Powered By Blogger
লিটন বাশার লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
লিটন বাশার লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

২৯ জুন ২০১৭

লিটন বাশার : এক অদম্য চেতনা

রাজপথে লিটন বাশার
যাদের হাত ধরে সাংবাদিকতা শুরু করেছিলাম ─ তাদেরই একজন লিটন বাশার। তিনিও অসময়ে চলে গেলেন! ঈদের পরদিন দুপুর অবধি নিদ্রাবিলাসের রেওয়াজ বদলানো হয়নি বলেই দূরালাপনীর ঘুম ভাঙানিয়া তলবে পেলাম খবরটা। জানালেন জাফর ভাই, মানে সাংবাদিক আবু জাফর সাইফুদ্দিন। তার সাথে কথা শেষ করার একটু পরই স্মরণে এলো অতীতের এক বিষাদগ্রস্থ সকাল, ঠিক সাত বছর একদিন আগের। সেদিনও জাফর ভাইয়ের কথাযন্ত্রের ডাকে জেগে উঠেছিলাম, পেয়েছিলাম সাংবাদিক এসএম সোহাগের মৃত্যু সংবাদ। সেই ২০১০ থেকে এই ২০১৭; এর মধ্যে আমরা, মানে আমি আর জাফর ভাই বহুবার পরস্পরকে খুঁজেছি শুধুমাত্র সহযোদ্ধাদের মৃত্যুর সংবাদ দিতে। 
লিটন বাশার ও এসএম সোহাগ, দু’জনেই ছিলেন দক্ষিণাঞ্চলের কিংবদন্তীতূল্য আরেক প্রয়াত সাংবাদিক মাইনুল হাসানের স্নেহধন্য; কাছের মানুষ। আবার জাফর ভাই ছিলেন তাদের একান্ত আপন। সৌভাগ্যজনকভাবে আমি তাদের প্রত্যেকের ভালোবাসা পেয়েছি, সাথে অকৃত্রিম আস্কারাও। দক্ষিণাঞ্চল কেন্দ্রীক যে কোনো সমস্যায় উদ্ধারকর্তা হিসেবে এ নামগুলোই সর্বাগ্রে মাথায় এসেছে বছরের পর বছর।
বরিশালের আঞ্চলিক দৈনিক আজকের পরিবর্তন পত্রিকায় শিক্ষানবিশ রিপোর্টার পদে যোগদানের মধ্য দিয়ে ২০০৪ সালে সাংবাদিকতা এসেছিলাম। এর আগে জীবনের প্রথম সাক্ষাতকারে যে তিনজন মানুষের মুখোমুখি হতে হয়; তারা হলেন পত্রিকাটির তৎকালীন মালিক ও সম্পাদক সৈয়দ দুলাল, বার্তা সম্পাদক স্বপন খন্দকার এবং যুগ্ম-বার্তা সম্পাদক লিটন বাশার। তারা সেদিন পছন্দ না করলে আমার সাংবাদিকতা শুরুর পথ হয়ত এতটা সুগম হতো না। কারণ পরবর্তীতে তাদের তিনজনকে-ই দীর্ঘকাল প্রত্যক্ষ শিক্ষক ও অভিভাবক হিসেবে পেয়েছি।
সচ্ছ ও স্পষ্টভাষী লিটন’দা কে দেখেই শিখেছিলাম ‘আক্রমনাত্বক’ (Agressive) সাংবাদিকতা। ভয় শব্দটা সম্ভবত তার অভিধানেই ছিলো না। কাউকে ছাড় দিয়ে কথা বলতে দেখিনি কখনো, নিজের বন্ধু-স্বজনদেরও না। সততার শক্তিতে বলীয়ান এই ঠোঁটকাটা স্বভাবের কারণে তার বন্ধু, শত্রু - দুটোই হয়েছে ঢের। তবে পরম দুর্জনও তাকে অশ্রদ্ধা বা অসম্মান করতে পারেনি কখনো। 
স্মৃতিবহুল এক কোরবানীর ঈদ কাটিয়েছিলাম দাদার বুখাইনগরের গ্রামের বাড়িতে। প্রায় এক যুগ আগে, ২০০৬ এর জানুয়ারিতে। মূলত গিয়েছিলাম সাপ্তাহিক ২০০০ ─ এর এ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে, চরমোনাইয়ের তৎকালীন পীর মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মাদ ফজলুল করীমের সাক্ষাতকার নিতে। মূলত হুজুরের বড় ছেলে, চরমোনাই ইউনিয়ন পরিষদের সেই সময়ের চেয়ারম্যান, বর্তমান পীর মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীমের সাথে লিটন’দার সখ্যতার সুবাদে আমি সাক্ষাতের সুযোগ পাই। ঈদের দিন সন্ধ্যায় আমি দাদার বাড়িতে পৌঁছাই। আগে থেকেই সব ব্যবস্থা করে রেখেছিলেন তিনি। ঘন কুয়াশার সেই রাতে দু’জনে মোটরসাইকেলে চেপে চরমোনাই দরবার শরীফে পৌঁছাই। দরবারের হুজরাতে ঢুকে পীর সাহেবের সাথে কুশল বিনিময়ের পর দাদা বেশ প্রশংসাত্মক ভঙ্গিতে আমায় পরিচয় দিয়ে জানান, আজ তার কোনো জিজ্ঞাসা নেই, সব প্রশ্নই আমার। 

এরপর প্রায় দেড় ঘন্টা ধরে ফজলুল করীম আমার বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। পুরোটা সময় পাশেই ছিলেন লিটন’দা। মাঝে মাঝে চোখে চোখ রেখে সাহস জাগানিয়া হাসি দিচ্ছিলেন। বের হয়ে বললেন ─ ‘তোমার আলাপের স্টাইল (ঢঙ) আমার ভাল্লাগছে।’ তার এই সামান্য প্রশংসা তখন আমার আত্মবিশ্বাস যে কতটা বাড়িয়েছিলো তা আসলে এখন খুব ভালো করে টের পাচ্ছি। হুজরা থেকে বের হওয়ার পর মাংস দিয়ে রুটি খেতে খেতে বর্তমান পীর রেজাউল করীমেরও একটি সাক্ষাতকার নেই। সেবার দেড় লাখ টাকা দিয়ে বরিশালের হাটে ওঠা সবচেয়ে বড় গরুটি কিনে কোরবানী দিয়েছিলো পীর পরিবার। সেটির মাংস আর চালের রুটি দিয়েই আমাদের আপ্যায়িত করা হয়।
সেই রাতে আর শহরে ফিরতে দেননি লিটন’দা। ফের বাড়িতে নিয়ে গেলেন। এর আগে সন্ধ্যায়-ই পরিচয় হয়েছিলো তার তিন ভাইয়ের সাথে। এর মধ্যে রিয়াদ ভাইয়ের (রিয়াদ আহমেদ) সাথে খুব একটা যোগাযোগ না থাকলেও তার চেহারার সাথে দাদার চেহারার অদ্ভুত মিল থাকার কথা আজও ভুলিনি। ইলিয়াস (আহমেদ ইলিয়াস) আর ইমনের (ইশতিয়াক ইমন) সাথে দুরত্বটা কমে গিয়েছিলো ফেসবুকের সুবাদে। লিটন’দার মতো তাদের সাথে কথা, এমনকী সাক্ষাতও হয়েছে মাঝে মাঝে। ভাইদের মধ্যে ইমন-ই শুধু অগ্রজকে অনুসরণ করেছেন, মানে সাংবাদিকতায় এসেছেন। দাদার দেখাদেখি আমিও তাকে ‘ছোট হুজুর’ ─ নামে ডেকেছি দীর্ঘকাল। তাদের বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা, পেশায় ছিলেন শিক্ষক। নামটি মনে না এলেও তার সরল হাস্যোজ্জল ব্যক্তিত্ব স্মরণে আছে বেশ। দাদার মায়ের হাতের রান্নার স্বাদও জিভে লেগে আছে। আহারে, প্রিয়পুত্রের প্রয়াণে এখন তাদের বুকে যে হাহাকারের দামামা বাজছে ─ তা শোনার সাহস আছে কার?
পীরের সেই সাক্ষাতকার জমা দেয়ার ‘ডেডলাইন মিস’─জনিত কারণে মুঠোফোন বন্ধ করে আমি যখন ফেরারী, পত্রিকার সম্পাদক গোলাম মর্তুজাকে আমায় হন্যে হয়ে খুঁজছেন; তখনও লিটন’দা-ই তাকে আমার বাসার ল্যান্ডফোন নম্বর দিয়ে আমাকে ধরিয়ে দিয়েছিলেন। পরে সেই সাক্ষাতকারসহ প্রচ্ছদ প্রতিবেদন হিসেবে প্রকাশিত হয় ‘চরমোনাই পীরকাহীনি’। প্রতিবেদন জুড়ে পীরের নানা অনাচারের ফিরিস্তি থাকায় ফের মহাবিপত্তি ঘটে । পীরের রাজনৈতিক দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ৬৪ জেলায় মানহানির মামলা করার পাশাপাশি অব্যাহত হামলার হুমকী দিয়ে এক ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরী করে। শুধু আমার নয়, লিটন’দার ওপরও তারা ক্ষিপ্ত হন। তখনও তিনি আমার পাশ থেকে সরে যাননি। সব সামলে নেয়ার আশ্বাস দিয়ে প্রতিনিয়ত সাহস জুগিয়েছেন।
গত বছরের ছবি
একই বছরে, অর্থাৎ ২০০৬ সালে আজকের পরিবর্তন পত্রিকায় ‘পুরানো বরিশাল’ শিরোনামে এক ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সুশান্ত ঘোষ, নজরুল বিশ্বাস আর আমার সেই যৌথ কাজ চলাকালে লিটন’দা দৈনিক ইত্তেফাকে বরিশালের পুরানো বাড়িগুলো নিয়ে একটি সিরিজ শুরু করেন। তখন তিনি পরিবর্তনের সাথেও সংযুক্ত ছিলেন। আমাদের পরিকল্পনা ছিলো দুটি সিরিজের সমন্বয়ের পাশাপাশি আরো কিছু তথ্য-উপাত্ত সংযুক্ত করে একটি গবেষণাগ্রন্থ প্রকাশ। পরবর্তীতে নানা কারণে সে উদ্যোগ আর হালে পানি পায়নি।
দক্ষিণের প্রতিটি জনপদে চষে বেড়িয়েছেন লিটন বাশার। জন্ম দিয়েছেন অজস্র সাড়া জাগানিয়া প্রতিবেদন। তবে তার উত্থান দ্বীপজেলা ভোলা থেকে। এরপর চলে গিয়েছিলেন ঢাকায়। পরে ফের বরিশালে এসে থিতু হন। তার হাত ধরেই বরিশাল, তথা বাঙলার মফস্বল সাংবাদিকতায় ঐক্য ও সম্প্রীতির এক নতুন অধ্যায় শুরু হয়। 

গত দশকের শেষের দিকে ঢাকায় চলে আসার পরও দাদার সাথে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়নি আমার। বরং যোগাযোগটা একটু বেশীই ছিলো। পুরানো পল্টনের রয়েল হোটেলের নাম, মালিকানা বদলে গেছে বহুদিন আগে। নতুন নামটি কিছুতেই মনে করতে পারলাম না এই মুহুর্তে। তবে খুব মনে পড়ছে ২০০৮-০৯ সালে এই হোটেলে কাটানো এক রাতের গল্প। পঞ্চম তলার কোনো এক রূমে লিটন’দা এবঙ তার তিন বন্ধুর রাতভর আড্ডা শেষে খুব সকালে যখন বের হয়ে আসছি, দাদা তখন হাতে দুই হাজার টাকা গুজে দিয়ে বললেন, ‘এইটা রাখ।’ আমি ইতস্তত করে টাকাটা ফেরত দেয়ার চেষ্টা করতেই তিনি ধমক দিয়ে বললেন, ‘ঢাকায় রিপোর্টার-গো শুরুর বেতন কেমন তা আমার জানা আছে। ঠিকঠাক দেয় কয় প্রতিষ্ঠান, তা’ও।’ ছোট্ট করে ‘থ্যাঙ্ক-ইউ’ বলে আমি দীর্ঘশ্বাস চেপে বেড়িয়ে গিয়েছিলাম। রাতে অবশ্য বহু বুদ্ধি-পরামর্শ দিয়ে দাদা বলেছিলেন, ‘লেগে থাকলে দুই বছরের মধ্যে তোর বেতন চারগুণ হয়ে যাবে।’ সত্যি, পরে হয়েছিলোও তা-ই ।

আমি সংসদ সাংবাদিকতা শুরুর পর দাদা বেশ খুশি হয়েছিলেন। সেই সময়ে, মানে ২০০৯-১১ সালে মাঝে মাঝে সংসদের সাংবাদিক লাউঞ্জে ফোন করে নিজের পরিচয় গোপন করে আমাকে চাইতেন। কণ্ঠ বদলে মজা করতেন। প্রতিবারই তাকে চিনে ফেলার পর শিশুদের মতো হাসতেন। কখনো আবার জানতে চাইতেন লাউঞ্জে এখন কোন কোন সাংবাদিক আছেন। পরিচিত কেউ আছে শুনলে তাদেরও ডেকে কথা বলতেন। কাজী শাহেদ, উত্তম চক্রবর্তী, সজল জাহিদ, উম্মুল ওয়ারা সুইটিসহ ঢাকার অনেক সিনিয়র সাংবাদিকদের সাথে তার সখ্যতার হাল দেখে প্রথমে অবাক হয়েছিলাম। পরে অবশ্য জেনেছি ঢাকায় দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকায় কাজ করার সময়েও পলিটিক্যাল রিপোর্টার (আওয়ামী লীগ বিট) হিসেবে লিটন’দা ছিলেন সবার প্রিয় সহযোদ্ধা।  

দাদার সাথে সর্বশেষ দেখা হয় ২০১৫ সালে, বরিশালে। প্রেসক্লাবের নির্বাচনের দিন বিকেলে। তখনও তিনি ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক। সেখানেই দেখা হয়। পরে তার সাথে কথা বলতে বলতে আগরপুর রোডে থেকে বেড়িয়ে সদর রোডের হাবীব ভবনে ইত্তেফাক অফিসে গেলাম। বেশ কিছু সময় ধরে আড্ডা দিলাম। প্রায় পুরোটা সময় আমার প্রাতিষ্ঠানিক সাংবাদিকতা ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে তিনি আক্ষেপ প্রকাশ করলেন। তবে ফেরার আগে উৎসাহ দিলেন চলচ্চিত্রের কাজেও। বললেন, ‘এইডাও আবার ছাইড়া দিও না।’ এরপর দুয়েকবার ফোন ও ফেসবুকে আলাপ হয়েছে; কিন্তু সাক্ষাত হয়নি আর। তবে ‍নিয়মিত তার লেখা সংবাদ ও কলাম পড়ে বুঝতাম, তিনি আজও খুব একটা বদলে যাননি। প্রেসক্লাবের সর্বশেষ নির্বাচনে সভাপতি পদে দাঁড়িয়েছিলেন। প্যানেল জিতলেও তিনি হেরে যান। তাকে যদ্দুর জানি, এ ঘটনায় কষ্ট পেলেও কাউকে বুঝতে দেয়ার মানুষটি তিনি নন। তাই যে কোনো সাংবাদিকের জন্য নির্দ্বিধায় পথে নামার অভ্যাসও তার বদলায়নি আমৃত্যু। 

অতি-সাম্প্রতিক ছবি 
মৃত্যুর মাত্র দু’দিন আগের এক লেখায় লিটন বাশার বলেছেন ─ “বিবেকের দায় এড়াতে নিজের শূন্য পকেটেও প্রিয় সহকর্মী কিংবা প্রয়াত বন্ধুদের এতিম সন্তানের মুখে হাসি ফুটাতে শেষ রোজায় দিন-রাত দৌড়ঝাঁপ করে আমি এখন ক্লান্ত। যেটা বুঝলাম তাতে আপনি যদি সকলের আবদার পূরণ করতে চান, সবার মুখে হাসি ফুটাতে চান তবে আপনার মুখের হাসি অটুট থাকা দুরূহ ব্যাপার। আর আমাদের মতো খেটে খাওয়া মানুষ হয়ে যদি ‘ঈদ’ নামের এক মহাসাগর পাড়ি দেওয়ার কোনো কঠিন বাস্তবতা আপনার সামনে হাজির হয় তবে হাসি তো ম্লান হবেই।” বাস্তবতার চাপ প্রসঙ্গে এমন নির্লিপ্ত বয়ান সম্ভবত শুধু তার পক্ষেই দেয়া সম্ভব। তিনি ছিলেন এক দুর্দান্ত রসিক, খাঁটি প্রতিবাদী, রাজপথের সাহসী প্রাণ; একইসঙ্গে সাহিত্য অনুরাগী, ইতিহাস সচেতন, উদ্যমী পরোপকারী, নীতিবান সংগঠক, উদারমনা শিক্ষক এবং সর্বোপরী একজন আপোসহীন সাংবাদিক। জানি না কত জন বুঝবে কি হারালো বরিশাল বা কি হারিয়েছে বাংলাদেশ।

দাদার পুত্র শ্রেষ্ঠ’র বয়স মাত্র চার বছর। তার নিজ হাতে গড়া পত্রিকা দৈনিক দখিনের মুখ পত্রিকার বয়সও সম্ভবত বছর দেড়েক। তার এই দুই সন্তানের ভবিষ্যত পথ চলা সুগমের দায়িত্ব এখন সকলের। মনে রাখবেন, লিটন বাশার কোনো সাধারণ ব্যক্তি নন; তিনি এক অদম্য চেতনা। একদিন শুধু বরিশাল নয়, সারাদেশের সাংবাদিকরা তাকে ধারণ করবেন; এটা-ই প্রত্যাশা। 
প্রয়াত বন্ধু-স্বজনদের তালিকা ক্রমশ লম্বা হচ্ছে, ইদানীং একটু দ্রুতই। প্রায়শই ভাবি তাদের এলিজি লেখার জন্যই হয়ত এখনো বেঁচে আছি আমি। যদিও যমের সাথে পাল্লা দিয়ে কুলিয়ে উঠতে পারছে না শোকার্ত মন। একজনকে নিয়ে লেখা শেষ না করতেই তিনি আরো তিনজনকে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। গত ১৫ মে চলচ্চিত্র নির্মাতা রাসেল আহমেদ, ১০ জুন আলোকচিত্রী হানের পর ২৭ জুন লিটন বাশার। একইদিন রাতে আবার সংগীতজ্ঞ সুধীন দাশও! হে মহান আজরাইল, দয়া করে এবার একটু ধীরে চলেন।
“আপনার আকস্মিক মৃত্যু আমাদের ক্ষমা চাওয়ার সুযোগটি পর্যন্ত দিলো না। তবুও প্রত্যাশা আপনি নিশ্চয়ই আমাদের মতো অনুজদের ক্ষমা করবেন।” ─ গত ফেব্রুয়ারিতে মীর মনিরুজ্জামানের মৃত্যুর পর এক লেখায় এ কথাগুলো বলেছিলেন সদ্য প্রয়াত অগ্রজ লিটন বাশার। সেই কথাগুলো-ই আজ তাকে উদ্দেশ্য করে বলতে হচ্ছে। আরো কত প্রিয়মুখ ছবি হয়ে যাবে; কত দয়িতের সাথে আর কথা হবে না কোনো দিন! আর এ সত্য বদলাতে পারবে না কেউ। অগ্রগামী বন্ধু-স্বজনদের তাই অভিনন্দন। আশারাখি দেখা হবে, নবজন্মে।

অবিশেষ
পরম শ্রদ্ধায় রাসেল স্মরণ
চিন্তা-কর্মে, স্মৃতির মর্মে অমর মনির
newsreel [সংবাদচিত্র]