Powered By Blogger

২১ অক্টোবর ২০১৪

অগ্নিযুগে এস এম তুষার এবং ...

© eon's photography / pap
মঠবাড়িয়া থেকে বরিশালে পড়তে আসা সৈয়দ মেহেদী হাসানের ব্যাপারে প্রথম উৎসুক হয়েছিলাম ‘অগ্নিযুগ’ পুনঃপ্রকাশ করায়। প্রথমে ধূসর আহমেদ নামের আরেক কবির সাথে যৌথ সম্পাদনায় কাজটি শুরু করলেও পরবর্তীতে তিনি একাই পত্রিকাটি কাঁধে নেন। এক সময় শ্রদ্ধেয় এস এম তুষার প্রকাশ করতেন ওই সাহিত্য পত্রিকা। তখন হাতে লিখে, ফটোকপি মেশিনে অনুলিপি করে বিলি হত ‘অগ্নিযুগ’। কি তুখোড় তেজে তিনি একের পর এক সংখ্যা বের করতেন তা যারা দেখেছেন, ভুলতে পারবেন না কখনো।

খুব বেশী আগের নয়, ১৯৯৯ থেকে ২০০৫’র মধ্যবর্তী সময়ের কথা। ওই সময়ে তুষারের সহচর হওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিলো। তাই ভালো লেগেছিলো পত্রিকাটি পুনরায় মুদ্রণের খবরও। যদিও নতুন হাতে ‘অগ্নিযুগ’ চরিত্র বদলেছে। পরবর্তীতে জেনেছিলাম, স্থানীয় একটি দৈনিকে কাজ শুরু করেছেন মেহেদী। এরই মধ্যে গত বছরে লিটল ম্যাগাজিন আগুনমুখা’র সম্পাদক ও প্রকাশক নাজমুল শামীম আর কবি রূমান শরীফের কল্যাণে তার সাথে সাক্ষাত হয় আমার। সেদিন দুপুরে বিএম কলেজ ক্যাম্পাসে তার হাতে ছিলো নিজের কবিতার বইয়ের পাণ্ডলিপি। চেয়ে নিয়ে বেশ কয়েকটি লেখা পড়লাম।

সেই সামান্য পাঠ, ক্ষণিকের সাক্ষাত আর আলাপে মেহেদীকে কেমন লেগেছে বা তাকে কোনো বিশেষ মতাদর্শধারী মনে হয়েছে কি’না তা নিয়ে আলোচনা এ লেখায় অপ্রাসঙ্গিক। সেদিনের পরে তার সাথে আলাপ হয়েছিলো ফেসবুকে। ইনবক্সে এস এম তুষারকে নিয়ে লেখা চেয়েছিলেন। কাজের চাপে বেশ ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছিলাম তখন। তার উপরে যখন জানলাম লেখাটি ‘অগ্নিযুগ’ নয়, স্থানীয় একটি দৈনিকের সাহিত্য পাতার জন্য চাওয়া হচ্ছে; উৎসাহ হারালাম।

সব মিলিয়ে খানিকটা অনিচ্ছায় যে লেখাটি তৈরী হলো তা প্রকাশ করা হবে বলে আমার মনে হয়নি। কিন্তু লেখাটি প্রকাশিত হয়েছিলো। পাপ’র পাঠকদের জন্য সেটি নীচে তুলে ধরলাম।

তিনি এক বোধ জাগানিয়া বাতেনী স্রোত

যদি ঈমানদার না’ও হন, তবুও বিশ্বাস করুন- এস এম তুষার দুই লাইনের ছড়া নন; তিনি মহাকাব্য। এটা বুঝতে পারার পর থেকে তাকে আর ফরমায়েশী লেখার সংক্ষিপ্ততায় আটকানোর তাগিদ জাগে না কোনো। তার মতো আরো অনেকে আছেন এমন, যাদের নিয়ে স্বস্তালাপে আগ্রহী হয় না মন। তবুও লিখতে হয়েছে, হচ্ছে বা হবে হয়ত আরো। যদিও না লিখলেও কিছুই যাবে আসবে না কারো। সম্ভবত তারাও চায় না এমন আত্ম-প্রচার। কারণ, তারা বা তুষার মূলত বোধ জাগানিয়া এক বাতেনী স্রোত, যা অবিরত তাওয়াফ করছে আদি তীর্থভূমি চন্দ্রদ্বীপ বা পুরো বঙ্গদেশ। যার প্রভাবে সৃষ্ট দুরন্ত হাওয়ার বলয় জাগিয়ে তোলে তাদের সত্ত্বা, যারা বাজারকে পাশ কাটিয়ে চলার সাহস রাখে। অর্থাৎ তুষার ও তার সমমনারা বাজারী এ প্রচারণার উর্ধ্বে ওঠা প্রাণ। তবুও সাহিত্যকণ্ঠের এ উদ্যোগকে সাধুবাদ। এ পাতার সম্পাদক কবি সৈয়দ মেহেদী হাসানের দায়িত্ববোধের কারণে একজন নতুন পাঠকও যদি এস এম তুষারকে চেনেন, তার বোধ ও কমের্র ব্যাপারে আগ্রহী হন; সেই’তো প্রাপ্তি। মেহেদীর এই বোধটাও আমার খুব চেনা। ওটা বেঁচেই যে টিকে থাকেন, মহান সাজেন বাজারী মিডিয়ার মালিকেরা। তারুণ্যের এ তাজা বোধ তাদের অন্যতম হাতিয়ার। বরিশাল থেকে বার্লিন, সর্বত্র একই অবস্থা বিরাজমান। প্রতিষ্ঠান, বা তারও নেপথ্যের শক্তি - মানে মালিকেরা শ্রমিকের সবটুকুই কেড়ে নেয়, এমনকি বোধটুকুও। কর্মনিষ্ঠ শ্রমিকটি এরপরও হয়ত মাস গেলে বেতন পায় না নিয়মিত। অথবা পেলেও তার পরিমাণ প্রকাশ করতে পারেন না কখনো। এ কোনো ক্ষোভের কথা না, বাস্তবতা। বরিশালের কোনো দৈনিক পত্রিকা এ নিয়ম ভেঙে চলবে তা আজও আশা করি না। তবে আশাবাদী হই, ওই বাস্তবতায়ও স্বপ্নালু চোখগুলো দেখে। যে চোখগুলোয় জ্বলে এস এম তুষারের দৃষ্টি। আজীবন বঞ্চিতদের কথাই বলতে চেয়েছেন তিনি। চেয়েছেন তামাম মুখোশ খুলে দিতে। যে কারণে বাজারী মিডিয়ায় টিকতে পারেননি, বা আপোষ করে টিকে থাকতে চাননি। হতে চাননি কারো মুখোশের উপাদান। নিভৃতে সার্বজনীন বোধ বা আত্মপোলব্ধি জাগানিয়া সুর গাঁথায়ই ভালো লাগা তার। আজও গেঁথে যাচ্ছেন। বাতাসে কান পাতলেই শুনি তিনি গেয়ে যাচ্ছেন। সহজিয়া ঢঙে ব্যাখ্যা করছেন সব আদি পাঠ।
শোনো কালো মেয়ে...
বড় সড়কের ঘন্টা বাজানো বুড়ো
মরে গেল শেষরাতে
আফ্রিকার -
পথে পথে হাঁটবে না
বুড়ো সায়মন আর
বলবে না কোনদিনও
উদভ্রান্ত সেই আদিম যুগের কথা
শোনো কালো মেয়ে..
আমি সেই কন্ঠস্বর
যা মিশে থাকে ঘনকালো
অরণ্যের লতায় পাতায়
ঝিলের ওই টোল খাওয়া পানিতে
হরিনের মুখ রাখার ভঙ্গীমায়
উটের গলার - ঘন্টার ধ্বণিতে
শোনো কালো মেয়ে..
বড় সড়কের ঘন্টা বাজানো বুড়ো...
থেমে যান তুষার। বিড়িতে সজোরে দম মারারও আওয়াজ শোনা যায়। ক্ষণিকের নিরবতা ভেঙে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি কবিতা আবৃত্তি করেন শুরু করেন। - ‘সভ্যের বর্বর লোভ নগ্ন করল তোমার আপন নির্লজ্জ অমানুষতা / তোমার ভাষাহীন ক্রন্দনে বাষ্পাকূল পঙ্কিল হল ধূলি / তোমার রক্তে অশ্রুতে মিশে / দস্যু পায়ের কাঁটা মারা জুতোর তলার / বিভৎস কাদার পিন্ড / চিরচিহ্ন এঁকে দিয়ে গেল তোমার অপমানিত ইতিহাস।’ ফের শুরু করেন গান।
শোনো কালো মেয়ে
শত্রুর বন্দুকের ছায়ায় ছায়ায়
বেড়ে ওঠা সন্তান
তোমার কন্ঠে খোঁজে
কালো নিগারের গান
যে গানের সুরে সুরে
পাথুরে পাহাড় ভাঙে
হেনরীর হাতুরী
ভার্জিনিয়ার বুকে আর
কাতাঙ্গা প্রদেশে
গনহত্যার পর
কালো মৃতদেহগুলো
জোৎস্নায় স্নান করে
শোনো কালো মেয়ে...

জয়তু এস এম তুষার, জয়তু মেহনতি জনতা।

লেখাটি প্রকাশের সাহস মুগ্ধ করেছিলো। সেই সাথে মেহেদীর চাকরির ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কাও জেগেছিলো মনে। আর তা যে নেহাত অনুমান ছিলো না, তা’ও দ্রুতই টের পেলাম। গত ১৬ অক্টোবর (২০১৪) দুপুর একটার দিকে তার দেয়া ফেসবুক স্ট্যাটাসটি নীচে তুলে ধরা হল।
“আমি লোকাল পত্রিকার সাংবাদিক। এর চেয়ে পতিতাপল্লীর দালালিও ভালো বা মর্যাদার। সাংবাদিক বলতে এখানে মালিক পক্ষের মনোরঞ্জন করে চলাটাই শেষ কথা। যে পারবে না সে সাংবাদিক না। বরিশাল থেকে প্রকাশিত দৈনিক কলমের কণ্ঠর জন্ম থেকেই সাথে ছিলাম নগন্য সাংবাদিক বা দালাল হিসেবে। সর্বশেষঃ শনিবারের সাহিত্যকণ্ঠ, বুধবারের বিঞ্জান, প্রতিদিনের অবাক খবর, হুদাই বেহুদা বিভাগগুলো দেখতাম। মনে প্রাণে কষ্ট করে চালাতাম। তার উপরে দৈনিক স্পেশাল, বা ক্রাইম নিউজ দিতে হত। তবে মনোরঞ্জন করতে পারলাম না মালিক পক্ষকে। পরাজিত হলাম আমিই। ছেড়ে দিলাম দৈনিক কলমের কণ্ঠ। সাহিত্যজনরা মাফ করবেন, আপনাদের সাহিত্যকণ্ঠ আর বের হবে না। হলেও সাহিত্য সম্পাদক সৈয়দ মেহেদী হাসান থাকছে না।”
কিছুক্ষণ আগে (২১ অক্টোবর, ২০১৪) মুঠোফোনে মেহেদীর সাথে কথা বলে খানিকটা আশ্বস্ত হলাম। দৈনিক দেশ জনপদ নামের আরেকটি স্থানীয় পত্রিকায় তিনি চাকরি পেয়েছেন। আর ওদিকে এস এম তুষারও আবার লেখালেখি আর সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড শুরু করেছেন। পুনর্জ্জীবিত করেছেন ব্রিটিশ আমলের এক সাংবাদিক সংগঠন। সেইসঙ্গে সময় দিচ্ছেন লিটল ম্যাগাজিন ও প্রকাশণী আগুনমুখা’কে।

এস এস তুষার ও তার ভাবশিষ্যরা, ভালো থাকুক সব সময় - এই প্রত্যাশা।

স্কেচঃ রাসেল আহমেদ

২০ অক্টোবর ২০১৪

পাপাত্মায় শুদ্ধতার গান

© avantgarde-metal.com
রচনাকালঃ জুন, ২০১১ (সম্ভবত)
পাপ না করলে; পাপবোধ কারো হয় না
পাপবোধ ছাড়া যে; শুদ্ধতা চেনা যায় না

পাপবোধ কারো হয় না; পাপ না করলে
শুদ্ধতা চেনা যায় না; পাপবোধ ছাড়া যে

শুদ্ধ হতে তাই; পাপী আগে হওয়া চাই
পাপী আগে হওয়া চাই; শুদ্ধ হতে তাই

পাপ, পাপ, খালি পাপ; পাপে পাপারণ্য
অবশেষে পাপবোধ জাগলেই তব ধন্য

পাপ যত করেছি অপরাধ বেড়েছে
অসুস্থ তাড়না সবই গিলে খেয়েছে
তবু পাপ করে যাই; হতে পাপীশ্বর
পাপ দেখে টলমল; শয়তানের ঘর

পাপ, পাপ, খালি পাপ; পাপে পাপারণ্য
অবশেষে পাপবোধ জাগলেই তব ধন্য

পাপী আগে হওয়া চাই; শুদ্ধ হতে তাই
শুদ্ধ হতে তাই; পাপী আগে হওয়া চাই

শুদ্ধতা চেনা যায় না; পাপবোধ ছাড়া যে
পাপবোধ কারো হয় না; পাপ না করলে

পাপবোধ ছাড়া যে; শুদ্ধতা চেনা যায় না
পাপ না করলে; পাপবোধ কারো হয় না

অস্থিরতাই স্থির করে দেয়; স্থির করে দেয় অস্থিরতাই
স্থির করে দেয় অস্থিরতাই; অস্থিরতাই স্থির করে দেয়
অস্থিরতাই স্থির করে দেয়; স্থির করে দেয় অস্থিরতাই
স্থির করে দেয় অস্থিরতাই; অস্থিরতাই স্থির করে দেয়
অস্থিরতাই স্থির করে দেয়; স্থির করে দেয় অস্থিরতাই

দ্রষ্টব্য:
‘এ ধরায় শুধু কবিরাই নবীর ফিলিংস বুঝবার পারে’
- এ’ও সদ্য প্রসূত এক ওহী; জন্মেছে কবির কাছে।

‘Becoming-Corpus’ Includes Dance and an Art Installation
© www.nytimes.com
newsreel [সংবাদচিত্র]