৩১ আগস্ট ২০১৪

আরেকটি অসমাপ্ত পাণ্ডুলিপি

তালা - The Lock
© eon's photography
আমার আমাকে খুঁজে খুঁজে
বহুকাল আপনার মাঝে
ছুটে ছুটে জেনেছি আমিও
এমনই এক ধারনা যা
মহাবিশ্বের মতো
- ক্রমে বিবর্তিত

***
সুযোগসন্ধানী কে যে
ঘোলা জলে খেলে চলে
ছায়া তার কোথা পরে
রয় না তা’ও খেয়ালে,
নাচে গাধা আলাভোলা
তলে তলে কোন দলে
ভেড়ে খানকির পোলা
তা’ও জেনে যাবে সবে
তবুও ভয় পেওনা ।।

***
পুনরায় কবে হবে যে সহায়
কতটুকু আর করে অসহায়
তা’ই হয়ত দেখার অপেক্ষায়
জলেরই মত স্বচ্ছ ভুলগুলো
হয় না হায় কখনো পথভুলো
বার বার আসে
সেই টানে ফিরে
চেনাতে আবারো
অচেনা নিজেরে
জাগে কূট চালবাজ নর কীট
মাপে আইটেম সঙের যে বিট
নিয়মিত মারে হাত-
তাল কেটে হলে কাত
ভাবে সে কি একা একা
কবে যে হয়েছে ভুলে
ভুল রাজ্যে শান্তি শেখা
তা আন্দাজই করতে পারে নাই
বালিকাও আর দেয় নাই দেখা

***
স্বভাবের দোষে দুষ্ট
বাতেনী মননে পুষ্ট
বহুগামীতার বীজ;
ক্ষমাপ্রাপ্ত বোধ নষ্ট
হয়ে যে সে লক্ষ্যভ্রষ্ট
তা বুঝেও না বুঝিস!

না বুঝলেও জানিস-
এ অন্য কিছুই নয়
স্রেফ অপব্যবহার,
নিশ্চিন্ত ভালোবাসার।
মন থেকে বলি তাই
ক্ষমা করিস না আর।

সাবধানে সাধু সেজে
সকালেও সে ভেবেছে
অতি পিরিতের চাপে-
কেন কাঁপবে এভাবে;
কদাকার ইচ্ছেগুলো
বার বার পথভুলো
করে যদি করুক না।

তাই বলছি আবার
ক্ষমা করিস না আর।

***
নিপাট নির্লিপ্ত কালে
একঘেয়ে বেখেয়ালে
চেয়ে চেয়ে দেখেছিলে-
যা কিছু ছিলো অর্জিত
কাঙ্খিতরা ক্রমাগত
তারে দূরে ঠেলে দিলে
দূরে দূরেই পালায়
সব কথিত বান্ধব
আর বেহিসাবী বোধ
গ্রাস করে বিচ্ছিন্নতা
কে জানি জেনে নিয়ে তা
খুঁজে বুঝে নেয় প্রিয়
প্রেয়সীর পরোয়ানা
এবঙ নিজের মত
হেলায় বাড়ায় ক্ষত
জানে সাবধানী সে'ই
কেউ অপেক্ষায় নেই
পাওনাদারের মত
***
দৃশ্যত বুনো ধৃষ্টতা বাড়ে
চেনা পাতায় যার আঁচড়ে
বসন্ত দিন হয় মলিন
আর সমকালীন সঙ্কট
দৈন্যতার ভজঘট মেপে
ডুবিয়ে দেয় স্বপ্নের খেয়া
যার জীর্ণ অপেক্ষায় মায়া
ছিড়ে যাওয়া গ্রন্থির ঋণ
ভুলে সাজে খুব দৈনন্দিন
কারণ সে’ও যে বর্ণচোরা

coloured / © eon's photography

***
দিনের শেষে
লোকাল বাসে
ফিরছি মাঠে
ছবির হাটে
পাশের সিটে
যে মতলবী
খুব ঈমানী
জোশের বশে
মারলো কষে
বয়ান বোমা
আমলা মনে
জাওয়ানিকা
তুফান তোলা
আলাপ জমে
জমজমাট
ধর্মের ঘাঁট
পিচ্ছিলকারী
অজ্ঞানতার
সারমর্মে সে
মাওলানাই
চেঁচিয়ে বলে
এ শয়তানী
বড়ই ফানি
জেনেছে তারা
নষ্টের গোঁঢ়া
শাহাবাগই

***
বিজয় বিজয়া
খুনেরো হিন্দোলে
নাচিছে মাতিয়া
তাল ও বেতালে
হেলিয়া দুলিয়া
গোলাপের কোলে
নিজেরে ভুলিয়া
দেখিয়া তা ভুলে
অবাক না হয়া
মায়াময় বোলে
যাই যে বলিয়া
হে প্রিয় মহান
খেয়াল করিয়া
সেয়ানী চোদান

***
তাবৎ অসহায়ত্ব আর রাগ-ক্ষোভগুলো টের পেয়ে যাও হয়ত-
জেনে যাও সেই সব গোপনালাপও যা জানার ছিলো না কারো;
ফি জন্মে তাই খুন হও তুমি - জ্ঞানেরও অজ্ঞাতে লুকানো তন্ত্রে
আত্ম-সংবরণের সুযোগও পায় না খুনী মন, অতঃপর আবারো
উদ্যোগী হয় তোমায় সংগ্রহে - পুনরায় বুঝে নিতে খুনের স্বাদ।

[গ্রীষ্মের ক্রোধে খুন হওয়া সেলফোন সেট দুটিকে উৎসর্গকৃত]
***
ভাই, বন্ধু - দুটোই
ভেবেছিনু তোমারে
আহারে কি যতনে
ভাঙিয়া সে ভাবনারে
দূরেই ঠেলিয়া মনে প্রানে;
না জানি পাইলা কি সুখ
তোমার এ ভাঙার অসুখ
ভালো হউক - তা'ই চাই
কারন ওই যে,
ভেবেছিলেম - বন্ধু ও ভাই।

যদিও তুমি -
ছলেরই কারবারী
তবুও'তো সেজেছিলে
কত না উপকারী;
শুভকামণাও তাই
থাকিবে সব সময়
যদিও - আমাদের
পথ ও কৌশল, এক নয়।।

cordial / © eon's photography
***
কে সরাব হাতে
এ শবে-ব-রাতে
আয়াতের সুরে
ডাকে ইবাদাতে
কেবলায় জুড়ে
খুব ফুরফুরে
গ্রীষ্মের হাওয়া
কারে হেদায়াতে
কার তা চাওয়া
যায় না পাওয়া
সূরার শরীরে-
পারে কে জানাতে
এ ভেদ ভাঙাতে
ঠিক কোন পীরে
খুঁজে তারে ভীড়ে
পোষাবে কি তাতে
রোজ আখিরাতে
____________

শবে-ব-রাত
১৩ জুন ২০১৪
***
গুজরাট থেক্যা বাঙলায়
মৌলবাদ নয়া আয় নায়।

তর মনে নাই হেই কালে
ঝুলাইয়া অ-ধর্মের মূলা
আহা কি স্বর্গীয় ফরমুলা
ভারত ভাইঙ্গা নিরিবিলি
বাড়াইছিলো ক্যাগো সম্মান-

চেনাইছিলো হ্যাগোরেই গদি
যেয়ার লোভে, ভাবৌরসে
পয়দা লইছে শফী-মোদী।

আইজ আর কি কমু মামা
তাগো গায়ে ভরসার জামা
পরাই রাখছে জনগণ;
যাগোর বিভেদাক্রান্ত মন
বোঝে নাই ভাঙ্গার অসুখ
বা এক থাহনের মাজেজা-

হেয়া ক্যা, কারে জিগায় কেডা?
***
যদি এক রাতে
দেখ অপঘাতে
মরে পড়ে আছি
খুব কাছাকাছি
পরিচিত কায়া
দেখে বড় ঠেকে
দেখিও না মায়া
ছায়ারও আগে
সরে যেও তুমি
জেনে নিও আমি
বলেছি নিশ্চিত-
যে আমার খুনী
সে মূলত ছিলো
আত্মহত্যাকারী
গণিতের বীজ
নিয়ে ঘোরা কোনো
সন্দেহপ্রবণ
আগোছালো গল্প
নিছকই অল্প
ছকে যা লিখেছে
দিল্লী-পেন্টাগন
আর নির্যাতন
সইতে না পেরে
বোঝে যে অবুঝ
বাকিঙহাম বা
লাওহে মাফুজ
ক্ষমা করে সব
হত্যাকারীকেও
হতে পারে সে’ও
যে বেওয়ারিশ
তা’ও জেনে নিও

শিরোনামঃ
গাধার গয়না
রচনাকালঃ নিকট অতীত

প্রস্থান - The Departure
© eon's photography

৩০ আগস্ট ২০১৪

বেজন্মার গান

শুরুতেই সুরসহ মাথায় এসেছে - এমন লেখার সংখ্যা আমার খুব বেশী নয়। আর যা লিখেছি - তা প্রকাশেও লেগেছে ভয়, সব সময়।  তবু 'নিজের ঢোল নিজে পেটাও' নীতির সূত্রানুসারে বলতে হয় - গীতিকার ও সুরকার 'ঈয়ন' এক্কেবারে ভুয়াও নয়। রাসেল আহমেদের খণ্ড নাটক ‘ফ্লাই-ওভার’ এর ‘থিম সঙ’ হিসাবে ছ’লাইনের এ গানটি ব্যবহৃত হয়েছিলো ২০১০ সালে। তার প্রায় দেড় বছর আগে তৈরী ‘বেজন্মা বোধ বা জন্মানোর ক্রোধ’ - শিরোনামের পুরো লেখাটিও তুলে দিলাম নীচে। হয়ত কারো ভালো লাগবে, কারো লাগবে না। সবার জন্যই রইলো শুভেচ্ছা।

ক্ষীণ মৌনতার স্থবিরতায় অস্থির
জৈবিকতার অদৃষ্ট অতৃপ্তি আর
প্রজাপতির অপেক্ষায় গোলাপেরা
মেঘগন্ধা অবষাদে স্থবির।

আজন্ম; এক বেজন্মা বোধ
তাড়া করে ফিরছে
বিতৃষ্ণা মিলছে
ক্রমাগত বাড়ছে, জন্মানোর ক্রোধ।

সুপ্রীম কোর্টের খোদারাও
দল বেঁধে বিব্রত হয় দেখে
বেকারত্বের ফ্রেমে বন্দী প্রেমে
সব কটাক্ষ মেনে নেই আমরাও।

তবু...

আজন্ম; এক বেজন্মা বোধ
তাড়া করে ফিরছে
বিতৃষ্ণা মিলছে
ক্রমাগত বাড়ছে, জন্মানোর ক্রোধ।

২৫ আগস্ট ২০১৪

নগ্নতার ফেসবুক সমাচার!

পাপ [pap]’র ফেসবুক পাতায় প্রকাশিত সংকলন ‘আলোকচিত্রে মুক্তিযুদ্ধ’১৯৭১ থেকে মুছে ফেলতে হয়েছে এ ছবিটি।
নগ্নতার ‘কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড’ অমান্যের অভিযোগ তুলে এমন সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিয়েছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ।
ফেসবুক কর্তাদের তৈরী সয়ংক্রিয় প্রক্রিয়ায় পাওয়া বার্তা এটি।
এর আগে পৃথক দু’টি ব্লগে এমন ঘটনার শিকার হয়েছিলাম। নগ্নতাসহ বিভিন্ন অভিযোগে আমার ছবি ও লেখা গায়েব করে দেয়া হয়েছিলো। আমাদের চিন্তার দারিদ্রতা বা দর্শনের দৈন্যতার কথা ভেবে তা মেনেও নিয়েছিলাম। কিন্তু আজ উদারমনা ফেসবুক কর্তৃপক্ষের এমন আচরণে আমি যারপরনাই বিষ্মিত।  অবশ্য এক্ষেত্রেও অভিযোগ গিয়েছে নিশ্চিত। 
আজকের এ ঘটনা থেকে আর কিছু না হোক, এটুকু অন্তত বুঝলাম যে - মীর জাফরের বীজ মরে নাই। কি এক ঈমানী জোশে আজও অজস্র চোখ সক্রিয় আছে পাকি নৃসংশতা ঢাকতে।
মুক্তিযুদ্ধের নৃশংসতার ছবি নগ্নতার অভিযোগে মুছতে বাধ্য করা হলো। অথচ এই ফেসবুকে জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছে তালিকায় রয়েছে - Pornstar pics, Pornstar xxx Pics and Movies, বিডি সেক্স,রিয়েল সেক্স,ফোন সেক্স,ওয়েব সেক্স;  Sexy porn, Sexy PornStars, Sexy College Girls and Auntiies, Bangla Choti Golp,.বাংলা চটি গল্প phone sex.magi para'র  মত অজস্র পাতা। একি ফেসবুক’র নৈতিক দুর্বলতার উদাহরন নয়।

জনপ্রিয় এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটির সদর দপ্তরে বাংলাদেশী কেউ আছেন কি’না তা জানা নেই। থাকলে তিনি এ বিষয়টি নজরে আনবেন আশাকরি। কারণ, নগ্নতা কখন নৃশংসতা - তা ফেসবুক বিধাতার জানা উচিত।

পূর্বের পোস্ট

২৪ আগস্ট ২০১৪

আলোকচিত্রে মুক্তিযুদ্ধ’১৯৭১

এক গর্ভবতী মা, ৭১’র শরণার্থী শিবিরে
আরেক শরনার্থী মা ও তার সন্তানেরা
মুক্তিযুদ্ধের লিখিত বা বণির্ত ইতিহাস নিয়ে হাজারো মতভেদ, যুক্তি-তর্ক রয়েছে। বিভিন্ন শ্রেণীর পাঠ্য-পুস্তকে অবধি এক এক সরকারের আমলে এক এক রকম ইতিহাস থাকে। ওক্ষেত্রে তাই চূড়ান্ত সত্য বলে কিছু নেই বলেই ভাবি আমরা, মানে দেশের ৭১ পরবর্তী প্রজন্ম। ভাগ্যিস ততদিনে ক্যামেরা আবিস্কৃত হয়েছিলো। আর এই উন্নত প্রযুক্তির যুগে ছবি বিকৃত করে পাড় পাওয়াও বেশ কঠিন। এই এক ভরসার জায়গা। কারণ চিত্র যে কত শক্তিশালী ভাষা তা কে না জানে। সত্যের সরূপ না খুঁজি, ৭১’কে বুঝতেও অন্তত সে সময়ের চিত্রপট’তো চেনা উচিত। এই তাগিদ থেকেই শুরু হয়েছিলো মুক্তিযুদ্ধের চিত্র সংগ্রহ ও সংরক্ষণ। এর আগে আমার ব্যক্তিগত ফেসবুক একাউন্ট থেকেও একটি সংকলন প্রকাশ করে ছিলাম। পাপ [pap] তৈরীর পর এর পেইজেও অমন একটি সংকলন তৈরীর পরিকল্পনা ছিলো; যাতে পাঠকরা সহজে এই ছবিগুলো খুঁজে পায়। সংকলনটি দিন দিন সমৃদ্ধ হয়ে উঠবে, এই প্রত্যাশা নিয়ে সকলের সহযোগীতা কামণা করছি।

- ঈয়ন
২৪ আগস্ট ২০১৪
ঢাকা, বাংলাদেশ।

নিরাপত্তার খোঁজে বাঙাল শরনার্থীরা
পোস্টে ব্যবহৃত সবগুলো ছবি বিখ্যাত আলোকচিত্রী রঘু রায়ের তোলা।
পুরো সংকলনটি দেখতে ক্লিক করুন - আলোকচিত্রে মুক্তিযুদ্ধ’১৯৭১

২১ আগস্ট ২০১৪

‘সাংবাদিক মারলে কিচ্ছু হয় না’

- শিরোনামের ওই সংলাপটি নানা ভাবে কত বার যে শুনতে হয়েছে জীবনে । মহল্লার ছিঁচকে সন্ত্রাসী থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দলের জাতীয় নেতা, পুলিশ বা গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য, এমনকি সুহৃদ বন্ধুদের মুখেও। কেউ বলেছেন হুমকী দিয়ে, আবার কেউ শঙ্কা জানিয়ে। বৈশ্বিক পরিসংখ্যানও বরাবরই সমর্থন করেছে তাদের। এই যেমন গত বছরও (২০১৩ সালে) বিশ্বজুড়ে দায়িত্ব পালনকালে ১০৮ জনেরও বেশী সাংবাদিক বা গণমাধ্যমকর্মী হত্যার শিকার হয়েছেন। আর বিশ্বের যেসব দেশে এ জাতীয় হত্যাকাণ্ডের কোনো বিচার হয় না, তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। ছোট্ট এ দেশে গত দেড় যুগে কমপক্ষে ৪০ জন সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন।  সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনির বহুলালোচিত হত্যাকাণ্ডের মতো অধিকাংশ হতাকাণ্ডের ক্ষেত্রেই বিচার’তো দূরের আলাপ, রহস্যই উদঘাটিত হয়নি।

পুলক চ্যাটার্জী।
ছবিটি তুলেছেন আরিফুর রহমান।
দ্বিধা-বিভক্তি বা স্বার্থান্বেষণ আমাদের, মানে সাংবাদিকদের প্রতিবাদকেও বার বারই করেছে ম্রিয়মাণ। নিজেদের পায়েই কুড়াল মেরেছি আমরা। ভীরুতা আর অনৈতিকতাকে প্রশ্রয় দিয়ে নিজেদেরই করেছি নিরাপত্তাহীন। এরই জেরে এবার বরিশাল নগরীর উত্তর মল্লিক রোডে নিজের বাসার ফটকে হত্যা চেষ্টার শিকার হয়েছেন পুলক চ্যাটার্জী। বরিশাল প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক পুলকের মাথা ও শরীরের বিভিন্ন অংশে গত রাতে সাত/আটটি কোপ দেয়া হয়েছে। বর্তমানে তিনি বরিশাল শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় হাসপাতালের পোস্ট অপারেটিভে নিবির পরিচর্যায় আছেন; মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন। ব্যক্তিগতভাবে আমি এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানাই। আর সংশ্লিষ্ট - আপাত অজ্ঞাত সন্ত্রাসীদের এটুকু বলতে চাই - সমগ্র বাঙলা আর বাকলা, মানে বরিশাল; এক না। ওই পূণ্যভূমির মানুষেরা সামগ্রিকতার স্বার্থে, ক্ষুদ্র ব্যক্তিস্বার্থ বিসর্জন দিতে জানে। অতএব তোদের বিচার হবেই হবে।



১৯ আগস্ট ২০১৪
মনসুরাবাদ, ঢাকা।

***
পুলক চ্যাটার্জী শঙ্কামুক্ত জেনে কিছুটা হালকা লাগছে। তবে এখনো এ হত্যা চেষ্টার কোনো ক্লু – বের হয়নি। ঘটনার পর এক সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার ছাড়া আর কিছুই করতে পারেনি পুলিশ। অথচ এ ঘটনা চাউড় হওয়ার পর শুধু বরিশাল নয়, সারা দেশেই নিন্দার ঝড় উঠেছে। ঘটনার প্রতিবাদে রাজপথেও নেমেছেন সাংবাদিকরা। গতকাল সন্ধ্যায় এক ঝটিকা মিছিল শেষে আগামীকাল বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে বরিশাল প্রেসক্লাব। বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটি, বিএম কলেজ জার্নালিস্ট এসোসিয়েসনসহ সাংবাদিকদের অন্যান্য সংগঠনগুলোও সোচ্চার হয়েছে এই ঘটনার বিরুদ্ধে। ওদিকে জ্ঞান ফেরার পর নিজে বাদী হয়ে অজ্ঞাত তিন হামলাকারীর বিরুদ্ধে মামলা করেছেন পুলক। এখন দেখা যাক এক্ষেত্রে কত দূর কি হয়। কারণ, সারাদেশের মতো বরিশালেও সাংবাদিক নিস্পেষণ’তো কোনো নতুন ঘটনা নয়।
২০ আগস্ট ২০১৪
মনসুরাবাদ, ঢাকা।
***
নিহত সাগর ও রুনির মৃতদেহ
পুলক চ্যাটার্জীকে নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমের অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত সংবাদ পড়তে পড়তেই নিকট অতীত নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করতে ইচ্ছে হলো। কেউই নিশ্চয়ই ভোলেননি - ২০১১ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি খুন হয়েছিলেন সাংবাদিক দম্পতি মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সারওয়ার ও তার স্ত্রী এটিএন বাংলার সিনিয়র রিপোর্টার মেহেরুন রুনি। একই বছরের ২৮ জানুয়ারি রাজধানীতে সাংবাদিক দম্পতি প্রবীণ সাংবাদিক ফরহাদ খান ও তার স্ত্রী রহিমা খানম, ৭ এপ্রিল দৈনিক আজকের প্রত্যাশা’র সাংবাদিক মাহবুব টুটুল, একই দিন সাপ্তাহিক বজ্রকণ্ঠ’র সাংবাদিক আলতাফ হোসেন এবং ৭ ডিসেম্বর দৈনিক ভোরের ডাক’র গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা প্রতিনিধি ফরিদুল ইসলাম রাঞ্জু হত্যার শিকার হন। এর আগে ২০১০ সালের ২৮ এপ্রিল খুন হন সাপ্তাহিক ২০০০’র সিলেট প্রতিনিধি ফতেহ ওসমানী, ৯ জুন এটিএন বাংলা’র সিনিয়র ক্যামেরাম্যান শফিকুল ইসলাম টুটুল এবং ২৩ ডিসেম্বর মুলাদী উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি মনির হোসেন রাঢ়ী।

২০০৯ সালে খুন হন চার জন, ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় এনটিভি’র ভিডিও এডিটর আতিকুল ইসলাম আতিক, জুলাইয়ে পাক্ষিক মুক্তমন’র স্টাফ রিপোর্টার নুরুল ইসলাম ওরফে রানা, আগস্টে গাজীপুরে সাম্প্রতিক সময়’র নির্বাহী সম্পাদক এমএম আহসান হাবিব বারী এবং ডিসেম্বরে রূপগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সহ-সভাপতি আবুল হাসান আসিফ। এর আগে ২০০৫ সালে খুন হন - ১১ ফেব্রুয়ারি দৈনিক সংগ্রাম’র সাংবাদিক শেখ বেলাল উদ্দিন, ২৯ মে দৈনিক কুমিল্লা মুক্তকণ্ঠ’র সম্পাদক মুহাম্মদ গোলাম মাহফুজ এবং ১৭ নভেম্বর দৈনিক সমকাল’র ফরিদপুর ব্যুরো প্রতিনিধি গৌতম দাস।

আরো একটু অতীতে গেলে আমরা দেখতে পাই - ২০০০ সালের ১৫ জানুয়ারি ঝিনাইদহ জেলার বীরদর্পণ’র সাংবাদিক মীর ইলিয়াস হোসেন দিলীপ এবং ১৬ জুলাই দৈনিক জনকণ্ঠ’র যশোর প্রতিনিধি শামছুর রহমান কেবলকে হত্যা করা হয়। এর আগে ২০০১ সালে খুন হয়েছিলেন পাঁচ সাংবাদিক। ১৫ ফেব্রুয়ারি দৈনিক সংবাদ’র খুলনা ব্যুরো প্রধান, নিউএজ ও বিবিসি’র সাংবাদিক এবং খুলনা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মানিক সাহা, ২ মার্চ দি নিউএজ’র সাংবাদিক আবদুল লতিফ পাপ্পু, ২১ এপ্রিল খুলনার ‘দৈনিক অনির্বাণপত্রিকার সাংবাদিক এসএম নহর আলী, ২৭ জুন খুলনার দৈনিক জন্মভূমি পত্রিকার সম্পাদক হুমায়ুন কবির বালু, ২ অক্টোবর বগুড়ার দৈনিক দুর্জয় বাংলা’র নির্বাহী সম্পাদক এবং বিএফইউজের তৎকালীন সহ-সভাপতি দীপঙ্কর চক্রবর্তী। ২০০২ সালে ২ মার্চ খুন হন খুলনার দৈনিক পূর্বাঞ্চল’র স্টাফ রিপোর্টার হারুনার রশীদ খোকন এবং ৫ জুলাই ডুমুরিয়ার সাংবাদিক সরদার শুকুর হোসেন।

লাশটি বোমা হামলায় নিহত সাংবাদিক মানিক সাহার।
১৯৯৮ সালে ১৬ জুলাই খুন হন  কালীগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রেজা এবং ৩০ আগস্ট দৈনিক রানার’র সম্পাদক সাইফুল আলম মুকুল। ১৯৯৬ সালে ১২ জুন চুয়াডাঙ্গার দিনবদলের কাগজ’র সাংবাদিক বজলুর রহমান, ১৯ জুন সীতারার দৈনিক পত্রদূত’র সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা স. ম. আলাউদ্দিন এবং একই সালে নীলফামারীর নীলসাগর পত্রিকার সাংবাদিক কামরুজ্জামানকে হত্যা করা হয়।

১৯৯৫ সালে খুন হন যশোর জেলার দৈনিক রানার পত্রিকার সাংবাদিক ফারুক হোসেন। এর আগে ১৯৯৪ সালে, যশোর জেলার দৈনিক স্ফুলিঙ্গ পত্রিকার সাংবাদিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী ও মানিকছড়ির সাংবাদিক কামাল হোসেনকে হত্যার করা হয়। এছাড়াও ২০০০ সাল থেকে বিভিন্ন সময়ে খুন হওয়া সাংবাদিকের তালিকায় আরো আছেন - দৈনিক জনবাণী’র রিপোর্টার বেলাল হোসেন, যশোরের দৈনিক রানার’র গোলাম মাজেদ, রাঙ্গামাটির এনটিভির প্রতিনিধি জামাল উদ্দিন, নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় দৈনিক যুগান্তর’র সাংবাদিক আহসান আলী, মৌলভীবাজারের ফারুক আহমেদ।

এসব হত্যাকাণ্ডের মামলাগুলোর প্রায় সবগুলোই হিমাগারে আছে। কারণ, এ কথা অপ্রিয় হলেও সত্যি যে দেশের সমাজবিরোধী অশুভ শক্তির পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, এমনকি সরকারেরও শত্রু হিসেবে বিবেচিত হয় সাংবাদিকরা। তাই অন্যান্য ক্ষেত্রে খুনের ঘটনাগুলো দ্রুত তদন্ত করে বিচারের উদ্যোগ নিতে দেখা গেলেও সাংবাদিক হত্যার ব্যাপারে নির্লিপ্তই থেকেছে সব সরকার। গত দেড় দশকের এতগুলো সাংবাদিক হত্যার বিচার না হওয়া কি রাষ্ট্রের অমার্জনীয় ব্যর্থতা নয়? কোন সরকার এ ব্যর্থতার দায় এড়াতে পারবে?

২১ আগস্ট ২০১৪
মনসুরাবাদ, ঢাকা।