Powered By Blogger

২০ মে ২০১৬

আফ্রিকায় যাচ্ছে ‘মাই বাইসাইকেল’

ফিল্ম, মিউজিক আর পারফর্মিঙ আর্টের সমন্বিত উৎসবের কারণে ইতোমধ্যে পূর্ব আফ্রিকার বৃহত্তম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছে তানজিনিয়ার জেডআইএফএফ, মানে জানজিবার ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল। ১৯৯৭ সাল থেকে প্রতি বছর অনুষ্ঠিত এ উৎসবের এবারের থিম ‘দিস জার্নি অফ আওয়ার্স।’ জানজিবারের স্টোন টাউনে আগামী ৯ থেখে ১৭ জুলাই এটি অনুষ্ঠিত হবে। আর এতে প্রদর্শিত হবে বাংলাদেশী চলচ্চিত্র ‘মাই বাইসাইকেল’। চাকমা ভাষায় নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র। সে ভাষায় সিনেমাটির নাম ‘মর থেংগারি’, যার বাংলা অর্থ ‘আমার বাইসাইকেল’।
উৎসবের ‘ফিচার ফিকসন’ বিভাগে প্রদর্শনের জন্য এটি ‘অফিসিয়ালি’ মনোনিত হয়েছে। দেশের জন্য আবারো সম্মান আনলো সেন্সর বোর্ডের, তথা সরকারি ছাড়পত্র না পাওয়া একটি চলচ্চিত্র। কিঙবা বলা যায় - এই সম্মান নিয়ে এলেন স্রোতের বিপরীতে চলতে জানা এক আত্মবিশ্বাসী নির্মাতা অং রাখাইন
অং রাখাইন শুধু চাকমা ভাষার প্রথম সিনেমার নির্মাতা নন, সম্ভবত
তিনি রাখাইন জাতিগোষ্ঠী থেকে আসা একমাত্র বাংলাদেশী পরিচালক।
বাংলাদেশে এই চলচ্চিত্র বাণিজ্যিক ভাবে মুক্তি দেয়া না গেলেও ২০১৪ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত ১৩তম বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক স্বল্পদৈর্ঘ্য ও উন্মুক্ত চলচ্চিত্র উৎসবেই এটি প্রথম প্রদর্শিত হয়। এরপর প্রদর্শনী হয়েছিলো চট্টগ্রামে। গত বছর নভেম্বরে সিনেমাটি প্রদর্শিত হয় ইউরোপের দেশ এস্তোনিয়ার তাল্লিন ব্ল্যাক নাইট ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে। ডিসেম্বরে রাশিয়ার সিলভার আকবুজাত অ্যাথনিক ওয়ার্ল্ড ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে এটি সেরা চিত্রনাট্যের পুরস্কার জেতে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে সুইডেনের সবচেয়ে বড় চলচ্চিত্র উৎসব গোটেবর্গ ফিল্ম ফেস্টিভ্যালেও প্রশংসিত হয় এ সিনেমার গল্প ও নির্মাণ। এছাড়া ফিনল্যান্ডের স্কাবমাগোভ্যাট ইন্ডিজেনাস ফিল্ম ফেস্টিভ্যালসহ আরো কয়েকটি উৎসবে প্রদর্শিত হয় ছবিটি।
‘মাই সাইকেল’ -এর বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন কামাল মনি চাকমা, ইন্দ্রিরা চাকমা, ইউ চিং হলা রাখাইন, বিনাই কান্তি চাকমা, আনন্দ চাকমা, সুভাষ চাকমা, জোরাদান চাকমা। ছবির গল্প পরিচালকের নিজের। চিত্রনাট্য করেছেন নাসিফুল ওয়ালিদ। চিত্রগ্রহণে ছিলেন সৈয়দ কাসেফ শাহবাজী, আর সম্পাদনায় আরেফিন। মিউজিক করেছেন অর্জুন, সাউন্ড মিক্সিং রতন পাল। প্রযোজনা করেছেন মা নান খিং। স্রেফ শুভাকাঙ্খীদের সহযোগিতা বা অর্থায়নে নির্মিত স্বল্প বাজেটের এ ছবিটির পরিবেশক খনা টকিজ

ছবির গল্পে দেখা যায়, কামাল নামে একজন যুবক শহরে টিকতে না পেরে বাড়িতে ফিরে আসেন একটি বাইসাইকেল নিয়ে। এ সাইকেল দিয়ে একসময় এলাকায় মানুষসহ মালামাল পরিবহন শুরু করেন। আর তাতে তার সংসারের খরচ, ছেলের পড়ার খরচ চলতে থাকে। কিন্তু তার এই সুখ অন্যদের সহ্য হয় না। তিনি ষড়যন্ত্রের স্বীকার হন। আর না, বাকীটা জানতে অবশ্যই দেখতে হবে পুরো সিনেমা।

১৩ মে ২০১৬

প্রফেসনাল নই, ইমোসনাল আমি

‘আপা আপনি শ্রদ্ধেয়, মহান। কিন্তু আপনার সাথে কাজ করাতো দূরের আলাপ, কথা বলার রুচিও আমার আর অবশিষ্ট নেই। টাকাটা কখনো দিতে ইচ্ছে হলে *** ভাইয়ের কাছে দিয়েন।’ – দেশের স্বনামধন্য এক নির্মাতাকে গত মঙ্গলবার (১০ মে, ২০১৬) বিকেলে এই ক্ষুদে বার্তাটা পাঠাতে হয়েছে। গত মার্চের শেষ সপ্তাহে - তার নির্মাণাধীন ধারাবাহিক নাটক / মেগা সিরিয়ালের দ্বিতীয় কিস্তির চিত্রায়ন পর্বে কাজ করতে ‍গিয়েই জেনেছিলাম, প্রথম কিস্তির চিত্রগ্রাহক টানা আট দিন কাজ করেও কোনো টাকাও পাননি। তখনই বেশ আঁতকে উঠেছিলাম যে শঙ্কায়, তা’ই সত্যি হলো। নয় দিন কাজ করিয়ে তিনি মাত্র দুই দিনের মজুরী দিলেন, তা’ও বহুবার চাওয়ার ফল। এরপর – ‘এ হপ্তায় না, ও হপ্তায়’ - টাকা দেয়ার কথা বলে বলে কালক্ষেপন শেষে সর্বশেষ আমায় জানানো হয়েছে, ওই সাত দিনের মজুরি কবে নাগাদ দেয়া হবে তা অনিশ্চিত। তবে চলতি মাসের শেষ হপ্তায় নির্মাতা ধারাবাহিক/সিরিয়ালটির তৃতীয় কিস্তির চিত্রায়ন পর্বের কাজ শুরুর পাশাপাশি আরেকটি খণ্ড নাটক নির্মাণ করবেন। ওই সময় তিনি আমার, মানে চিত্রগ্রাহকের দিনের মজুরী দিনেই দিতে পারবেন।
বকেয়া মজুরী দিতে না পারার কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, তার ধারাবাহিক/সিরিয়ালের প্রযোজক এখন ‘ঈদের নাটক নিয়ে প্যাঁচে আছেন’। তাছাড়া সংশ্লিষ্ট চ্যানেল ক্রিকেট খেলা প্রচারের কারণে নাটকটির প্রচার আপাতত বন্ধ রাখায় তিনি প্রযোজককে ‘আগের টাকার জন্য চাপ দিতে’ পারছেন না। যদিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের অনির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানিয়েছেন, ‘তারা পরিচালকের আগের দুই কিস্তির সমুদয় বেকয়া পরিশোধ করে দিয়েছেন।’
নিজেরই প্রায় বছর দশ/বারো বছর আগের দশা মনে পরছে। সম্ভবত মনে করাচ্ছে এ সময়ের দায়। সেই সময়ও প্রায় একইরকম হতাশায়, ভুগতে হয়েছে হায়। তখন অবশ্য নাটক-সিনেমার পরিচালক/প্রযোজক নয়, পত্রিকা-ম্যাগাজিনের সম্পাদক/প্রকাশকের সুমতির অপেক্ষায় থাকতাম রোজ। আহা, কে-ইবা নিতে চায় এমন অতীতের খোঁজ। তখনও দেখতাম তারা ঠিকই ওড়াচ্ছেন বিজয়ের কেতন, ওদিকে বকেয়া আমার ছয় মাসের বেতন। এখন পরিচালক/প্রযোজকদের মাঝেও একই চরিত্র দেখি। এদের যত বড় বড় কথা, মানুষের জন্য দরদ বা ব্যাথা; সবই লোক দেখানো – মেকি। মালিক সর্বত্র একই। মিডিয়ার বিভিন্ন সেক্টরের মালিকদের চরিত্র - পোশাকশিল্প বা জাহাজভাঙাশিল্পের মালিকদের চেয়ে অন্তত ভালো, এমনটা ভাবার কোনোই কারণ নেই।
আন্দাজ করি, এই লেখা বা ক্ষোভ প্রকাশকে হয় ‘ছেলেমানুষী’ - নয় ‘পাকনামি’ ভাববেন অসংখ্য বিজ্ঞ সহযোদ্ধা। এর আগেও আমার এমন আচরনের বহিঃপ্রকাশে তাদের অনেকে অবাক হচ্ছেন দেখে আমি অবশ্য খুব একটা চমকাইনি। কারণ জানি এই শ্রমবাজারে তারাই কথিত প্রফেশনাল। আর আমার মতো ইমোসনালরা বরাবরই মুতে দেয় নিরবতার নিক্তিতে পরিমাপ্য অমন প্রফেসনালিজমের ওপর। যে কারণে আমরা সব জায়গায় আনফিট। মিডিয়ায়তো আরো বেশী।
আরেকটা গল্প বলে শেষ করছি। এটা ছিলো ২০১১ সালের আগস্টের ঘটনা। তখন একটা অনলাইন নিউজ পোর্টাল আর সাপ্তাহিকের সংসদ সংবাদদাতা হিসেবে কাজ করছি। সরকারের মন্ত্রীদের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে একের পর এক সংবাদ প্রকাশ করে বেশ আলোচনায় আসা প্রতিষ্ঠান দুটির সম্পাদক/প্রকাশককে মাসের ২১ তারিখে গ্রেফতার করা হয়। পরদিনই সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয় তার নিউজ পোর্টাল আর সাপ্তাহিক। বিনা নোটিশে বেকার হয়ে যাই প্রতিষ্ঠান দুটির শতাধিক সাংবাদিকসহ সবগুলো বিভাগের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী। ওই সময় সাংবাদিকদের অনেকে আবার বেতন না পাওয়ার শঙ্কায় অফিস থেকে পাওয়া ল্যাপটপ/নোটপ্যাড জমা দেননি। আমিও একই শঙ্কায় ছিলাম। কিন্তু অফিসের জিনিস আটকে বেতন আদায়ে বিবেক সায় দিচ্ছিলো না। অথচ আয়ের অন্য কোনো উপায়ও আমার জানা ছিলো না। অবশেষে কয়েকজন সাংবাদিক বড় ভাইয়ের কাছ থেকে – কিছু টাকা ধার দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেই।

পরবর্তী সরকারের সাথে সমঝোতা হওয়ার পর সেই সম্পাদক/প্রকাশক কারামুক্ত হন। প্রতিষ্ঠান দুটোও আবার চালু করেন। কিন্তু সেই বেতন আর আমার চাওয়া হয়নি, পাওয়াও যায়নি। অথচ পাঁচ বছর আগের সেই এক মাসের বেতনের ঘাটতি আজও পোষাতে পারিনি। এর আগে পরে অজস্রবার অসংখ্য প্রতিষ্ঠান স্রেফ চাকরি ছাড়ার কারণে আমায় শেষ মাসের বেতন দেয়নি। এক পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদকতো ক্ষুদ্ধ হয়ে আমার বিরুদ্ধে ল্যাপটপ চুরির অভিযোগও এনেছিলেন। যাক সে আলাপ। বস্তুত জীবনে ঘাটতি বাড়ছে। এরই সাথে তা পোষানোর সুযোগ বা সামর্থ্যও কমছে কী? – এই নিয়েই চিন্তায় আছি।

পুরানো পোস্টঃ
মুক্ত সাংবাদিকতা ও আত্মরক্ষার্থে ...

‘জার্নালিজম’ বনাম ‘ক্যাপিটালিজম’!
প্রতিক্রিয়া বা স্ব-শিক্ষিত সাংবাদিকতা...
newsreel [সংবাদচিত্র]