিকিৎসক, গল্পকার এবং নাট্যকার। তাঁর জন্ম দক্ষিণ রাশিয়ার তাগানরোগ নামক এলাকায়।  তাঁকে বিশ্বসাহিত্যের অন্যতম সেরা ছোটগল্প লেখক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাঁর ছোটগল্পগুলো লেখক, সমালোচক সমাজে প্রভূত সমাদর অর্জন করেছে। নাট্যকার হিসেবে পেশাজীবনে চেখভ চারটি ক্ল্যাসিক রচনা করেন। সবচেয়ে বেশি সংখ্যক নাটক মঞ্চস্থ হয়েছে এমন নাট্যকারদের মাঝে শেকসপিয়রইবসেনের পাশাপাশি চেখভের নামও উল্লেখ করা হয়। ১৮৮০ থেকে ১৯০৩ সালের মধ্যে তিনি সর্বমোট ৬০০টি সাহিত্যকর্ম রচনা ও প্রকাশ করেন। শুরুতে নাট্যকার হিসেবে তিনি আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিতি পান থ্রি সিস্টারস, দ্য সীগাল এবং দ্য চেরি অরচার্ড এই তিনটি নাটকের মাধ্যমে। জার্মানিতে যক্ষা রোগে আক্রান্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়।
রোম্যাঁ রোলাঁ
(২৯ জানুয়ারি, ১৮৬৬ - ৩০ ডিসেম্বর, ১৯৪৪)

শুভ জন্মদিন রোম্যাঁ রোলাঁ। ১৯১৫ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন এই ফরাসি নাট্যকার, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, শিল্প ঐতিহাসিক ও অধ্যাত্মবিদ। শিল্পকলা ও সংগীত গবেষক হিসাবে তিনি ১৯০৩ সালে সর্বন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক নিযুক্ত হয়েছিলেন। তাঁর প্রথম উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ Vie de Beethoven (বেটোভেন-চরিত) প্রকাশিত হয় ১৯০৩ সালে। এরপর ১৯০৬ সালে মিকেলাঞ্জেলোর জীবনী ও ১৯১১ সালে তলস্তয়ের জীবনী রচনা করেছিলেন তিনি। জাঁ-ক্রিস্তফ তাঁর সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য রচনা। ১৯১০ থেকে ১৯১২ সালের মধ্যে দশ খণ্ডে প্রকাশিত এই গ্রন্থটির জন্যই তিনি নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি যুদ্ধের বিরোধিতা করেন। রোলাঁ ছিলেন একজন ভারতপ্রেমিক ও ভারততত্ত্ববিদ। তিনি মহাত্মা গান্ধী, রামকৃষ্ণ পরমহংস ও স্বামী বিবেকানন্দের জীবনী রচনা করেছিলেন।

স্মরণে অচিন্ত্য, রবার্ট ও পথিক

অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত
তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘বেদে’ প্রকাশিত হয়েছিলো ১৯২৮ সালে। একই বছর প্রকাশিত হয় প্রথম ছোট গল্পের বই ‘টুটাফাটা’। তবে পাঠক-মহলে সবচেয়ে সাড়া জাগায় তাঁর স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থ ‘কল্লোল যুগ’। এটির প্রকাশকাল ১৯৫০। ইতিমধ্যে অনেকেই বুঝে গেছেন এখানে কার কথা বলা হচ্ছে। হ্যাঁ, তিনি অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত। আজ (২৯ জানুয়ারি, ২০১৫) এই বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক ও সম্পাদকের ৩৯তম প্রয়ান দিবস । ১৯৭৬ সালের এই দিনে কোলকাতায় তাঁর মৃত্যু হয়।
অচিন্ত্যকুমারের মৃত্যুর ঠিক তেরো বছর আগে, মানে ১৯৬৩ সালের ২৯ জানুয়ারি ম্যাসাচুসেটসে ইহলোক ত্যাগ করেছিলেন মার্কিন কবি রবার্ট ফ্রষ্ট। ১৮৭৪ সালের ২৬ মার্চ সান ফ্রান্সিসকোতে জন্মেছিলেন তিনি। আর ২০১১ সালের এই দিনে ঢাকায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন কলম সৈনিক পথিক সাহা। তার হয়েছিলো মাত্র ৪৫ বছর।
রবীন্দ্রনাথ ও শরৎচন্দ্রের পরে সাহিত্যজগতে আলোড়ন সৃষ্টিকারী কল্লোল যুগের লেখকদের মধ্য অচিন্ত্যকুমার ছিলেন অন্যতম। ১৯২১ সালে প্রবাসী পত্রিকায় নীহারিকা দেবী ছদ্মনামে তাঁর প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়। ১৯২৫ সালে তিনি কল্লোল পত্রিকা প্রকাশনার দায়িত্ব নেন। বিচিত্রায়ও কিছুদিন কাজ করেন। তিনি উপন্যাস ও ছোটগল্প রচনায় বিশেষ কৃতিত্ব দেখান। কাকজ্যোৎস্না ও প্রথম কদমফুল তাঁর আরো দুটি বিখ্যাত উপন্যাস। তিনি উপন্যাসাদলে আবেগপূর্ণ ভাষায় ধর্মগুরুদের জীবনীও ) লিখেছেন। এর মধ্যে যেমন- চার খণ্ডে প্রকাশিত (১৯৫২-১৯৫৭) ‘পরমপুরুষ শ্রীরামকৃষ্ণ’ বহু বিক্রিত একটি বই।

পিতার কর্মস্থল নোয়াখালী শহরে ১৯০৩ সালের ১৯শে সেপ্টেম্বর অচিন্ত্যকুমারের জন্ম। তবে তাঁর পরিবারের আদি নিবাস ছিল বর্তমান মাদারিপুর জেলায়। বাবা রাজকুমার সেনগুপ্ত নোয়াখালী আদালতের আইনজীবী ছিলেন। সেখানেই কাটে তাঁর শৈশব, শিক্ষা জীবন শুরুর সময়। ১৯১৬ সালে বাবার মৃত্যুর পর তিনি কোলকাতায় অগ্রজ জিতেন্দ্রকুমার সেনগুপ্তের নিকট চলে যান। এরপর সাউথ সাবার্বান স্কুল থেকে মাধ্যমিক (১৯২০), সাউথ সাবার্বান কলেজ (বর্তমান আশুতোষ কলেজ) থেকে উচ্চমাধ্যমিক (১৯২২) এবং ইংরেজি সাহিত্যে অনার্সসহ স্নাতক (১৯২৪) পাস করেন। পরবর্তীতে কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর (১৯২৬) ও বিএল ডিগ্রী (১৯২৯) লাভ করেন। ১৯৩১ সালে তিনি অস্থায়ী মুন্সেফ হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন অচিন্ত্যকুমার। পর্যায়ক্রমে সাব-জজ, জেলা জজ ও ল' কমিশনের স্পেশাল অফিসার পদে উন্নীত হয়ে ১৯৬০ সালে চাকরি থেকে অবসর নেন।
বিচারবিভাগে চাকরির বদৌলতে বাংলাদেশের নানা স্থানে ঘুরে বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের সংস্পর্শে আসেন অচিন্ত্য । নিজের কবিতা, ছোট গল্প ও উপন্যাসগুলোতে তিনি নিপুণভাবে ওই পরিচিতজনদের জীবনের ছবি এঁকেছেন। সাহিত্য ও সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদানের জন্য তিনি জগত্তারিণী পুরস্কার, রবীন্দ্রস্মৃতি পুরস্কার (১৯৭৫) ও শরৎচন্দ্রস্মৃতি পুরস্কার (১৯৭৫) লাভ করেন।
রবার্ট ফ্রষ্ট
এদিকে রবার্ট ফ্রস্ট সম্পর্কে উইকিপিডিয়ায় বলা হয়েছে, তিনি ছিলেন একজন জনপ্রিয় আমেরিকান কবি। আমেরিকান কথ্যভাষা এবং গ্রামীণ জীবনের বাস্তবানুগ বর্ণনায় তাঁর মুন্সিয়ানা ছিলো অসামান্য। জীবদ্দশাতেই তিনি নানা পুরস্কারে ভূষিত হন। কবিতায় পুলিৎজার পুরস্কারই পেয়েছিলেন চারবার।
পিতার মৃত্যুর পর পরিবারের সাথে সান ফ্রান্সিসকো ছেড়ে ম্যাসাচুসেটসের লরেন্সে চলে আসেন ফ্রস্ট। তখন তাঁর বয়স এগার। ১৮৯২ খ্রিস্টাব্দে তিনি লরেন্স হাই স্কুল উত্তীর্ণ হন। এখানে পড়ার সময় কবিতা পড়া ও লেখার ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠেন। এ স্কুলের একটি সাময়িকীতে তাঁর প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়। এরপর হ্যানোভারের ডার্টমাউথ কলেজে কিছুদিন পড়াশোনা করে তিনি বাড়ি ফিরে আসেন। পড়াশুনার পাট চুকে যাওয়ার পর ফ্রস্ট মুচি থেকে শুরু করে সংবাদপত্র সম্পাদনা পর্যন্ত বিভিন্ন কাজ করে আয়-উপার্জ্জনের চেষ্টা করেছেন। তবে শেষাবধি জীবিকার জন্য তিনি শিক্ষকতাকে বেছে নেন।
১৮৯৪ সালে ফ্রস্ট নিজের কবিতা ‘মাই বাটারফ্লাই, এন এলিজি ’ বিক্রি করে দেন মাত্র ১৫ মার্কিন ডলারের বিনিময়ে। পরের বছর ইলিনর মিরিয়াম হোয়াইট নামের এক মহিলার সঙ্গে বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হন। এসময় তিনি হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিতে পড়াশুনা করছিলেন। মিরিয়াম হোয়াইট ফস্ট্রের কবি জীবনে এক অনবদ্য প্রেরণা হয়ে আবির্ভুত হন। ১৯১৫ সালে‘বয়েজ উইল’ এবং ‘নর্থ অব বোস্টন ’ নামে দুটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হলে তাঁর কবিখ্যাতি ছড়িয়ে পড়তে থাকে। ১৯২০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে যুক্তরাস্ট্রের শীর্ষস্থানীয় খ্যাতিমান কবিদের একজন হয়ে ওঠেন রবার্ট ফ্রস্ট।
পথিক সাহা
অন্যদিকে পথিক সাহা ছিলেন দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রধান প্রতিবেদক। টানা দুই বার তিনি ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। সাংবাদিকতা পেশায় আসার আগে ছাত্র আন্দোলনেও সম্পৃক্ত ছিলেন পথিক। বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের নেতা ছিলেন। সংগঠনটির ৯০ পরবর্তী ভাঙনের জন্যও তাকে দায়ী করা হয়েছিলো। তিনি ইউনিয়নের বিদ্রোহী কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। পরে অবশ্য তিনি আওয়ামী রাজনীতির সাথে যুক্ত হন। মৃত্যুকালেও তিনি আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।
অচিন্ত্য, রবার্ট ও পথিকের আত্মা শান্তি পাক, এই কামনা।

২২ জানুয়ারী ২০১৫

Women in Bangladesh

experienced expectancy | © eon's photography
আশীর্বাদ - the blessing | © eon's photography
The status of women in Bangladesh is defined by an ongoing gender equality struggle, prevalent political tides that favour restrictive Islamic patriarchal models, and woman's rights activism. The Bangladeshi women have made massive gains since the country gained its independence in 1971. The past four decades have seen increased political empowerment for women, better job prospects, improved education and the adoption of new laws to protect their rights. Now (2015) the Prime Minister of Bangladesh, the Speaker of Parliament, the Leader of the Opposition are women. However, issues like domestic violence, acid burning and rape still persist. Know more from Wikipedia - en.wikipedia.org/wiki/Women_in_Bangladesh.
The Sober Lady | © eon's photography
© eon's photography / theme theater Wizard Valley
apathetic gleam | © eon's photography
The total unpaid domestic work carried out by women in Bangladesh is equivalent to 10.75 percent of the gross domestic product (GDP) of the country, Unnayan Onneshan, an independent multidisciplinary think-tank, revealed. The organisation found this in their nation-wide survey based estimate of women domestic work in Bangladesh, first of its kind in the country and released in connection with the International Women’s Day.
পরমানন্দ - the ecstasy | © eon's photography
সহোদরা | © eon's photography
They revealed that the total unpaid work per year might be equivalent to Tk 1115914.8 million or USD 14.45 billion. The total GDP of the country was Tk 1037990 crore in the FY 2012-13. The leading research organisation estimates that the total engagement of women domestic work in Bangladesh might be equivalent to 9.3 million full-employment per year. The Unnayan Onneshan (UO) conducted the country-wide survey in seven districts of seven administrative divisions and the number of households from each district was selected using Probability Proportional to Size (PPS) method.

confidante | © eon's photography
A total of 520 women, comprising 202 from rural and 318 from urban areas, were chosen randomly and interviewed for the purpose of this pioneering research. The Unnayan Onneshan observes that the economic value of unpaid domestic work by women would have been much higher if the wages of women in Bangladesh were not comparatively low and the wage deferential between men and women was not so high. See more at - unbconnect.com/unnayan-onneshan-women/#&panel1-2

satisfied customer | © eon's photography
an ancient vision | © eon's photography
newsreel [সংবাদচিত্র]