Powered By Blogger
খুলনা লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
খুলনা লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

২৮ জুলাই ২০১৯

পিতৃহারা যে কান্না থামেনি আজও

খন্দকার খলিলুর রহমান
ছবির মানুষটির নাম খন্দকার খলিলুর রহমান। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম জনপদ, তথা এককালের শিল্প-নগরী খুলনার শ্রমিক আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা। বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার চাখার ইউনিয়নের বলহার গ্রামের খন্দকার বাড়িতে তার শেকড়। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে সক্রিয় ছিলেন খুলনার অবাঙালি বিহারি অধ্যুষিত খালিশপুর শিল্প এলাকায়। সদ্য স্বাধীন দেশে নূন্যতম মজুরী নির্ধারণে তার তৎপরতা ছিলো শ্রমিক প্রতিনিধির ভূমিকায়। রাজনৈতিক কারণে, বিশেষত পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে জেল-জুলুম ছিলো তার নিত্যসঙ্গী। তবু বারবার রাজপথে ফিরেছেন, থেকেছেন। ক্যান্সারের মতো মরণব্যাধি শরীরে নিয়েও জীবনের শেষ অবধি অন্যায়, অনাচারের প্রতিবাদ করে গেছেন।
সুফিজমে আকৃষ্ট খলিল ছিলেন সঙ্গীতপ্রেমী। আবার খেলাধূলাও পছন্দ করতেন খুব। বহুদিন ফর্দ নিয়ে বাজারের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে কলোনীর শিশুদের মার্বেল খেলতে দেখে বাড়ির কথা বেমালুম ভুলে গিয়েছেন। পরে তাকে খুঁজতে গিয়ে দেখা গেছে তিনি তুমুল উৎসাহে মার্বেল খেলছেন। আজও তার আরো অনেক গল্প শোনা যায়, একের পর এক মিল বন্ধ হয়ে জৌলুস হারানো সেই শিল্প এলাকায়।
সেবার শ্রমিকদের ফরিদপুর আর নোয়াখালী গ্রুপের মধ্যে তুমুল গণ্ডগোল, মারামারির জেরে দুপক্ষের প্রায় আড়াইশ শ্রমিক গ্রেফতার হন। তাদের নেতা হিসেবে গ্রেফতার হন খলিলও। এর আগে দু’পক্ষকে ঠেকাতে গিয়ে তার মাথা ফেঁটে যায়। এমন অবস্থায়ও তিনি বউয়ের সব গয়না বিক্রি করে সবার জামিনের ব্যবস্থা করেন। কারান্তরীণ শ্রমিকেরা তখন কথা দিয়েছিলেন, পরবর্তী মাসের বেতন থেকে চাঁদা দিয়ে তারা এই গয়না কিনে দেবেন। কিন্তু তা আর তারা করেননি। যারই জেরে আজও ফরিদপুর আর নোয়াখালীর মানুষদের বিশ্বাস করতে চান না তার বিধবা স্ত্রী রশিদা খানম মুক্তা। ঠিক ৩১ বছর (২০১৯) আগের এই দিনে (২৮ জুলাই) তিনি নিজের স্বামীকে হারিয়ে ছিলেন।

সেদিন বরিশাল থেকে খুলনার পথে ছুটতে ছুটতে দেখেছি কাঁদছে আমার মা। তার সেই পিতৃহারা কান্না আজও থামছে না। বহু বছর পর একইদিনে দেহত্যাগ করেন আমার আরেক প্রিয়জন আহমদ ছফা। নানা এবঙ তিনি একই বয়সী ছিলেন বোধকরি।
newsreel [সংবাদচিত্র]