Powered By Blogger

৩১ জুলাই ২০১৯

সাম্প্রতিক দিনলিপি

© ঈয়ন

দেহের নদে দৌড়ে বেড়ায় বুভুক্ষু শুশুক

হিজলগন্ধা মাতাল সন্ধ্যায়— অরণ্যের মধ্যরাতসম নিস্তব্ধতা ঘনিয়ে আসে স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রে পরিণত হওয়া নগরে। শালুক দোলানো হাওয়ার কাঁধে মাথা রেখে, মৃত নক্ষত্রের মতো ঘুমিয়ে পড়ে —প্রতিটি ব্যর্থ প্রণয়ের অব্যর্থ নিরাশা। কায়মনোবাক্যে বাঁচার প্রত্যয়ে আবারও প্রেম খোঁজে দুরুদুরু বুক; আর— দেহের নদে দৌড়ে বেড়ায় বুভুক্ষু শুশুক। যারে পোষ মানাতে পারে শুধু কলাবতীর রাঙা ঠোঁটের চাবুক। [৩১ জুলাই ২০১৯ / মিরপুর-ঢাকা।]

হিতাকাঙ্ক্ষা

আর্মেনিয়ান বাঁশির মতো
বিরহী স্নায়ুর মরুদ্যানে—
ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেওয়া
যে প্রাণবন্ত জোয়ান যাদুকর
নিগূঢ় খেয়ালের মতো নাচে
দৃঢ় ক্যানভাসে ক্যানভাসে,
মায়ারঙা নিখাদ প্রণয় এঁকে
তাঁর অবিদিত আমুদে বুকে
ডুবে যায় তৃষ্ণার্ত রাধিকা;
আহা কী কোমল প্রখর চুমুক
রমণীয় ভরাট চিবুকের ঢালে
আবারো ফিরলে তৃপ্তির টোল
মনমরা বিফল অতীত ভুলে
—প্রিয় প্রাক্তনও সুখে থাকুক
[৩০ জুলাই’১৯ / মিরপুর-ঢাকা।]

Journey to hell

Sometimes it seems
Life is pretty cheap
Although too deep
Like lover’s last kiss
Maybe it's a bad trip
But not in God's grip
I'm competing Devils
As an unmanned ship
[28 July 2019 / Mirpur - Dhaka.]

রোদন

বৃক্ষহীন পাথুরে উপত্যকায় বিকশিত
জন্মান্ধ কবির মাতাল মাদলের তালে
কেঁপে কেঁপে কেঁদে উঠলে নদী,
—সহস্র সেতার হয়ে বাজে
দুনিয়ার শেষ জলদস্যু মন;
আর ঠিক তখনই কোথাও
উদাসী সুরের বরষায়—
পলির মতো ভেসে যায় কথা,
নৈঃশব্দের বনে উড়ে যাওয়া
নামহীন রাতপাখির বুকেও
—খা খা করে ওঠে নীরব ক্রন্দন।..
[২৬ জুলাই’১৯ / মিরপুর-ঢাকা।]

উনপাঁজুরে

মনীষার একাংশে তপ্ত মরুভূমি
আর বাকিটায় শীতল জল নিয়ে
দাঁড়িয়ে থাকা অমসৃণ পাহাড়—
জীবনের সব মেঘ জমিয়ে রাখে
—তাঁর নিরস নির্নিমেষ চোখে;
যা বরষা হয়ে ঝরেনি কোনোদিন
অরণ্যের সাথে দেখা না হওয়ার আক্ষেপে।
[২৫ জুলাই’১৯ / মিরপুর-ঢাকা।]

© শ্যামল শিশির

২৮ জুলাই ২০১৯

পিতৃহারা যে কান্না থামেনি আজও

খন্দকার খলিলুর রহমান
ছবির মানুষটির নাম খন্দকার খলিলুর রহমান। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম জনপদ, তথা এককালের শিল্প-নগরী খুলনার শ্রমিক আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা। বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার চাখার ইউনিয়নের বলহার গ্রামের খন্দকার বাড়িতে তার শেকড়। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে সক্রিয় ছিলেন খুলনার অবাঙালি বিহারি অধ্যুষিত খালিশপুর শিল্প এলাকায়। সদ্য স্বাধীন দেশে নূন্যতম মজুরী নির্ধারণে তার তৎপরতা ছিলো শ্রমিক প্রতিনিধির ভূমিকায়। রাজনৈতিক কারণে, বিশেষত পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে জেল-জুলুম ছিলো তার নিত্যসঙ্গী। তবু বারবার রাজপথে ফিরেছেন, থেকেছেন। ক্যান্সারের মতো মরণব্যাধি শরীরে নিয়েও জীবনের শেষ অবধি অন্যায়, অনাচারের প্রতিবাদ করে গেছেন।
সুফিজমে আকৃষ্ট খলিল ছিলেন সঙ্গীতপ্রেমী। আবার খেলাধূলাও পছন্দ করতেন খুব। বহুদিন ফর্দ নিয়ে বাজারের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে কলোনীর শিশুদের মার্বেল খেলতে দেখে বাড়ির কথা বেমালুম ভুলে গিয়েছেন। পরে তাকে খুঁজতে গিয়ে দেখা গেছে তিনি তুমুল উৎসাহে মার্বেল খেলছেন। আজও তার আরো অনেক গল্প শোনা যায়, একের পর এক মিল বন্ধ হয়ে জৌলুস হারানো সেই শিল্প এলাকায়।
সেবার শ্রমিকদের ফরিদপুর আর নোয়াখালী গ্রুপের মধ্যে তুমুল গণ্ডগোল, মারামারির জেরে দুপক্ষের প্রায় আড়াইশ শ্রমিক গ্রেফতার হন। তাদের নেতা হিসেবে গ্রেফতার হন খলিলও। এর আগে দু’পক্ষকে ঠেকাতে গিয়ে তার মাথা ফেঁটে যায়। এমন অবস্থায়ও তিনি বউয়ের সব গয়না বিক্রি করে সবার জামিনের ব্যবস্থা করেন। কারান্তরীণ শ্রমিকেরা তখন কথা দিয়েছিলেন, পরবর্তী মাসের বেতন থেকে চাঁদা দিয়ে তারা এই গয়না কিনে দেবেন। কিন্তু তা আর তারা করেননি। যারই জেরে আজও ফরিদপুর আর নোয়াখালীর মানুষদের বিশ্বাস করতে চান না তার বিধবা স্ত্রী রশিদা খানম মুক্তা। ঠিক ৩১ বছর (২০১৯) আগের এই দিনে (২৮ জুলাই) তিনি নিজের স্বামীকে হারিয়ে ছিলেন।

সেদিন বরিশাল থেকে খুলনার পথে ছুটতে ছুটতে দেখেছি কাঁদছে আমার মা। তার সেই পিতৃহারা কান্না আজও থামছে না। বহু বছর পর একইদিনে দেহত্যাগ করেন আমার আরেক প্রিয়জন আহমদ ছফা। নানা এবঙ তিনি একই বয়সী ছিলেন বোধকরি।
newsreel [সংবাদচিত্র]