Powered By Blogger

২৯ জানুয়ারী ২০১৫

স্মরণে অচিন্ত্য, রবার্ট ও পথিক

অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত
তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘বেদে’ প্রকাশিত হয়েছিলো ১৯২৮ সালে। একই বছর প্রকাশিত হয় প্রথম ছোট গল্পের বই ‘টুটাফাটা’। তবে পাঠক-মহলে সবচেয়ে সাড়া জাগায় তাঁর স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থ ‘কল্লোল যুগ’। এটির প্রকাশকাল ১৯৫০। ইতিমধ্যে অনেকেই বুঝে গেছেন এখানে কার কথা বলা হচ্ছে। হ্যাঁ, তিনি অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত। আজ (২৯ জানুয়ারি, ২০১৫) এই বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক ও সম্পাদকের ৩৯তম প্রয়ান দিবস । ১৯৭৬ সালের এই দিনে কোলকাতায় তাঁর মৃত্যু হয়।
অচিন্ত্যকুমারের মৃত্যুর ঠিক তেরো বছর আগে, মানে ১৯৬৩ সালের ২৯ জানুয়ারি ম্যাসাচুসেটসে ইহলোক ত্যাগ করেছিলেন মার্কিন কবি রবার্ট ফ্রষ্ট। ১৮৭৪ সালের ২৬ মার্চ সান ফ্রান্সিসকোতে জন্মেছিলেন তিনি। আর ২০১১ সালের এই দিনে ঢাকায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন কলম সৈনিক পথিক সাহা। তার হয়েছিলো মাত্র ৪৫ বছর।
রবীন্দ্রনাথ ও শরৎচন্দ্রের পরে সাহিত্যজগতে আলোড়ন সৃষ্টিকারী কল্লোল যুগের লেখকদের মধ্য অচিন্ত্যকুমার ছিলেন অন্যতম। ১৯২১ সালে প্রবাসী পত্রিকায় নীহারিকা দেবী ছদ্মনামে তাঁর প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়। ১৯২৫ সালে তিনি কল্লোল পত্রিকা প্রকাশনার দায়িত্ব নেন। বিচিত্রায়ও কিছুদিন কাজ করেন। তিনি উপন্যাস ও ছোটগল্প রচনায় বিশেষ কৃতিত্ব দেখান। কাকজ্যোৎস্না ও প্রথম কদমফুল তাঁর আরো দুটি বিখ্যাত উপন্যাস। তিনি উপন্যাসাদলে আবেগপূর্ণ ভাষায় ধর্মগুরুদের জীবনীও ) লিখেছেন। এর মধ্যে যেমন- চার খণ্ডে প্রকাশিত (১৯৫২-১৯৫৭) ‘পরমপুরুষ শ্রীরামকৃষ্ণ’ বহু বিক্রিত একটি বই।

পিতার কর্মস্থল নোয়াখালী শহরে ১৯০৩ সালের ১৯শে সেপ্টেম্বর অচিন্ত্যকুমারের জন্ম। তবে তাঁর পরিবারের আদি নিবাস ছিল বর্তমান মাদারিপুর জেলায়। বাবা রাজকুমার সেনগুপ্ত নোয়াখালী আদালতের আইনজীবী ছিলেন। সেখানেই কাটে তাঁর শৈশব, শিক্ষা জীবন শুরুর সময়। ১৯১৬ সালে বাবার মৃত্যুর পর তিনি কোলকাতায় অগ্রজ জিতেন্দ্রকুমার সেনগুপ্তের নিকট চলে যান। এরপর সাউথ সাবার্বান স্কুল থেকে মাধ্যমিক (১৯২০), সাউথ সাবার্বান কলেজ (বর্তমান আশুতোষ কলেজ) থেকে উচ্চমাধ্যমিক (১৯২২) এবং ইংরেজি সাহিত্যে অনার্সসহ স্নাতক (১৯২৪) পাস করেন। পরবর্তীতে কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর (১৯২৬) ও বিএল ডিগ্রী (১৯২৯) লাভ করেন। ১৯৩১ সালে তিনি অস্থায়ী মুন্সেফ হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন অচিন্ত্যকুমার। পর্যায়ক্রমে সাব-জজ, জেলা জজ ও ল' কমিশনের স্পেশাল অফিসার পদে উন্নীত হয়ে ১৯৬০ সালে চাকরি থেকে অবসর নেন।
বিচারবিভাগে চাকরির বদৌলতে বাংলাদেশের নানা স্থানে ঘুরে বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের সংস্পর্শে আসেন অচিন্ত্য । নিজের কবিতা, ছোট গল্প ও উপন্যাসগুলোতে তিনি নিপুণভাবে ওই পরিচিতজনদের জীবনের ছবি এঁকেছেন। সাহিত্য ও সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদানের জন্য তিনি জগত্তারিণী পুরস্কার, রবীন্দ্রস্মৃতি পুরস্কার (১৯৭৫) ও শরৎচন্দ্রস্মৃতি পুরস্কার (১৯৭৫) লাভ করেন।
রবার্ট ফ্রষ্ট
এদিকে রবার্ট ফ্রস্ট সম্পর্কে উইকিপিডিয়ায় বলা হয়েছে, তিনি ছিলেন একজন জনপ্রিয় আমেরিকান কবি। আমেরিকান কথ্যভাষা এবং গ্রামীণ জীবনের বাস্তবানুগ বর্ণনায় তাঁর মুন্সিয়ানা ছিলো অসামান্য। জীবদ্দশাতেই তিনি নানা পুরস্কারে ভূষিত হন। কবিতায় পুলিৎজার পুরস্কারই পেয়েছিলেন চারবার।
পিতার মৃত্যুর পর পরিবারের সাথে সান ফ্রান্সিসকো ছেড়ে ম্যাসাচুসেটসের লরেন্সে চলে আসেন ফ্রস্ট। তখন তাঁর বয়স এগার। ১৮৯২ খ্রিস্টাব্দে তিনি লরেন্স হাই স্কুল উত্তীর্ণ হন। এখানে পড়ার সময় কবিতা পড়া ও লেখার ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠেন। এ স্কুলের একটি সাময়িকীতে তাঁর প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়। এরপর হ্যানোভারের ডার্টমাউথ কলেজে কিছুদিন পড়াশোনা করে তিনি বাড়ি ফিরে আসেন। পড়াশুনার পাট চুকে যাওয়ার পর ফ্রস্ট মুচি থেকে শুরু করে সংবাদপত্র সম্পাদনা পর্যন্ত বিভিন্ন কাজ করে আয়-উপার্জ্জনের চেষ্টা করেছেন। তবে শেষাবধি জীবিকার জন্য তিনি শিক্ষকতাকে বেছে নেন।
১৮৯৪ সালে ফ্রস্ট নিজের কবিতা ‘মাই বাটারফ্লাই, এন এলিজি ’ বিক্রি করে দেন মাত্র ১৫ মার্কিন ডলারের বিনিময়ে। পরের বছর ইলিনর মিরিয়াম হোয়াইট নামের এক মহিলার সঙ্গে বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হন। এসময় তিনি হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিতে পড়াশুনা করছিলেন। মিরিয়াম হোয়াইট ফস্ট্রের কবি জীবনে এক অনবদ্য প্রেরণা হয়ে আবির্ভুত হন। ১৯১৫ সালে‘বয়েজ উইল’ এবং ‘নর্থ অব বোস্টন ’ নামে দুটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হলে তাঁর কবিখ্যাতি ছড়িয়ে পড়তে থাকে। ১৯২০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে যুক্তরাস্ট্রের শীর্ষস্থানীয় খ্যাতিমান কবিদের একজন হয়ে ওঠেন রবার্ট ফ্রস্ট।
পথিক সাহা
অন্যদিকে পথিক সাহা ছিলেন দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রধান প্রতিবেদক। টানা দুই বার তিনি ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। সাংবাদিকতা পেশায় আসার আগে ছাত্র আন্দোলনেও সম্পৃক্ত ছিলেন পথিক। বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের নেতা ছিলেন। সংগঠনটির ৯০ পরবর্তী ভাঙনের জন্যও তাকে দায়ী করা হয়েছিলো। তিনি ইউনিয়নের বিদ্রোহী কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। পরে অবশ্য তিনি আওয়ামী রাজনীতির সাথে যুক্ত হন। মৃত্যুকালেও তিনি আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।
অচিন্ত্য, রবার্ট ও পথিকের আত্মা শান্তি পাক, এই কামনা।

কোন মন্তব্য নেই:

newsreel [সংবাদচিত্র]