২৫ এপ্রিল ২০১৯

হিমু ভাই, দেখা হবেই - ‘মিস’ নাই ..

“ছবিটা সম্ভবত ২৫ এপ্রিল দুপুরের দিকে রানা প্লাজার পিছনে তোলা। তার কিছুক্ষণ আগে
পৌঁছানোর পর আমি কাঁকন, সাদিকসহ আরও কয়েকজন মিলে অর্ধেক মাটির নিচে থাকা এক
মহিলার লাশ টেনে বের করি,” এমন ক্যাপসন দিয়ে ফেসবুকে এই ছবিটি প্রকাশ করেছিলেন হিমু।
বাংলাদেশী গণমাধ্যমের তৎপরতার প্রসংশা এখন সর্বজন বিদিত। যে কোনো ঘটনায় আমাদের, মানে সাংবাদিকদের ‘ব্রেকিং’ দেওয়ার প্রতিযোগীতা এখানে বিশ্বমানের। অথচ হিমালয় হিমু ওরফে নওশাদ হাসান হিমুর মৃত্যুর ১২ ঘন্টা পেরিয়ে যাওয়ার পরও তাঁকে নিয়ে সংবাদ দেখলাম শুধুমাত্র ডেইলি স্টারে, যার শিরোনাম “গায়ে আগুন দিয়ে ‘আত্মহত্যা’ রানা প্লাজা স্বেচ্ছাসেবকের।” এছাড়া প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে “তুই পাগল না মুই পাগল” শিরোনামে প্রকাশিত ফারুক ওয়াসিফের লেখা এক মতামতের মধ্যে খবরটি উল্লেখ রয়েছে। 
ফারুক লিখেছেন, “তার সঙ্গে দেখা রানা প্লাজা ধসের দিন। কী এক উন্মাদনার বশে ধ্বংসস্তূপ থেকে আহত ও নিহত লোকজনকে সরিয়ে আনছিল। হাতুড়ি-ছেনি-করাত দিয়ে উদ্ধার করছিল। হয়তো তার জন্য কারও হাত বা পা-ও কাটতে হচ্ছিল। পাগলটা কবিতাও লিখত। কিন্তু মৃত্যুপুরীর সেই দুঃসহ স্মৃতি সে আর ভুলতে পারেনি।” 
“রানা প্লাজার নিহত ব্যক্তিদের মতো তাকেও ভুলে যাচ্ছিল সবাই। দিনে দিনে অবসাদের চোরাবালি ঘিরে ধরে তাকে। ফেসবুকে একের পর এক স্ট্যাটাস দেখেও কেউ বুঝতে পারেনি যে রানা প্লাজা ধসের দিন ঘটবে আরেকটি ধস। গতকাল ২৪ এপ্রিল গায়ে আগুন ধরিয়ে আত্মহত্যা করে সে,” যোগ করেন তিনি। 

সাভার মডেল থানার উপ-পরিদর্শক আসগর আলী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেছেন, “এটি আত্মহত্যার ঘটনা। তবে তার মৃত্যুর পেছনে কারণগুলো এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।” 

এর আগে বুধবার দিবাগত রাতে হিমুর মৃত্যুর খবরটি চাউড় হলে সাংবাদিক এম জে ফেরদৌস ফেসবুকে লেখেন, “রানা প্লাজায় যারা উদ্ধারকাজে অংশ নিয়েছিলো তারা সবাই কমবেশি হিমুকে চেনে। হিমালয় হিমু, উদ্ধারকাজে ওর তৎপরতার কারণেই কিনা জানি না, অনেকেই ওরে ‘কালাপাহাড়’ বলে ডাকতো। কয়েকঘন্টা আগে হিমু গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে আত্মহত্যা করেছে। ২৪ এপ্রিল, তাও সেটা সাভারেই।” 

বন্ধুরা জানাচ্ছে, সহস্রাধিক প্রাণ কেড়ে নেওয়া রানা প্লাজা ধ্বসের ঘটনার পর থেকে গত ছয় বছর হিমু আর কাঁচা মাংস ধরতে পারত না, কোনো সুগন্ধিও সহ্য হতো না তাঁর। এই ডগ ট্রেইনার ও আইনজীবি এক সময়ে বামপন্থী ছাত্র রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। তাঁর এই মৃত্যুকে প্রতিবাদও ভাবছেন অনেকে। 
ফেসবুকে পশ্চিমবঙ্গের কবি অতনু সিংহ লিখেছেন, “আত্মহত্যা কখনো কখনো ব্যক্তির রাজনৈতিক বিদ্রোহ৷ দার্শনিক একটি কাজও বটে। হিমালয় হিমুর মৃত্যু তাই আমাদের অপরাধী করে দেয়!” 
কাল রাতে যখন খবরটি পেলাম ফেসবুক মেসেঞ্জারে হিমায়ল হিমুকে তখনও ‘অনলাইন’ দেখাচ্ছে, অথচ তাঁর বন্ধুরা বলছিলেন তিনি চিরতরে ‘অফলাইনে’ চলে গেছেন। মাত্র তিন-চার দিন আগে এই মানুষটির সাথে বন্ধুত্ব হয়েছিল আমার। 

সাভারের বিরুলিয়ার সাদুল্লাপুর গ্রামে গিয়ে তাঁর দেখা হয়েছিল মূলত বন্ধু রাজীব আশরাফের কল্যাণে। কুকুরের প্রতি হিমুর অকৃত্রিম মমত্ত্ব বোধ দেখে সেদিন আমি যারপরনাই আনন্দিত হয়েছিলাম। সাদুল্লাপুর থেকে একইসঙ্গে ঢাকায় ফিরেছিলাম আমরা, সাথে ছিল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উদ্ধার করে আনা একটি মুমূর্ষ কুকুর। সেটিকে কোলে করে মোহাম্মদপুরের এক পশু ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাচ্ছিলেন হিমু। দিয়া বাড়ি ট্রলার ঘাট থেকে বিদায় নেওয়ার সময় তাঁকে বলেছিলাম, “শিগগিরই ফের দেখা হবে।” হিমু বলেছিলেন, “অবশ্যই ভাই।” 

তিনি নিজের গায়ে আগুন লাগিয়ে স্বেচ্ছামৃত্যুকে বেছে নিয়েছেন শুনে তাঁর প্রোফাইলে গিয়ে দেখলাম মাত্র দুই ঘন্টা আগে ‘হ্যাশট্যাগ’ দিয়ে লিখেছেন, ‘জয়বাংলা - প্যারা নাই’। তার সামান্য আগে লিখেছেন, ‘কোনো মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়’। এর ঘন্টাখানেক আগে হিমু একইভাবে লিখেছেন, ‘আগুন সর্বগ্রাসী, তাই ভালোবাসি’। তারও আগে মোটা চার ঘন্টায় চারটি ‘স্ট্যাটাস’ দিয়েছেন তিনি। এক ও দুই ঘন্টা আগে লেখেন একইকথা, ‘ছোটকাল হৈতেই আগুন আমার অনেক পছন্দ’। এর ঠিক আগের দুই ঘন্টায় তিনি লিখেছেন, ‘অতঃপর তাহারা সুখে-শান্তিতে *দাইতে লাগিল’ এবং ‘এমনি করেই হয় যদি শেষ হোক না’। 

হিমু’২০১৫
হিমুর বাড়ি উজিরপুরে হলেও বেড়ে উঠেছেন পটুয়াখালীতে। আমি বরিশাল শহরে বড় হয়েছি জেনে বলেছিলেন, তিনিও একে স্কুল থেকে মাধ্যমিক পাশ করেছেন। আরো কি কি নিয়ে জানি কথা হয়েছিল আমাদের, যা খুব সামান্য সময়ের হলেও তাঁর অসাধারণ সারল্য অন্তরে গেঁথে গিয়েছিল। যে কারণে তাঁর হলদে হাসিটা স্মরণে আসতেই বুকটা মোচড় দিয়ে উঠছে বারবার। রাজীব বলছিল, হিমু কুকুরদের জন্য একটা সেবাকেন্দ্র খুলতে চায়। তাঁর এই পশুপ্রেম নিয়ে হয়ত লিখতাম কখনো, কিন্তু হায় মানুষ কত দ্রুত হারিয়ে যায়। 

হিমুর আরো দুটি লেখা খুব মনে লেগেছে। গত পরশু তিনি লিখেছেন, ‘প্রতিদিন মনে মনে শখানেক মানুষ খুন করি’। আরো লিখেছেন, আত্মহত্যাকারী যদি কাপুরুষ হয় তাইলে যারা স্বাভাবিক মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করে তাঁরা বোকা*দা।” 

আপাতত বিদায় হিমু ভাই, তবে আপনার সাথে দেখা হবেই, ‘মিস’ নাই। 

১৬ এপ্রিল ২০১৯

নয়াখোলার শেষ কম্বল শিল্পীর গল্প

সালামত উল্লাহ।
‘ছয় ভাই, এক বোনের সকলে; এমনকি বোন জামাই আর ভাইয়ের বউরাও ভেড়ার লোমের কাজ করতেন। আমার ওস্তাদ ছিলেন বড়ভাবী। তিনিই আমাকে কাজ শিখিয়েছেন। এখন অবশ্য আমি ছাড়া আর কেউই এ কাজ করেন না। বড় ভাই আর তার মেয়ে করতেন। তারাও ছেড়ে দিয়েছেন। বড় ভাই এখন গ্রাম ডাক্তার।’ আঞ্চলিকতার সাথে খানিকটা বিহারী মেশানো ভাষায় একটু থেমে কিছুটা গল্পচ্ছলে কথাগুলো বলছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের নয়াখোলা এলাকার সালামত উল্লাহ। 
২০১৪ সালের আগস্টের শেষ সপ্তাহের বর্ষাস্নাত এক সকালে তাঁর সাথে কথা হয়। কৈশোরে, মাত্র ১৫ বছর বয়সে ভেড়ার লোমের সঙ্গে জড়িয়েছিলেন নিজের জীবন। দেখতে দেখতে কেটে গিয়েছে অর্ধশতক। গত ৫০ বছরে কত ঘটনার মধ্য দিয়েই না যেতে হয়েছে তাঁকে। এই পেশার আয়েই নিজের একমাত্র মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন, তাও প্রায় ১৭ বছর হয়ে গেছে। 
সালামত বলতে থাকেন, ‘১৫-১৬ বছর আগেও এই নয়াখোলার ২০ পরিবারের ৫০-৬০ জন মানুষ ভেড়ার লোমের কম্বল তৈরীর কাজে জড়িত ছিলেন। আর এখন আমি ছাড়া আর কেউ নাই।’ ভেড়ার লোম কাটা থেকে শুরু করে, লোম বাছাই, জাত অনুযায়ী আলাদা করা, ধুনানোর পর তুলা তৈরী, তুলা থেকে সুতা আর সুতা দিয়ে কম্বল বুনানো, বুনন করা কম্বল পানিতে ভিজিয়ে জমাট করে তা শুকানো, এসব তিনি একাই করেন। আগে কিছু কাজে সহধর্মীনির সাহায্য পেতেন। তাঁরও বয়স হয়ে গেছে। ‘এখন আর আগের মত পারে না’- বলে থেমে, একটু হাসলেন সালামত। 

সালামতের পূর্বপুরুষের বাড়ি ভারতের মুর্শিদাবাদের জঙ্গীপুর। দেশভাগের পর আরো অনেক মুসলমান পরিবারের সাথে তারাও এ পাড়ে চলে আসেন। ওই সময় থেকেই বংশ পরম্পরায় পাওয়া ভেড়ার লোমের কাজ ছেড়ে পেশা বদলাতে শুরু করেন তাঁর জ্ঞাতিদের অনেকে। তবে কিছু মানুষ তাদের পুরানো পেশা আঁকড়ে ধরে রাখার চেষ্টা করেন। তেমন চেষ্টাই ছিলো সালামতের পিতার। যা জারি রেখেছেন সালামতও। 

‘শুধু কম্বল না, এককালে কার্পেটও তৈরী হত এখানে’ - এমনটা উল্লেখ করে সালামত জানান, ভেড়ার লোম সংগ্রহে তাঁর কোনো খরচ হয় না। সারাদেশের ভেড়া মালিকরাই তাঁর কথা জানেন। তারা কোনো দাম-তো রাখেনই না, উল্টো নিজেদের খরচেই তাঁকে ভেড়ার লোম কাটাতে নিয়ে যান। লোম বাছাই করতে করতে পাশে রাখা দুটি বস্তা দেখিয়ে তিনি জানান, ওখানে মোট দেড়শো ভেড়ার লোম রয়েছে। সম্প্রতি তিনি নোয়াখালী থেকে কেটে এনেছেন। এভাবে সারা দেশ থেকেই তিনি ভেড়ার লোম সংগ্রহ করে বেড়ান। 
২০টি ভেড়ার লোম দিয়ে যে সুতা তৈরী হয়, তা দিয়ে অনায়াসে পাঁচ দৈর্ঘ আর তিন হাত প্রস্থের একটি কম্বল তৈরী করা সম্ভব। সালামত তাঁর প্রতিটি কম্বল বর্তমানে (২০১৪ সালে) মাত্র সাতশ টাকা করে বিক্রি করেন। তিনি জানান, বর্তমানে প্রতি মাসে তিনি গড়ে ১০-১২ টি কম্বল তৈরী করতে পারেন। এক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তিরও সহায়তা নিচ্ছেন খানিকটা। ভেড়ার লোম দিয়ে তৈরী তুলো এখন আর তিনি হাতে ধুনন করেন না। শিবগঞ্জ তুলোধুনোর মেশিনে ধুনন করিয়ে আনেন। সেখানে প্রতি কেজি তুলো ধুননে ১২ টাকা করে নেয়।
আলাপ ও ছবি তোলা শেষে ফেরার সময় খাদে নামানো অদ্ভুত নিঃসঙ্গ স্বরে সালামত শুধু জানতে চেয়েছিলেন ‘আবার আসবেন তো?’ নয়াখোলার শেষ কম্বল শিল্পীর চোখে তখন রাজ্যের বিষাদ। পরক্ষণেই মায়াভরা হাসিতে বিষন্নতা লুকিয়ে বলেন, ‘আমি মরলে তো এখানকার কেউ আর এই কাজ দেখাতে পারবে না।’ 

নিজের তৈরী কম্বল দেখাচ্ছেন সালামত।
বাংলাদেশ-জাপানের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বাস্তবায়িত এক প্রকল্পের আওতায় শিল্পী ও গবেষক শাওন আকন্দের সম্পাদনায় প্রকাশিত ‘সেতুচি ক্যাটালগ - বাংলাদেশ ক্রাফটস’ শীর্ষক প্রকাশনায় আলোকচিত্রী হিসেবে কাজ করেছিলাম বছর চারেক আগে। যে কাজে সংযুক্ত করার পাশাপাশি আমায় পথ দেখিয়েছেন লেখক ও গবেষক অনার্য তাপস, আর চাঁপাইয়ে গিয়ে পেয়েছি গম্ভীরা শিল্পী ফাইজুর রহমান মানি, সাংবাদিক মোহাম্মদ আবদুল্লাহ এবং তরুণ আইনজীবী মেরাজ হোসেনের সহায়তা । ছবি তুলতে তুলতে সেবার যেসব গল্পের সন্ধান পেয়েছিলাম, তার কয়েকটি ব্লগ পাঠকদের জন্য এখানে টুকে রাখার তাগিদ অনুভব করছি।

০৬ এপ্রিল ২০১৯

নিজেরই প্রতিবিম্বগণ যার হন্তারক

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের নৈশ আড্ডায় অভিজিৎ দাস, ৭ জুলাই ২০১৩।..
কবি রাসেল রায়হানের সম্পাদক সম্পাদিত শিল্প সাহিত্যের সংবাদ বিষয়ক ওয়েবজিন ‘কালকুট’ ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে প্রকাশ করেছিল এই লেখাটি।  নিখোঁজ কবি অভিজিৎ দাসের জন্মদিন উপলক্ষে আজ পুনরায় প্রকাশ করছি লেখাটি।  
“যোগেন মণ্ডলের বাঙলায় আজও থামেনি নমঃশূদ্র পীড়ন। ১৪’র অক্টোবরে গুম হন কবি অভিজিৎ দাস, ১৭’তে লাপাত্তা সাংবাদিক উৎপল দাস।” – গত বছর নভেম্বরে এক মুখবই প্রকাশনায় লিখেছিলাম এমনটা । আসলে উৎপলের ঘটনা বার বার মনে করিয়ে দিয়েছে অভিজিৎ-কে। তিনি সেই কবি, নিজেরই প্রতিবিম্বগণ যার হন্তারক। দেখতে দেখতে কেটে গেছে তিনটি বছর; কোথাও মেলেনি আমাদের এই বন্ধুর খবর। উৎপল নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা নিয়ে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মিডিয়ার যেভাবে সরব হয়েছে তা আশাব্যঞ্জক। তাকে নিয়ে জাতীয় সংসদে অবধি আলোচনা হয়েছে। কিন্তু এই সংবাদ-আলোচনা বা তার সহযোদ্ধা সাংবাদিকদের তামাম, প্রচেষ্টা কত দিন জারি থাকবে তা নিয়ে কিছুটা সন্দেহ আছে মনে। কারণ অভিজিৎ-কে ফিরে পাওয়ার সকল প্রচেষ্টা কিন্তু এরই মধ্যে হারিয়ে গিয়েছে। কবি ক্রমশ ডুবে যাচ্ছে যাচ্ছেন স্বজন-বান্ধবদের স্মৃত্মির অতল গহবরে।

[উল্লেখ্য, নিখোঁজ হওয়ার দুই মাস ১০ দিন পর উৎপল ফিরে এসেছিল।]
সেবার উত্তরের হওয়া একটু আগেভাগেই বইছিলো। হিম হিম ভাব চলে এসেছিলো উষ্ণনগরী ঢাকার ভোরগুলোয়ও। ২০১৪-এর অক্টোবরের এমনই এক ভোরে, সম্ভবত ছয়টা বা সাড়ে ছয়টার দিকে সহোদর (ছোট ভাই) বিশ্বজিৎ দাসের শ্যামলীর বাসা থেকে বেড়িয়ে যান বাংলাদেশের তরুণ কবি ও গণসঙ্গীত শিল্পী অভিজিৎ দাস। এরপর থেকেই তিনি লাপাত্তা। দুই বাংলাতেই তাকে তন্ন তন্ন করে খুঁজেছেন বন্ধু, স্বজনরা। খোঁজার কথা জানিয়েছিলো পুলিশও। কিন্ত হদিস মেলেনি। প্রায়ই স্মরণ করি - কত গান কত স্মৃতি; ভাবি অভিজিৎ আদৌ ফিরবেন কি?
এরই মধ্যে কত কি ঘটে গেছে। চলতি বছরের মে মাসে চলে গেলেন চলচ্চিত্র নির্মাতা রাসেল আহমেদ। তার মৃত্যুর সংবাদ শুনে কত মানুষ খবর নিতে মুঠোফোনে আওয়াজ দিয়েছিলো তার ইয়াত্তা নেই। হঠাৎ খেয়াল করলাম আমি আসলে মনে মনে অভিজিৎ দাসের কণ্ঠ শোনার অপেক্ষা করছিলাম। 
গত দশকের মাঝামাঝি সময়ে থিম থিয়েটার উইজার্ড ভ্যালী জন্মের কালে আতুঁর করে রাসেলের সাথে মাত্র দুই জন মানুষ ছিলেন। যার একজন অভিজিৎ দাস। রাতের পর রাত আমরা বরিশালের রাস্তায় রাস্তায় হেঁটে হেঁটে, শ্মশান, কবর আর মানুষের বাজার ঘেঁটে শেষ অবধি একটু নিস্তব্ধতা খুঁজে নিয়ে কাটিয়ে দিয়েছি। 
২০০৭ সালের সেই সংবাদ, আজকের পরিবর্তন।..
সাহিত্যের সংবাদনির্ভর অনলাইন ম্যাগাজিন ‘কালকূট সম্পাদক কবি রাসেল রায়হান যখন অভিজিৎ দাসকে নিয়ে লেখার কথা বললেন, সাথে সাথেই কেন যেন মনে পড়ে গেলো বহু পুরানো এক সংবাদের শিরোনাম - ‘পুলিশী হয়রানীতে দুই সাংস্কৃতিককর্মি’। সে বছর মহাশ্মশানে এক প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণের কাজ চলছিলো। যেখানে সহকারি পরিচালক হিসেবে কাজ করছিলেন কবি অভিজিৎ, আর তার কাজ দেখতে গিয়েছিলেন - প্রয়াত নির্মাতা রাসেল। রাত তিনটার দিকে তারা যখন বাড়ি ফিরছিলো তখন পুলিশের অসদাচরণের শিকার হন তারা। তাদের সাথে তখন পুলিশের কি বাহাস হয়েছিলো তার বিস্তারিত উল্লেখ ছিলো ওই প্রতিবেদনে। 
ঠিক দশ বছর আগের, ২০০৭ সালের ১১ নভেম্বরে প্রকাশিত হয় ওই সংবাদ। তখন আমি সাপ্তাহিক ২০০০ -এর বরিশাল প্রতিনিধি, একইসঙ্গে স্থানীয় দৈনিক আজকের পরিবর্তন পত্রিকার প্রতিবেদক। দুটো পত্রিকাই তখন প্রগতিশীল চিন্তাচর্চার অন্যতম ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত ছিলো। সময় কত দ্রুতই না বয়ে যায়। ব্যক্তিগত ব্লগে অভিজিৎ দাস নিরুদ্দেশ, না গুম?- শিরোনামে প্রথম লিখেছিলাম ২০১৪ সালের ১৯ নভেম্বর। পরের বছর অক্টোবরে লিখেছিলাম ফেরে নাই অভিজিৎ দাস। নতুন পাঠকদের জন্য প্রথম লেখাটির কিয়দাংশ সংযুক্ত করতে চাই।
অভিজিৎ কি তবে তার প্রিয় অগ্রজ বিষ্ণু বিশ্বাসের মতোই স্বেচ্ছায় আত্মগোপন করলেন? এম্নিতেই বিষ্ণুকে প্রচণ্ড পছন্দ করেন তিনি। তার দুটি কবিতায় সুরও দিয়েছেন। আর বিষ্ণুর মতো তিনিও ডোবেন আজব হ্যালুসিনেশনে। কাছের মানুষেরা তার ভীতিবিহবলতার মুখোমুখি হয়েছে বহুবার। ১৯৬২’র ২৯ মে ঝিনাইদহের বিষয়খালিতে জন্মানো বিষ্ণুও হ্যালুসিনেশনে ভীতচকিত হতেন। তিনি দেখতেন একটা সাদা গাড়ী অথবা ছুরি হাতে কেউ একজন তাকে তাড়া করে ফিরছে।

পাঠকদের জ্ঞাতার্থে আরো জানিয়ে রাখি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স শেষ করে ৮৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে এসেছিলেন বিষ্ণু। কিছুটা বাউন্ডুলে হলেও তার লেখালেখি, আড্ডা - সবই চলছিলো স্বাভাবিক। ছন্দপতন ঘটলো ভারতের বাবরি মসজিদ ভাঙ্গার ঘটনায়। সাম্প্রদায়িক সংকীর্ণতা প্রসূত হিংস্রতা কবিকে বিপর্যস্ত করে মারাত্মকভাবে। করে তোলে আতঙ্কগ্রস্ত। এই আতঙ্ক নিয়েই ১৯৯৩ সালে তিনি উধাও হন। এর প্রায় ১৮ বছর পর পশ্চিমবঙ্গে তার সন্ধান মেলে।
নিখোঁজ হওয়ার কয়েক বছর আগে অভিজিৎ জানিয়েছিলেন, বরিশালের জাগুয়া গ্রামের যে জমিতে তাদের আদি ভিটা ছিলো তা দখল করে সেখানে ক্লিনিক তৈরী করছেন এক প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা। ভেঙে ফেলা হয়েছে তাদের পুরানো বাড়ি-ঘর, পূর্বপুরুষদের সমাধি। কোনো ভাবে এটা ঠেকাতে না পারার কারণে প্রচণ্ড হতাশ ছিলেন কবি। যদিও তার জ্ঞাতিদের কয়েকজন ক্ষতিপূরন বাবদ কিছু নগদার্থও পেয়েছেন।
বয়সে খানিকটা বড় হলেও অভিজিৎ দাসের সাথে আমার অন্তরঙ্গতায় কোনো ঘাটতি নেই সম্ভবত। যে কারণে তার নিপাট নির্লিপ্ত অভিমানের সাথেও আমি পরিচিত। আর এ কারণেই হয়ত ভাবতে বাধ্য হচ্ছি, অভিমানী কবিকে লাপাত্তা হতে বাধ্য করিনি’তো আমরা; মানে পুঁজিবাদী চমকে মোহাবিষ্ট স্বজন, বন্ধু আর সমাজ? বা সেলফিজমের যমানাই গুম করেনি’তো তাকে? এ জাতীয় নানা শঙ্কার মাঝে দাঁড়িয়েও মনে হয়, বইমেলার আগেই ফিরে আসবেন কবি। সাথে থাকবে তার নতুন কাব্যগ্রন্থ। নিগ্রো পরীর হাতে কামরাঙা কেমন সবুজ, ভাঙা আয়নার প্রতিবিম্বগণ, মাটির চামচ মুখে এবং করপল্লবসঙ্গিনী, সারাটা আঁধার বেড়াবো মাতাল কুসুম বনে বনে -এর সঙ্গে যুক্ত হবে আরেকটি নাম। শেষ বইটির পুরো কাজটুকু নিজ হাতে করেছিলেন কবি। করিয়েছিলেন প্রচ্ছদও। তিনি লাপাত্তা হওয়ার পরে বইটি প্রকাশ করা হলেও সেখানে কবির করিয়ে যাওয়া প্রচ্ছদটি ব্যবহার করা হয়নি। এ ঘটনায় মনে পড়ে যায় প্রয়াত কবি রকিবুল হক ইবনকে-ও। মূলত তার সাথে সদ্য কৈশোরোত্তীর্ণ মাদারীপুর সফরে অভিজিৎ যে গানটি বেঁধেছেন তার কথাগুলো; গোঁসাইয়ের কপাল এমন/ফলে সাড়ে তিন মন/দুই মনের বিক্রি শেষে/আধ মন যায় খাজনা দিতে/এক মন যায় পশুপক্ষীর পেটে/ ও ভোলা মন …

অভিজিৎ দাসকে চেনেন না, এমন পাঠকদের জন্য এখানে আরো কিছু তথ্য টুকে রাখা দরকার। আপাদমস্তক এই কবি ২০১১ সালের ১১ নভেম্বর বাবা এবং তার আগে ২০০৭ সালের ১৬ মে মা’কে হারান। অবশ্য তাদের মৃত্যুর অনেক আগেই তিনি ভালোবেসে ফেলেছিলেন কাব্যিক উদাসীনতা। সংসারের দিকে তার খেয়াল ছিলো না কোনো। তবে জ্ঞাতসারে কখনো কারো ক্ষতির কারণ হননি আমাদের এই আত্মভোলা বন্ধু । তাই বিশ্বাস করি, তারও ক্ষতির কারণ হবেন না কেউ। যেখানেই আছেন, ভালো আছেন – সুস্থ আছেন কবি। যদিও অযন্ত-অবহেলায় তার স্বাস্থ্যের অবস্থা খুব বেশী ভালো নেই মনে হয়। তবুও আশা করতে দোষ কি?

রাসেল আহমেদ ও অভিজিৎ দাস।..
নিখোঁজ হওয়ার আগে দীর্ঘ সময় কবি অভিজিৎ-এর কোনো আয় ছিলো না। তার সর্বশেষ কর্মস্থল ছিলো দৈনিক আমাদের সময়। পত্রিকাটির মালিকানা নিয়ে শিল্পপতি নূর আলী ও সাংবাদিক নাইমুল ইসলাম খানের দ্বন্দ্ব চলাকালে ছাঁটাই হওয়া কর্মিদের মধ্যে ছিলেন কবিও। এরপর আর কোথাও কাজ করেননি তিনি। তবে কর্মহীন ছিলেন না কখনো। কবি বা যন্ত্রী বন্ধুদের নিয়ে ব্যস্ত থেকেছেন সারাদিন। আর যেখানেই নিপীরনের খবর পেয়েছেন, ছুটে গিয়েছেন। খোলা গলায় গান ধরেছেন শোষিতদের পক্ষে - ‘দুধ ভাত শুধু তোমাদের আর আমরা কেবলই পাথর চিবুতে বাধ্য’। শোষকদের বিরুদ্ধে গানই তার শ্লোগান। এমন অজস্র গানের স্রষ্টা তিনি। কয়েক বছর ধরে ছবি আঁকার ভুতটাও মাথায় চেপেছে তার । এঁকেছেন এবং হারিয়েছেন অজস্র ছবি।
তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির ডাকা অর্ধদিবস হরতালকে সমর্থন জানাতে গিয়ে ২০১১ সালের জুলাইয়ে অভিজিৎ গ্রেফতারও হয়েছিলেন। বিভিন্ন স্থানে তিনি লাঠিচার্জ ও ধাওয়ার সম্মুখীনও হয়েছেন বহুবার। তবুও রাজপথ ছাড়েননি কখনো। দিনের পর দিন, রাতের পর রাত - পথেই কাটিয়ে দিয়েছেন। 
অভিজিৎ বলেছিলেন, প্রায় দেড় দশক আগে বরিশালের দৈনিক প্রবাসীতে তার সাংবাদিকতার হাতেখড়ি। ওস্তাদ ছিলেন সাংবাদিক শওকত মিল্টন। এছাড়াও যদ্দুর জানি অভি বরিশালের দৈনিক আজকের বার্তা, ঢাকার দৈনিক বাংলাদেশ সময়, আর্ট ম্যাগাজিন শিল্পরূপসহ আরো অগণিত পত্রিকায় কাজ করেছেন। বেসরকারি সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকাপন ইনিস্টিটিউট (আইআরআই) আর বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের সাথেও ছিলেন বেশ দীর্ঘ সময়। ধ্রুবতারা, শূন্য মাতাল, কালনেত্র, কাঠবিড়ালীসহ আরো অসংখ্য লিটল ম্যাগাজিনও বেরিয়েছে তার হাত দিয়ে।


আজকাল মুখবইয়ের নতুন আয়োজন নিত্যই প্রাত্যহিক স্মৃত্মি মনে করিয়ে দেয়। অভিজিৎ দাসের সাথেও যে কত স্মৃতি জড়িয়ে আছে তা তিনি এভাবে না লুকোলে হয়ত খেয়ালই করতাম না। তিনি আজ কোথায় যে আছেন, জানতে ইচ্ছে করছে খুব। তিনি ফিরলে কত স্পৃহা ফিরবে আবার; মাঝে মাঝে তা ভাবতেও ভালো লাগে। যদিও পেরিয়ে গেছে বছর, পেরিয়ে যাচ্ছে মাস; তবু ফিরলেন না অভিমানী অভিজিৎ দাস। হারিয়ে যাওয়ার আগের রাতে আগের রাতে ছোট ভাই বিশ্ব ও বড় বোন চৈতালী দাসের সাথেও বেশ ঝগড়া হয়েছিলো অভিজিৎ-এর। তাই পরদিন সকাল থেকেই অভিমানী ভাইকে খোঁজা শুরু করেন তারা। কিন্তু এক দিন, দুই দিন করে তিন বছর পেরিয়ে গেলেও আর খোঁজ মেলে না জীবনানন্দের শহরে বেড়ে ওঠা এই কবির।

০২ এপ্রিল ২০১৯

ভোটযুদ্ধে গণধর্ষণ, দায় কার?

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদানকারী নারীদের একাংশ। ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮।
দুনিয়ার কোথাও কি এমন কোনো সশস্ত্র যুদ্ধ হয়েছে, যেখানে নারীরা ‘সামরিক’ গণধর্ষণের শিকার হয়নি? সমরাক্রান্ত জনপদে এটাই নারীদের নিয়তি বলে মেনে নিয়েছে দুনিয়া। আর ‘ভোটযুদ্ধে’ এই পুরুষতান্ত্রিক বর্বরতার বেসামরিক প্রয়োগ মেনে নিয়েছে বাংলাদেশ। যাকে নির্বাচনী বা রাজনৈতিক গণধর্ষণ বলা যেতে পারে। 
এর জন্য বিদ্যমান রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে দায়ী করা হলে তা কিভাবে এড়াবে দলগুলো? আবার কেউ যদি নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সামর্থ্য নিয়ে তোলে, তারাই বা কি বলবে?
গত ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরকার বিরোধীদের ভোট দেওয়ার দায়ে স্বামী-সন্তানকে বেঁধে রেখে চল্লিশোর্ধ গৃহবধুকে গণধর্ষণের ঘটনার পর আলাপ হচ্ছিল বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের (বিএনপিএস) এই নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবিরের সাথে।
“সব রাজনৈতিক দলগুলোকে নারী নির্যাতনকারীদের বয়কট করতে হবে,” উল্লেখ করে নারী অধিকার আন্দোলনের এই নেত্রী ও মুক্তিযোদ্ধা বলেন, “দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকায় বর্তমানে আওয়ামী লীগে এ জাতীয় অনেক আবর্জনা যুক্ত হয়েছে।” 
ওই ঘটনার হোতা দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলা নোয়াখালীর সুবর্ণচরের উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক রুহুল আমিনকে তাৎক্ষণিকভাবে বহিস্কার করে তাঁর দল। চরজুবলী ইউনিয়নের মধ্য বাগ্যা গ্রামের ধর্ষিতা ছিলেন চার সন্তানের জননী। ঠিক তিন মাস পর ইউনিয়নে উত্তর বাগ্যা গ্রামে একই ঘটনার পুনুরাবৃত্তি। 
নির্বাচনী দ্বন্দ্বের জেরে সেই রুহুলের কলা বাগানে নিয়ে গণধর্ষণ করা হয় পয়ত্রিশোর্ধ্ব এক গৃহবধুকে, যে ছয় সন্তানের জননী। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদের এক প্রার্থীকে ভোট না দেওয়ায় জেরে রোববার (৩১ মার্চ) রাতে এ ঘটনা ঘটেছে দাবি করে নির্যাতিতা নারী ও তাঁর স্বামী জানান, বাড়ি ফেরার পথে গতিরোধ করে প্রথমে স্বামীকে মারধর করে বেঁধে ফেলে ধর্ষকরা। 
ওই দিনের নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থীই ছিলেন আওয়ামী লীগের নেতা। অথচ ২০০১ সালের নির্বাচনের পর ভোলায় গণধর্ষণের শিকার হওয়া পূর্ণিমা শীলকে নিজের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন এই দলেরই সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম।
প্রসঙ্গত, “বাংলাদেশে সংঘবদ্ধ, দলগত বা গণধর্ষণের ৩০ শতাংশই ঘটে প্রতিহিংসাবশত,” ২০১৩ সালের এক গবেষণার বরাত দিয়ে এমনটাই বলছে উইকিপিডিয়া বলছে। 
ইতিমধ্যে এ ঘটনায় চরজব্বর থানায় মামলা হয়েছে দুই জনকে গ্রেপ্তারও করেছে পুলিশ। এর আগের ঘটনায়ও গণধর্ষণের নির্দেশদাতা আওয়ামী লীগ নেতা রুহুল আমিনসহ পাঁচ অভিযুক্তকে নতুন সংসদ সদস্যরা শপথ নেওয়ার আগেই গ্রেপ্তার করেছিল তারা। তখন ‘পুলিশের এই জোড় তৎপরতা প্রসংশনীয়’ উল্লেখ করে রোকেয়া কবির বলেছিলেন, “সরকারি দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে এখন এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে, যাতে আগামীতে তাদের নাম করে কেউ নারী নির্যাতন করার সাহস না পায়।” 
তাঁর অভিমত, “শুধু আগামীদের গ্রেপ্তারের করলেই হবে না, আক্রান্ত পরিবারটি যাতে সুরক্ষা পায় এবং তাদের যাতে পুনরায় আক্রান্ত হতে না হয়, সেদিকেও পুলিশকে খেয়াল রাখতে হবে।” তাছাড়া “আক্রান্ত পরিবারকে ‘ভ্রকুটি মুক্ত’ রাখতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরও সক্রিয় থাকতে হবে,” বলেও উল্লেখ করেন বিএনপিএস নির্বাহী পরিচালক। 
সুবর্ণচরের প্রথম গণধর্ষণের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলাটি সম্প্রতি নারী ও শিশু নির্যাতনর দমন ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়েছে। গত মাসের তৃতীয় সপ্তাহে এই মামলার প্রধান আসামি রুহুলকে দেওয়া জামিন বাতিল করে হাইকোর্ট। এরই মধ্যে গত পহেলা ফেব্রুয়ারি উপজেলার পূর্ব চরবাটা ইউনিয়নে ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটে। 

চাইল্ড রাইটস অ্যাডভোকেসি কোয়ালিশন ইন বাংলাদেশ জানিয়েছে, গত বছর ৯৪ শিশু গণধর্ষণের শিকার হয়েছে। এছাড়া আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসাব অনুযায়ী, সারাদেশে ধর্ষণ ও গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৭৩২ জন নারী।