Powered By Blogger

২০ মার্চ ২০১৭

কথাবলি নির্বচন

একুশে বইমেলা’১৭ চলাকালে কথাবলি ডটকম প্রকাশিত
 সাক্ষাতকারটি ব্লগ পাঠকদের জন্য সংরক্ষিত রইলো
[ঈয়ন। মূলত একজন আপাদমস্তক কবি। পেশায় সাংবাদিক, চিত্রগ্রাহক ও প্রকাশক। দাপ্তরিক নাম শরীফ খিয়াম আহমেদ। জন্মেছেন খুলনায়। শেকড় ও বেড়ে ওঠা বরিশালে। বর্তমানে থাকছেন ঢাকায়। ২০১৫ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘ভাবনাংশ’ প্রকাশিত হয়। আর এই বছর বইমেলায় প্রকাশ পেয়েছে তার নতুন কবিতার বই ‘গাধার গয়না’। তার সঙ্গে কথাবলির পক্ষ থেকে কথা হলো। — নির্ঝর নৈঃশব্দ্য।]
আপনার নতুন কবিতার বই ‘গাধার গয়না’ নিয়ে কিছু বলেন।
নিজস্ব প্রকাশনী কাদাখোঁচা প্রকাশিত আমার (গাধার) এ গ্রন্থের (গয়নার) সত্ত্ব উন্মুক্ত। অর্থাৎ যে কেউ এর যে কোনো লেখা যে কোনো জায়গায় ব্যবহার করতে পারবেন। বইটির মূল পরিবেশক র‌্যামন পাবলিশার্স। সাদাকালো মলাটের চার ফর্মার এ গ্রন্থটি ‘শ্রেষ্ঠত্বের প্রত্যাশাবিমুখ বিশ্বাসীদের উৎসর্গকৃত’। যেখানে একই পরম্পরার ৬২টি লেখা রয়েছে। ২০১৩ সালে শুরু করেছিলাম সিরিজটি । প্রাথমিক পাণ্ডুলিপি গুছিয়ে এই পরম্পরার ভূমিকা লিখেছিলাম ২০১৫-এর জুলাইয়ে। যেখানে বলছি ‘জ্ঞানকাঠামোর অনমনীয়তাই হচ্ছে মৌলবাদিতা। আর মৌলবাদিরা মূলত দু’প্রকার এক. ছাগু প্রকৃতির (ডান) দুই. চুতিয়া প্রকৃতির (বাম); অর্থাৎ লেফট-রাইট করতে করতে এগিয়ে যাচ্ছে মৌলবাদ।’

নিজের বই নিয়ে অনুভূতি কী?
বই প্রকাশের পর নিজেকে সার্বজনীন, মানে সকলের মনে হয়। কারণ প্রতিটি বই আসলে এক একটা সময়ের চিন্তা, দর্শন ও প্রবণতার দলিল। পাঠকের উদ্দেশ্যে উত্থাপনের আগ মুহুর্ত অবধি যার সব লেখাই একান্ত নিজস্ব বা ব্যক্তিগত। তবে গ্রন্থাকারে প্রকাশের পর তা পাঠকের, মানে সবার হয়ে যায়। তখন যে কেউ সেই লেখার ভাব, দর্শন বা বোধ গ্রহন ও প্রত্যাখ্যান করার সুযোগ পায়।

ছোটোবেলায় কিছু হতে চাইতেন?
অনেক কিছু। পাইলট, বিজ্ঞানী, চিত্রশিল্পী, চকোলেট বা আইসক্রিম ব্যবসায়ি থেকে শুরু করে ক্রিকেটার, সন্ত্রাসী, রকস্টার, নেতা এমন আরো অনেক কিছুই হতে চেয়েছি।

আপনার লেখালেখির শুরু কবে থেকে মানে কতোদিন ধরে লেখালিখি করছেন?
দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্র থাকাবস্থায়, মানে ১৯৯২ সালে প্রথম স্বপ্রণোদিত হয়ে লেখার ইচ্ছে জাগে। স্কুলের খাতার পেছনে লিখেছিলাম - ‘আসবে যত/যাবেও তত/কিছুই থাকবে না/তাই বলে কী/সেই কবুতর/ আর আসবে না.../কবুতরটি/এখন না হয়/ পরেও আসতে পারে/তাই বলে কী/বলবে তুমি/আর আসবে নারে...’। পরের বছর এ লেখাটি বরিশালের স্থানীয় পত্রিকা ‘দৈনিক প্রবাসী’-তে ছাপা হয়েছিলো ।

আপনার লেখালেখির শুরু কেনো বলে মনে হয়?
প্রথম লেখার ইচ্ছে জাগার ঠিক আগের বছর বাবা-মায়ের আনুষ্ঠানিক বিচ্ছেদ আমায় অজস্র কৌতূহলী দৃষ্টিসংকুল ও বহু প্রশ্নবহুল একটি কাল উপহার দেয়। বস্তুত ওই সময়টায় যে বোধ জন্ম নেয় তা আমায় হুট করেই কিছুটা বড় করে দেয়। সমবয়সী বন্ধু বা মুরুব্বী স্বজনেরা যা একদমই টের পায়নি। কারণ আমি সবার কাছে থেকে একটু লুকিয়ে - দূরে দূরে থাকতে পছন্দ করতাম। আবার কাছে থাকলেও তাদের কারো সাথে খুব একটা কথা বলতাম না। মনে মনে নিজের সাথেই শুধু কথা বলতাম, অনেক কথা। একদিন হঠাৎ সেই কথাগুলোই লিখতে ইচ্ছে হলো।

আপনি কি শেষ পর্যন্ত কবি হতে চান, নাকি অন্যকিছু?
সত্যি কথা বলতে আমি কখনোই শুধু কবি হতে চাইনি, বা অন্যকিছু। কাব্যচর্চা বা কবিতা লেখাকে একটি সহজাত প্রবণতা ছাড়া বিশেষ কিছু ভাবতে পারিনি। জীবনের বিস্তীর্ণকাল জুড়ে দৈনন্দিন ভাবনার পরম্পরাই মননে কবিতা আকারে লিপিবদ্ধ হয়েছে। কখনো তা লেখা হয়েছে, কখনো হয়নি। তবে হ্যাঁ, আমি কথা বলতে চেয়েছি। প্রথমের নিজের সাথে, পরবর্তীতে স্ব-জাতির তথা মানুষের সাথে। অনেক সময় অমানুষ, অপার্থিবতার সাথেও হয়ত। এমন তাগিদ থেকেই জীবনের বিভিন্ন অধ্যায়ে স্রেফ কথা বলার মাধ্যম হিসেবেই কবিতা, গল্প, প্রতিবেদন, প্রবন্ধ, গান, চিত্রকলা, আলোকচিত্র বা চলচ্চিত্রের মতো নানা ভাষা ব্যবহার করেছি। নিশ্চিত থাকুন এর কিছুই বিশেষ কোনো দৃষ্টিভঙ্গী, চিন্তা বা বোধ প্রচার ও প্রসারের খায়েসে ব্যবহৃত হয়নি। ভাব আদান-প্রদানই মুখ্য আমার কাছে। আর এ কাজে যে কোনো শিল্পমাধ্যম বা ভাষাই দুর্দান্ত। আবারো বলি, আমি কবি বা কিছুই হতে চাই না আসলে । স্রেফ মন যখন যা চায় তাই-ই করতে চাই। মানে আমৃত্যু শুধু মনের কথাই শুনতে চাই।

আপনার কাছে কবিতা কী?
এটা আগেও এক সাক্ষাতকারে বলেছি। আমার অমুক, আমার তমুক – জাতীয় যে আমিত্ব নিয়ে মানুষ ঘুরে বেড়ায়, তাকে হত্যা করে তামাম নিজস্বতাকে সার্বজনীন করার চেষ্টাই করে যায় কবিরা। আর সেই চেষ্টায় জন্ম নেয় কবিতা।

আপনার মাথার মধ্যে কবিতার ইমেজ কেমন করে আসে?
বস্তুত নানাবিধ বোধ থেকে।

বিশেষ কারো কবিতা কি আপনাকে প্রভাবিত করে?
আশৈশব ‘মানুষ ও গ্রন্থ – দুটোই যে পাঠ্য' ছিলো। তাই চিন্তায় ও প্রকাশে বিভিন্ন মানুষ ও গ্রন্থের প্রভাব অনিবার্য। বাঙলাদেশের সংবিধান থেকে কুরান, ডারউইন থেকে ভগবান—সবই প্রভাবিত করেছে আমাকে। অতএব কাব্যচর্চার ক্ষেত্রেও আমার যে ভাষাভঙ্গী দাঁড়িয়েছে তা নিশ্চয়ই প্রভাবমুক্ত নয়। তবে বিশেষ কারো মতো করে কবিতা লেখার চেষ্টা করি নাই কখনো। আবার খুব সচেতনভাবে নিজস্বতা আরোপেরও চেষ্টা করা হয় নাই। বাকিটা পাঠক, তাত্ত্বিকরাই ভালো বুঝবেন – বলতে পারবেন।

আপনার নিয়মিত কার কার কবিতা পড়তে ভালো লাগে, কেনো লাগে?
সবার কবিতাই ভালো লাগে। কারণ - ‘কোথায় আমি নাই/আমিই’তো সবাই।’

কবি এরং কবিতার দায় সম্পর্কে আপনার মত কী?
কবি ভেদে কবিতা লেখার উদ্দেশ্যই আলাদা; তাই আলাদা প্রত্যেকের দায়ভাবও । আমি কোনো দায়বোধ থেকে কবিতা লেখি না। এই ক্ষেত্রে স্বতঃস্ফূর্ততাকে গুরুত্ব দেই, স্বাচ্ছন্দ্য খুঁজি। অবশ্য অন্যভাবেও ভাবা যায়। হয়ত বিভিন্ন দায়ের গ্লানিমুক্ত হতেই লেখি। লিখতে গিয়ে নিজের মাঝে লুকাই। মানবাত্মার জন্মদায় মেটাতেই হয়ত পয়দা হয় কবিতা। 

আপনার সমকালীন কবিদের লেখা কবিতা সম্পর্কে আপনার মন্তব্য কী?
সমকালের যাদের কবিতা পড়া হয়েছে তাদের প্রায় প্রত্যেকেরই কোনো না কোনো কবিতা ভালো লেগেছে। আবার কোনো কোনোটা খারাপ লেগেছে। এটা মূলত পাঠকালীন সময়ের মানুসিকাবস্থার নিয়ন্ত্রণাধীন। এই মুহুর্তে একটি লাইন আমাকে যে ইমেজ দেবে, একটু পরই তা ভিন্নতর হতে বাধ্য। এ কারণে একই কবিতা কখনো খুবই ভালো, আবার কখনো খুবই ফালতু লেগেছে।

এই সময়ে যারা কবিতা লিখেন তাদের কবিতা বিষয়ে বলেন। তাদের অনেকের মাঝে কি স্টান্টবাজি লক্ষ করেন না?
ব্যক্তিগতভাবে আমি কবিতাকে সাধারণের কাছে ফেরানোর তাগিদ অনুভব করেছি খুব। সমকালীন অসংখ্য কবির কবিতা আমায় এ ব্যাপারে আশাবাদী করে তুলেছে। যাদের লেখাগুলো পড়লেই বোঝা যাচ্ছে যে তারা শূণ্যে ভাসছেন না।যারা জানেন এই মাটি ও মানুষের সাথে কবিতার সম্পর্ক আজকের নয়; বহু পুরানো। এক সময় ছন্দে ছন্দে কথা বলা ছিলো বাঙালের স্বাভাবিক প্রবণতা। পরবর্তীতে ঔপনিবেশিক শিক্ষা বা পাশ্চত্যের প্রভাব – বাংলার সাহিত্যকে একদিকে সমৃদ্ধ করেছে, অন্যদিকে করেছে বিভেদাক্রান্ত। অশিক্ষিত কবিয়ালদের সহজবোধ্য দেশজ ঢঙ বা ছন্দের চেয়ে শিক্ষিত মহাকবিদের গণবিচ্ছিন্ন দুর্বোধ্য উপমার সামাজিক কদর বাড়িয়েছে পশ্চিমা চেতনা। সমকালীন কবিতা পড়ে মনে হচ্ছে এই ‘কলোনিয়াল ট্রমা’ কাটিয়ে ওঠার সময়ট চলছে। ফের মাটি ও মানুষের কাছেই ফিরছে কবিতা; এবং তা এখনকার কবিদেরই হাত ধরে। যে কারণে আমার সময়ের কোনো কোনো কবি যদি স্টান্টবাজিও করেন, তাও আমার ভালো লাগে।

দশক বিভাজন বিষয়ে আপনার মত কী?
এটা সাহিত্য শিক্ষক, সমালোচক বা সম্পাদকদের ভাবার বিষয়, আমার মতো দায়হীন কাব্যচর্চাকারী কবি বা অকবির নয়। নিজেকে কখনো দশকাক্রান্ত দেখতে চাই না। 

শিল্প-সাহিত্যেক্ষেত্রে পুরস্কার প্রকৃতপক্ষে কী কোনো ভূমিকা রাখে?
যেহেতু আমরা এখন বাজার সভ্যতার বাসিন্দা সেহেতু অর্থ-পুরস্কার কোনো শিল্প-সাহিত্যচর্চাকারীর কয়েকটা দিন বা ঘন্টাকে আনন্দময় করে নিশ্চয়ই। তবে প্রকৃত শিল্প-সাহিত্যচর্চাকারী, অর্থাৎ যারা শুধু চর্চার আনন্দে শিল্প-সাহিত্য করেন; তাদের পুরস্কারের আশা করতে দেখিনি কখনো। 

সবশেষে আপনি আপানার এমন একটা স্বপ্নের কথা আমাদের বলেন, যেটা বাস্তবায়ন করতে আপনার চেষ্টা আছে।
আপাতত তামাম স্বপ্নেরা চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা শিল্প কেন্দ্রীক। যেগুলো বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে এই মুহুর্তে মূলত চলচ্চিত্র নির্মাণের পথে হাঁটছি। ইতিমধ্যে শুরু করেছি নিজের প্রথম সিনেমার কাজ। এছাড়া বেশ কিছু নতুন প্রকাশনার কাজও হাতে নিয়েছি। চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা - দুটো ক্ষেত্রেই আমি মূলত শিশুদের জন্যই বেশী কাজ করতে চাই। আর এ জন্য শুধু চেষ্টা নয় - আমি যুদ্ধ করতেও রাজি।

পুরানো সাক্ষাতকার
ঘুমঘোরে কথোপকথন
অলস দুপুরে আলাপ...

১৪ মার্চ ২০১৭

নতুন তিনটি কবিতা

সাঙ্গুস্নান

বেদাগ বিবাগ

সব কথা থেমে গেলে বোতলের তলানিতে জমে থাকা মদ তূল্য সূত্রের ফসিল গলে ফিরে যায় দিনগুলো অতীতের চোরা পথে ফেলে আসা মহাসড়কের দুর্ঘটনাপ্রবণ যে বাঁকে, তামাম মায়ার বোঝা কাঁধে লয়ে সেখানে গিয়েছিলাম বোধকরি দেড় দশক আগে; নিজেরে দিয়ে বলি খুশী করতে ঠিক কাকে তা মনে পড়ছে না। [১৩ মার্চ ২০১৭; পল্লবী, ঢাকা।]

অপ্রমাদ
বীতনিদ্র প্রতীতির জলে
লিখে রাখে অবিমৃষ্য মন
‘বিরহের রাত ঘন হলে
কমে যায় ঘুমের ওজন’
[১২ মার্চ ২০১৭; পল্লবী, ঢাকা।]

নির্বেদ
ফাগুনের মধ্য দুপুরে চৈত্রের ঊষর মাঠের মতো খা খা করে ওঠে বুক, সুবিপুল খর জলরাশি মাঝে মিঠাপানিহীন ষোল রাত কাটানো হালভাঙা একলা মাঝির সমান ক্ষয়িত মনে কোনো কথা ফোটে না; পুত্রের আঘাতে নিহত পিতার গ্লানিতূল্য মানবিক কলুষতা জমছে জাগ্রত নৈরাশ্যের বেগতিক প্রার্থনায়। [১৪ মার্চ ২০১৭; পল্লবী, ঢাকা।]

* পড়ুন আরো দুটি লেখা
ভীমরতি / সৈয়দুন্নেছার সন্ধ্যা

১৩ মার্চ ২০১৭

বাংলাদেশে লাপাত্তা হাজার পাকিস্তানি!

[ব্যক্তিগত দিনলিপি হাঁতড়ে দেখি গত বছরের (২০১৬) ২৫ মে লেখা রয়েছে, ‘সিনেমা বানানো শেখার নেশায় চাকরি ছেড়ে অস্থির হয়েছিলাম ২০১২ সালের জুনে। আর ঠিক চার বছর পর ২০১৬ সালের জুনে নতুন চাকরি নেয়ার কথা ভাবছি নিজের সিনেমাটা বানানোর জন্য স্থির হতে। মানব জীবন ও মন বড়ই বিচিত্র।’ এর মা্ত্র সাত দিন পর (২ জুন) লেখা হয়েছে, ‘মূলধারার সাংবাদিকতা থেকে পালানোর আগে সর্বশেষ যে ঘটনার সংবাদ সংগ্রহ করেছিলাম, তা হচ্ছে জাতীয় সংসদে বাজেট পেশ। চার বছর পর কাকতালীয়ভাবে সেই একই ঘটনার সংবাদ সংগ্রহে যাওয়ার মধ্য দিয়ে ফের সক্রিয় হচ্ছি সংবাদমাধ্যমে। দেখা যাক এ দফায় - কত দূর যাওয়া যায় বা কত দিন মন টেকে প্রাতিষ্ঠানিক সাংবাদিকতায়।’ তিন মাসের বেশী টিকতে পারিনি তৎকালে। তবে ওই সময়টাতে বেশ কিছু প্রতিবেদন লেখা হয়েছে। বিশেষত ‘আইএস (ইসলামিক এস্টেট) সম্পর্কে। এই ব্লগের নিয়মিত পাঠকদের জন্য এমন কিছু লেখা সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।যার মধ্যে আমার সবচেয়ে প্রিয় প্রতিবেদন এটি। প্রতিবেদনটি সম্পাদনা করেছিলেন কবি ও সাংবাদিক রুদ্রাক্ষ রহমান।]
বৈধ পথে বাংলাদেশে এসে আত্মগোপন করেছেন কমপক্ষে এক হাজার পাকিস্তানি নাগরিক। ২০১৩-১৪ সালে দেশে ঢোকা এই পাকিস্তানিদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে বহু আগে। তারা এখন কোথায় কীভাবে আছেন, কী করছেন তার কোনো হদিস নেই পুলিশ বা সংশ্লিষ্ট বিভাগের কাছে। একাত্তরের মানবতাবিরোধীদের বিচার শুরু হওয়ার পর নানা কারণ দেখিয়ে ওই পাকিস্তানিরা বাংলাদেশে প্রবেশ করে। 

গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারি অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের সন্ত্রাসী হামলায় পাকিস্তানি সামরিক গুপ্তচর সংস্থা ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স (আইএসআই)’র জড়িত থাকার সন্দেহ তীব্র করেছে এই আত্মগোপনকারীরা।এনিয়ে ইতোমধ্যে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উপদেষ্টা হোসেন তৌফিক ইমাম (এইচ টি ইমাম) ও আইএসআই মুখপাত্র। 

অনুসন্ধানে প্রকাশ, লুকিয়ে থাকাদের মধ্যে আহলে সুন্নতপন্থী মাদানী তাবলীগ জামায়াতে আসা উঠতি বয়সী পাকিস্তানির সংখ্যাই বেশি। আরো রয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত বিভিন্ন বয়সী পাকিস্তানি নারী-পুরুষ। যারা তাদের এ দেশীয় আত্মীয়-স্বজনদের সাথে দেখা করার জন্য এসেছেন। এছাড়াও আছেন বিভিন্ন ব্যবসার কথা বলে দেশে ঢোকা পাকিস্তানিরা। যাদের মধ্যে ‘ক্যামিক্যাল’ ব্যবসায়ীরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। এই আত্মগোপনকারীদের অধিকাংশের ভিসার মেয়াদ ২০১৪-১৫ সালে শেষ হয়ে গেছে। 

বাংলাদেশে ঢোকার সময় ইমিগ্রেশনে দেয়া তথ্যে তারা স্থানীয় যে ঠিকানায় থাকার কথা বলেছেন, সেখানে গিয়েও তাদের খুঁজে পায়নি পুলিশ। এর মধ্যে অনেকে আবার খোদ পাকিস্তান দূতাবাসের ঠিকানাও ব্যবহার করেছেন। এদের খুঁজতে প্রতিনিয়ত অভিযান চালাচ্ছে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি)। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী অন্যান্য বাহিনীগুলোকেও এদের ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। গুলশানের ঘটনার পর অভিযানের মাত্রা ও সতর্কতা, দুটোই তীব্র হয়েছে। 

কমপক্ষে একশ আত্মগোপনকারী পাকিস্তানির নাম, পার্সপোর্ট নম্বরসহ ভিসা সংক্রান্ত তথ্যাদি নিউজনেক্সটবিডি ডটকম’র সংগ্রহে রয়েছে। তবে তাদের সুনির্দিষ্ট সংখ্যা জানা যায়নি। এ ব্যাপারে দেশের সিকিউরিটি কন্ট্রোল অফিসার (এসসিও) এবং এসবি’র উপ-মহা পরিদর্শক (ডিআইজি, ইমিগ্রেসন) মো. মাজহারুল ইসলামের সঙ্গে কথা হয় আমাদের। মোট কত জন পাকিস্তানি বৈধ বা অবৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন, জানতে চাইলে তিনি নিউজনেক্সটবিডি ডটকম’কে বলেন, ‘কান্ট্রিওয়াইজ (দেশভিত্তিক) এই ইনফরমেশন (তথ্য) এই মুহুর্তে এভাবে দেয়া যাবে না। যে অফিসারেরা এনিয়ে কাজ করেন তাদের কাছ থেকে ইনফরমেশন নিয়ে জানাতে হবে।’ এবিষয়ে তিনি পরে যোগাযোগ করতে বলেন। পরে মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তার সাড়া মেলেনি। 

গত ৩০ জুন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল জাতীয় সংসদকে জানান, ইমিগ্রেশন ডাটাবেজ অনুযায়ী বর্তমানে বাংলাদেশে এক লাখ ১২ হাজার ৪৮৫ জন বিদেশি নাগরিক আছেন। যার মধ্যে ৯১০ জনের ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে। মন্ত্রী দাবি করেন, স্পেশাল ব্রাঞ্চে অবৈধ বিদেশীদের তালিকা সংরক্ষিত আছে। তাদের শনাক্তকরণের জন্য প্রতিদিনই স্পেশাল ব্রাঞ্চসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিশেষ অভিযান চালাচ্ছে। অবৈধভাবে অবস্থানরত বিদেশির সন্ধান পেলে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেয়া হয়। 

১ জুলাই গুলশান হামলার পর এইচটি ইমাম এক টিভি চ্যানেলকে দেয়া সাক্ষাতকারে বলেন, ‘গুলশানের ঘটনা ঘটেছে স্থানীয় জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদিন (জেএমবি) ও পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের যোগসাজশে।’ তবে এই অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করে পাকিস্তান দাবি করে, গুলশান হামলার ঘটনায় আইএসআই কোনো ভাবেই জড়িত নয়। তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘তারা সরাসরি তো নয়ই, পরোক্ষে ভাবেও জড়িত নয়।’ বাংলাদেশের এমন অভিযোগকে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ এবং ‘প্ররোচনামূলক’ আখ্যা দেয়া হয়। এর আগে গুলশানের ঘটনায় দু:খপ্রকাশ করে দেশটির সরকার বলেছিলো, ‘বাংলাদেশ সরকার এই ধরনের কাপুরুষোচিত হামলা কার্যকরভাবে প্রতিরোধ করতে পারবে বলে পাকিস্তান আশাবাদী।’ 
গুলশান হামলার পর প্রতিবেশী দেশ ভারতের একাধিক গণমাধ্যম এই ঘটনার সাথে আইএসআই’র সম্পৃক্ততার কথা প্রকাশ করে। দেশটির স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাত দিয়ে তারা বলে, ‘বাংলাদেশ ও ভারতে হামলা শানানোর জন্য আইএসআই এবং আইএস(ইসলামিক এস্টেট) যদি নিজেদের মধ্যে কোনও সমঝোতা করে নেয়, তাতেও আশ্চর্য হবে না নয়া দিল্লি। কারণ তারা মনে করে, ভারত অথবা বাংলাদেশের উপর হামলা যে দেশ বা সংগঠনই ঘটাতে চাক না কেন, পাকিস্তানের কৌশলগত সমর্থন বা সাহায্য না নিয়ে তা করা কার্যত অসম্ভব।’ 
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে গুলশানে সন্দেহজনক গতিবিধির কারণে আটক হন পাকিস্তান দূতাবাসের কর্মকর্তা আবরার আহমেদ খান। ওই সময় ইসলামাবাদে বাংলাদেশের দূতাবাসের কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসেনকে কয়েক ঘন্টা নিখোঁজ করে রাখা হয়। তারও আগে গত বছরের শেষের দিকে পাকিস্তান দূতাবাসের কূটনীতিক ফারিনা আরশাদের বিরুদ্ধে জঙ্গি ‘যোগসাজশের’ অভিযোগ ওঠে। এ জন্য তাকে দেশে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য চাপ দেয়া হলে পাকিস্তান কোনো কারণ ছাড়াই ইসলামাবাদে নিযুক্ত বাংলাদেশের কূটনীতিক মৌসুমী রহমানকে ফিরিয়ে আনতে বলে। 
এর আগে ২০১০ সালের ২৫ মার্চে একটি বিশেষ ট্রাব্যুনাল, আইনজীবী প্যানেল এবং তদন্ত সংস্থা গঠন করে বাংলাদেশ। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে দখলদার বাহিনীর দেশীয় অনুচরদের দ্বারা সংগঠিত মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারের এই প্রক্রিয়া শুরুর পর থেকেই এর তীব্র বিরোধিতা করছে আসছে পাকিস্তান। যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে সাফাই গেয়ে, সাজার বিরোধীতা করে দেশটি রাষ্ট্রীয়ভাবেই একের পর এক বিবৃতি দিয়েছে। 

বাংলাদেশের বিচারে ২০১৩ সালে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর হওয়ার পর এর বিরোধিতা করে বিবৃতি দেয় পাকিস্তান। একই অপরাধে দণ্ডিত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকরের পরও এক বিবৃতিতে উদ্বেগের কথা জানায় দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সর্বশেষ গত ১০ মে মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসির পরও তারা প্রতিবাদ জানিয়েছে। এমনকী নিজেদের জাতীয় সংসদে নিন্দা প্রস্তাবও পাশ করিয়েছে। এ নিয়ে বিদ্যমান উত্তেজনার জেরে ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তানি ও ইসলামাবাদে নিযুক্ত বাংলাদেশি হাইকমিশনারকে তলব, পাল্টা তলবের ঘটনাও ঘটেছে একাধিকবার। পাকিস্তানের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্নের দাবি উঠেছে এ দেশের জাতীয় সংসদেও। 

গত ফেব্রুয়ারিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেছিলেন, ‘পাকিস্তানের সাথে কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক রাখার কোনো যৌক্তিকতা নেই।’ তবে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন এটাই প্রথম নয়। এর আগে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করায় পাকিস্তানের তৎকালীন ডেপুটি হাইকমিশনার ইরফান রাজাকে বাংলাদেশ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিলো। তবে তখন পরিস্থিতি এতটা ঘোলাটে হয়নি। 

এর আগে ২০১২ সালের ১৯ জানুয়ারি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এক সংবাদ সম্মেলন করে জানায়, ২০১১ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশে একটি সেনাঅভ্যুত্থান ঘটানোর চেষ্টা হয়েছিলো। এই অভ্যুত্থানে জড়িতদের ‘ধর্মান্ধ’এবং ‘ধর্মীয় অনুশাসন পালনে অতিমাত্রায় কট্টর’ বলে উল্লেখ করেছিলো সেনাসদর মুখপাত্র। পরবর্তী এ ব্যাপারে উইকিলিকসের ফাঁস করা সৌদি নথিতে বলা হয়, ঘটনার অন্যতম হোতা ছিলেন সৈয়দ জিয়াউল হক নামের ‘মেজর’ পদ মর্যাদার এক সেনা কর্মকর্তা। আর্টিজান ট্রাজেডির পর তাকে নিয়ে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স। সেখানে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলামের বরাত দিয়ে তারা জানান, চাকরিচ্যুত মেজর জিয়াউল ২০১১ সালের ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর আত্মগোপনে গিয়ে এ ধরনের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হয়েছেন। 

আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার বাংলাদেশ শাখা আনসার আল-ইসলামের সঙ্গে এই মেজর জিয়ার সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ মিলেছিলো আরো আগে। ২০১৩ সালে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান মুফতি জসিমউদ্দিন রাহমানী গ্রেফতার হওয়ার পর জিয়ার নাম বেরিয়ে আসে। তখনই জানা গেছে, আইএসআই’র প্রত্যক্ষ সহায়তাপুষ্ট আরেক নিষিদ্ধ সংগঠন জামায়েতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)’র নেতাদের সাথেও জিয়ার সুসম্পর্ক রয়েছে। 

গত বছরের নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে রাজধানীর উত্তরা থেকে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত দুই পাকিস্তানিসহ জেএমবির চার সদস্যকে গ্রেফতার করেছিলো গোয়েন্দা পুলিশ। তাদের কাছ থেকে কিছু জিহাদি বই, বিদেশি মুদ্রা, পাসপোর্ট এবং একটি ‘স্পাই-মোবাইল’ ফোন জব্দ করা হয়। পুলিশ তখন বলেছিলো, ‘স্পাই-মোবাইল’ ফোনটি পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তার। এ ঘটনায় আটক পাকিস্তানি নাগরিক ইদ্রিস শেখের সঙ্গেই ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিলো দেশটির বাংলাদেশস্থ দূতাবাসের নারী কর্মকর্তা ফারিনা আরশাদের। 

সৌদি নথি মতে, ২০১১ সালের ওই অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা হয়েছিলো হংকং, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায়। লক্ষ্য ছিলো সেনাপ্রধানসহ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমানকে হত্যার মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটানো। এ অভ্যুত্থানের সমন্বয়কারী ছিলেন বাংলাদেশের স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার দায়ে অভিযুক্ত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা শরিফুল হক ডালিম (বর্তমানে মৃত)। অর্থায়ন করেন হংকং প্রবাসী বাংলাদেশি ব্যবসায়ী ইশরাক আহমেদ। এই ব্যবসায়ী নিষিদ্ধঘোষিত আরেক সংগঠন হিযবুত তাহরীরে সঙ্গে যুক্ত বলেও নথিতে উল্লেখ রয়েছে। 

গুলশান হামলার পর আটক হওয়া হাসনাত রেজা করিমও হিযবুত তাহরীরকে পৃষ্ঠপোষকতার কারণেই নর্থ সাউথ ইউনির্ভাসিটি থেকে চাকরিচ্যুত হয়েছিলেন। এই সংগঠনসহ বাংলাদেশে সক্রিয় প্রতিটি জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গে আইএসআই’র সংশ্লিষ্টতা থাকার অভিযোগ রয়েছে। 

ভারতীয় গোয়েন্দারা দাবি করেন, আইএসআই এ অঞ্চলের সবগুলো জঙ্গি সংগঠনের জনক। তারা বিভিন্ন নাম বা ব্যানারের তলে বিভিন্ন শ্রেণির জঙ্গিদের সমবেত করছে। ক্ষেত্র অনুযায়ী এদের কর্মি বাছাই, নিয়োগ ও মগজ ধোলাই প্রক্রিয়াও ভিন্ন। তবে সবগুলো সংগঠনের উদ্দেশ্য একই, ইসলামিক শাসন কায়েমের নামে অরাজকতা তৈরী করা। 

অন্যদিকে পুনরায় হামলার হুমকী দিয়ে সিরিয়া থেকে পাঠানো ভিডিও বার্তায় অংশ নেয়া বাংলাদেশি জিহাদী তাহমিদ রহমান শাফি বছরখানেক আগে বিয়ে করে স্বস্ত্রীক তুরস্কে গিয়েছিলেন। সিরিয়া ও ইরাকে গিয়ে আইএসে যোগ দিতে ইচ্ছুকদের ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে চিহ্নিত এই দেশটিও একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারের বিরোধীতা করে আসছে। মে মাসে নিজামীর ফাঁসি কার্যকর করার প্রতিবাদে তুরস্ক ইতিমধ্যে ঢাকা থেকে রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহার করে নেয়। দেশটির প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান তীব্র ভাষায় ওই ফাঁসির নিন্দা জানায়। এর কিছুদিন পরই দিল্লিতে নিযুক্ত তুরস্কের রাষ্ট্রদূত ড. বুরাক আকচাপার এক স্বাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, নিজামীর ফাঁসি কার্যকরের বিষয়টিকে বাংলাদেশের জন্য ‘বিরাট এক ভুল’ হিসেবে দেখছে তুরস্ক। 

এর আগে গত মাসে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)’র মুখপাত্র মনিরুল ইসলাম বলেছিলেন, ‘আইএস খুঁজতে গিয়ে এখনও পর্যন্ত যে সব জঙ্গিদের ধরা গিয়েছে, তারা সকলেই জেএমবি-র সদস্য। এদের সংগঠিত করার কাজে ঢাকার কয়েকটি বিদেশি দূতাবাসও সক্রিয়।’ এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশী গোয়েন্দারা মূলত পাকিস্তান, তুরস্ক ও সৌদি আরবের দূতাবাসকে নদরদারিতে রেখেছে। 

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ বিরোধীতায় সক্রিয় এই তিনটি দেশই আইএস’কে সহায়তার অভিযোগে অভিযুক্ত। ভারতীয় গোয়েন্দাদের দেয়া তথ্য মতে, আইএস’কে সাহায্য করতে প্রায় দেড়শো কোটি মার্কিন ডলারের বিনিময়ে আইএসআই’কে ভাড়া করা হয়েছে। আর এই সংযোগের পিছনে বড় ভূমিকা রয়েছে সৌদি আরবের। তাছাড়া গত কয়েক বছরে পাকিস্তানের বিপুল সংখ্যক জঙ্গি তুরস্ক হয়েই সিরিয়া ও ইরাকে গিয়েছেন। তবে ‘আইএস’ ইস্যুতে বাংলাদেশ সরকারের অবস্থান বদলায়নি। সরকার এখনো বলছে, ‘এ দেশে আইএস নেই।’ এর আগে দেশে সংগঠিত ধারাবাহিক গুপ্তহত্যার জন্য ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদকেও দায়ি করেছিলো এই সরকার। 

উল্লেখ্য, গুলশান দুই নম্বরের স্প্যানিস হোলি আর্টিসান বেকারি অ্যান্ড রেস্টুরেন্টে পহেলা জুলাইয়ের হামলায় দেশি-বিদেশি ২০ জন নিহত এবং দুই পুলিশ সদস্য শাহাদাতবরণ করেন। নিহতদের মধ্যে নয় জন ইতালীয়, সাত জন জাপানি ও একজন ভারতের নাগরিক। বাকি তিনজন বাংলাদেশি। এ ঘটনায় জড়িত অস্ত্রধারীদের নিজেদের সদস্য বলে দাবি করেছে আইএস। চার দিন পর প্রকাশ করা এক নতুন ভিডিও বার্তায় তারা বাংলাদেশে আরো হামলার হুমকী দিয়েছে।

মূল সংবাদটি দেখতে ক্লিক করুন : নিউজনেক্সটবিডি ডটকম

১১ মার্চ ২০১৭

নতুন দুইটি কবিতা

ভীমরতি
সোনা রোদে পোড়া পৌঢ়া
আউশের সুবাস জড়িয়ে
ক্ষেতের শিথানে শোয়া
নদীমুখো মেঠো আল ধরে
- ছোটা শৈশবের
জমিনে সূচিত সব সাধ
আহ্লাদ হয়ে ঝুলছে।

১০ মার্চ ২০১৭
পল্লবী, ঢাকা।

সৈয়দুন্নেছার সন্ধ্যা
অদূরের প্রেমহার খালে জোয়ারের অপেক্ষায় থাকা নাইওরী নৌকাসম অলসতা ভর করা সন্ধ্যাগুলো যখন শতবর্ষী তেঁতুল গাছের ঘন ছায়ার মতো গাঢ় করে তোলে অতীতের অবয়ব, ঠিক তখন-ই উত্তরমুখী মাস্তুলে দাঁড়িয়ে কলা-বাড়ির সাঁকোর তল দিয়ে চাচৈরের দিকে দৃষ্টি দিলে দেখা যায় বহু বর্ষ পূর্বে প্রয়াত এক বৃদ্ধা সৈয়দজাদীর ততোধিক পুরানো প্রতীক্ষা; তথা শরীফ বাড়ির সুন্দরী বালিকা বধূর অপেক্ষাক্রান্ত হিজলরঙা সায়াহ্নের দৃশ্যাবলী।

১০ মার্চ ২০১৭
পল্লবী, ঢাকা।
newsreel [সংবাদচিত্র]