মামুন ভাই (শেখ মামুন), এত স্নেহ, এত ভালোবাসা কি কেউ ছাড়তে পারে? বোধ
হয় নয়। আমি তো ভাই আর গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে অনার্স-মাষ্টার্স
করিনি। স্ব-শিক্ষিত সাংবাদিক। এ কারণেই হয়ত সাংবাদিকতাকে শুধু পেশা হিসেবে
কখনোই নিতে পারিনি। ওটা আমার নেশা। নয়ত টানা আট/নয় বছর শুধু সংবাদের পেছনে
হন্যে হয়ে ছুটতে পারতাম না। এখনো ছুটছি, আজীবনই ছুটবো। তবে আর কোনো দিন
চাকরি নয়, ফ্রি-ল্যান্স। অভিমানী মনে হলেও আমি তো এমনই। কোনো দিনই পেশাদার
নই, আবেগী। তবু কেন যে আপনাদের কাছ থেকে এত ভালোবাসা পেয়েছি ! আর
সাংবাদিকতা করতে এসে এত বেশী ভালো মানুষের দেখা আমি পেয়েছি, অন্য কোনো
পেশায় থাকলে তা এত দ্রুত সময়ে সম্ভব হত কি’না; সে ব্যাপারে সন্দেহ আছে।
বরিশালে
মূলত দুলাল’দা (সৈয়দ দুলাল), স্বপন’দা (স্বপন খন্দকার) আর লিটন’দার (লিটন
বাশার) হাত ধরে সাংবাদিকতায় এসেছিলাম। এরপর ঢাকায় এসে আপনি ছাড়াও মঞ্জু
ভাই (মোজাম্মেল হোসেন), একরাম ভাই (একরামুল হক), আশীষ'দা (আশীষ সৈকত),
হুমায়ুন ভাই (হুমায়ুন সাদিক চৌধুরী), উত্তম’দা (উত্তম চক্রবর্তী) , মিঠু
ভাই (নজরুল ইসলাম মিঠু), সম্রাট ভাই (আসাদুজ্জামান সম্রাট), বিপ্লব ভাই
(সালেহ বিপ্লব), নিখিল’দা (নিখিল ভদ্র), পিয়াল ভাই (অমি রহমান পিয়াল),
কামরান ভাই (কামরান রেজা চৌধুরী), লেবু ভাই (মহসিনুল করিম), লিটন ভাই
(সাখাওয়াত লিটন), আমিন ভাই (আমিন আল রশীদ), সমর’দা (সমর সরকার) , মাকসুদ
ভাই (মাকসুদুল হায়দার চৌধুরী), কামাল ভাই (খায়রুজ্জামান কামাল),
সাহাবুদ্দিন ভাই (সাহাবুদ্দিন চৌধুরী), তারেক ভাই (তারেক সালমান), হারুন
ভাই (হারুণ আল রশীদ), মামুন ভাই (মামুন নেছার), নাজনীন আপা (নাজনীন আখতার),
গনি ভাই (গনি আদম), শামীমা আপা (শামীমা বিনতে রহমান), সুমন ভাই (সুমন
মাহমুদ), বাছির ভাই (বাছির জামাল), সোহাগ ভাই (কাজী সোহাগ), সজল ভাই (সজল
জাহিদ), সিরাজ ভাই (সিরাজুজ্জা্মান), সাজু (সাজিদুল হক)’সহ আরো যাদের সাথে
কাজ করার সৌভাগ্য হয়েছে, তাদের সংস্পর্শই আমাকে ফি-দিন সাহসী করে তুলেছে।
আপনাদের কারণেই আজ আমি স্বাধীনভাবে কাজ করার কথা চিন্তা করতে পারছি।
আমার
স্বভাব তো জানেনই। যে কাজটাই করি না কেন, আন্তরিকতার সাথে করার চেষ্টা
করি। আর এ মুহুর্তে আমার মাথায় সিনেমার ভুত চেপেছে। এই অবস্থায় আমি যদি
সার্বক্ষণিক সাংবাদিকতা করতে চাই তবে আমার গায়েও ফাঁকিবাজ সাংবাদিকের তকমা
লেগে যাবে, যা আশাকরি আপনারও কাম্য নয়।
অবশ্যই জানবেন, পাশে আছি; আজীবনই থাকবো।
ভালোবাসি সাংবাদিকতা এবং একই পথে রক্ত ঘাম করা সহকর্মিদের।
এটি মূলত মামুন ভাইয়ের এফবি স্ট্যাটাস পাঠ পরবর্তী প্রতিক্রিয়া বা তাকে লেখা একটি খোলা চিঠি। গত (৫ সেপ্টেম্বর, ২০১২) সন্ধ্যায় তার দুটি একাউন্ট থেকেই পোস্ট করা ওই স্ট্যাটাসটিও এখানে তুলে ধরছি।
শেখ মামুন |
জীবনের
প্রথম চীফ রিপোর্টার ছিলো ইরাজ আহমেদ। প্রখ্যাত সাংবাদিক আহমেদ হুমায়ুনের
বড় ছেলে।বাবার পরিচয় নয়, তার নিজের পরিচয়েই তিনি মহান, মহৎ। ঢাকার
সাংবাদিকতা জীবনে আমার প্রথম শিক্ষক।বন্ধ হয়ে যাওয়া সাপ্তাহিক আন্বেষার
রিপোটিং টিমের প্রধান ছিলেন তিনি। আমি ছিলাম তার এই টিমের সবচাইতে ছোট
একজন সহযোদ্ধা। তার চাইতে মেধাবী বন্ধুবৎসল আন্তরিক প্রানবন্ত মানুষ এই
জীবনে আর পাইনি। একে একে এখন পর্যন্ত ১৭ জন চীফ রিপোর্টার পেয়েছি। কিন্তু
ইরাজ আহমেদ সবার উপরে। বাবার মতো, বড় ভাইয়ের মতো, আদর স্নেহ মমতা সবকিছুই
দিয়েছেন তিনি। হঠাৎ একদিন অভিমান করে সাংবাদিকতা পেশাটাকেই গুডবাই
জানিয়েছেন তিনি। তার মতো মানুষের এই পেশা ছেড়ে যাওয়াটা আমি আজো মেনে নিতে
পারিনি।
একইভাবে পার্লামেন্ট রিপোটিং করতে এসে বছর দুইয়েক
আগে পরিচয় হয় বরিশাল থেকে আসা শরীফ খিয়াম নামে এক তরুন সাংবাদিকের সঙ্গে।
যেমন মেধাবী, তেমনি পরিশ্রমি। কাজ ছাড়া আর কোনও ধান্দা নেই ওর। একদিন হুট
করে সেও পেশাটা ছেড়ে দিলো।
সেদিন শেষ দেখা হয়েছে ছবির হাটে।
ওর এক ঘনিষ্ট বন্ধু মারা যাওয়ায় শান্তনা দিতে ছুটে যাওয়া। আলোচনার এক ফাকে
বড্ড আভিমানী শরীফ খিয়ামকে বললাম, ভাই ফিরে আয়। এখানে যে আজ আযোগ্যদের বড়
প্রভাব। যোগ্যরা একে একে বিদায় নিলে পেশাটা্র ওপরই যে মানুষের ধারণাটা
একদিন বদলে যাবে।ফিরে আয় ভাই। ও বললো আমি ছাড়িনি। সাময়িক বিরতি নিয়েছি
মাত্র। ফিরে আসবো আবার। আমি বললাম, কিছু শুনতে চাইনা। ফিরতে হবে
সাংবাদিকতায়। কিছুই না বলে শুধু হাসলো ও।
খিয়াম, সংসদের
সাংবাদিক লাউজ্ঞে আমি আমার পাশের চেয়ারটি ফাকা রেখেছি। তুই আসবি বলে
আপেক্ষায় আছি। সংসদে বা সংসদের বাইরে যেখানেই হোক সহকর্মী হিসেবে তোকে
পাশে দেখতে চাই। তুই পাশে থাকলে সাহস পাই মেধা ও আর সততার লড়াইয়ে।
ইরাজ ভাইর মতো তুইও পেশাটা ছাড়িসনা খিয়াম...
চিরকুটটি ০৬ সেপ্টেম্বর, ২০১২ ফেসবুকে প্রকাশিত।